প্রগতিশীল ও সামাজিক সংগঠন নিয়ে জোট করতে পারে ছাত্রলীগ

কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ
কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ  © টিডিসি ফটো

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্তমান সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ছিলেন। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ছাত্রলীগের প্রস্তুতি, ছাত্ররাজনীতির গতিপ্রকৃতি, বিরোধী মত ও দলের সঙ্গে সহাবস্থান—এসব বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক রিফাত হায়দার—

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের জন্য ছাত্রলীগের প্রস্তুতি কেমন?

সাদ্দাম হোসেন: স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য গোটা বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম ঐক্যবদ্ধ অনুভব করছে। দলমত ও রাজনৈতিক বিশ্বাস নির্বিশেষে শিক্ষার্থীদের যে স্বপ্ন রয়েছে, দেশ নিয়ে যে প্রত্যাশা রয়েছে সকল কিছুই স্মার্ট বাংলাদেশের মধ্যেই তারা সেটা খুঁজে পায়। বিশেষ করে শেখ হাসিনা তরুণদের কাছে, শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রচণ্ডরকম জনপ্রিয়। তারা মনে করে রাজনৈতিকভাবে এক ঐতিহাসিক বিজয় উপহার দেওয়ার জন্য তরুণ প্রজন্ম প্রস্তুত রয়েছে। এটিকে তারা তাদের দায়িত্ব মনে করছে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাংগঠনিক বিশেষ কোন কর্মসূচি কিংবা প্রচারণা করা হবে কিনা?

সাদ্দাম হোসেন: বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আমরা আগামী দিনে একটা ক্যাম্পেইন পরিচালনা করবে। ক্যাম্পেইনে আমরা শিক্ষার্থীদের মাঝে পৌঁছাতে চাই, তরুণদের কাছে যেতে চাই। যারা একেবারে সাধারণ শিক্ষার্থী যারা একেবারে রাজনীতি পছন্দ করে না, তাদের মাঝে ও আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের বার্তাটি নিয়ে যেতে চাই। একইভাবে দেশের প্রতি দায়িত্বের বার্তাটি নিয়ে যেতে চাই, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। আমাদের গণতান্ত্রিক যাত্রা যেন অব্যাহত থাকে। স্মার্ট বাংলাদেশে নির্বাচিত নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে নির্বাচন করতে দিতে হবে। এটিকে কেন্দ্র করে যারা আমাদের সাংবিধানিক যাত্রাকে ব্যাহত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার থাকব। 

ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে আমরা বাংলাদেশের বিভাগীয় পর্যায়, জেলা পর্যায় ছাত্রসমাবেশ করবো। ওপেন ডায়ালগ এর আয়োজন করবো। ডকুমেন্টেশন এবং অনলাইন ক্যাম্পেইনের ওপর জোর দিচ্ছি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা আলাপন করবো। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইশতেহারে তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থী ভাবনা, শিক্ষাব্যবস্থা, প্রযুক্তি, কর্মসংস্থান এ বিষয়গুলো যেন সম্পৃক্ত হয় সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নির্বাচন কেন্দ্রীক বিভিন্ন ছাত্রজোটের আত্মপ্রকাশ হচ্ছে, ছাত্রলীগ একে কিভাবে দেখছে?  

সাদ্দাম হোসেন: এসব জোটের মূল রাজনৈতিক লক্ষ্য হলো একজন দুর্নীতিবাজকে পুনর্বাসন করা। সমগ্র শিক্ষার্থীদের অধিকার, ছাত্রদের ভবিষ্যৎ, শিক্ষার অবস্থা, স্মার্ট জেনারেশনের স্মার্ট বাংলাদেশ নিয়ে ভাবনা এটির কোনোটির সাথে তাদের সম্পৃক্ততা নেই। যে কারণে শিক্ষার্থী বিচ্ছিন্ন একটা প্লাটফর্ম, এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজের যে একতা রয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের দর্শনের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজের যে একতা রয়েছে, স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে ছাত্রসমাজের যে একতাবদ্ধ অবস্থান রয়েছে তারা এই জোটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।
 
আর যারা নির্বাচন করবে যদি নির্বাচন কেন্দ্রীক যদি জোট হয় সেটাকে আমরা স্বাগত জানাই। কারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলগুলো তাদের রাজনৈতিক ম্যান্ডেট, তাদের কর্মসূচি তাদের রিপোর্ট কার্ড ছাত্রদের কাছে নিয়ে যাবে। নির্বাচন কেন্দ্রীক যেকোনো জোটকে আমরা স্বাগত জানাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধী, জঙ্গিবাদের কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ততা  ছাড়া যেকোনো নির্বাচনী জোটকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা মনে করি যে আমরা যেন একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, গণতান্ত্রিক পরিবেশ, গণতান্ত্রিক উৎসব এর মধ্য দিয়ে আমাদের ছেলে মেয়েরা তরুণ-তরুণীরা ভোটের উৎসবে গণতান্ত্রিক উৎসবে সামিল হতে পারে। সেটির জন্য আমরা কাজ করবো। সবাই যেন ভোট প্রদান করে নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়ে যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকে। সে জিনিস করার জন্য আমরা কাজ করবো। এক ধরনের স্মার্ট  পলিটিক্যাল অ্যাক্টিবিজম ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে থাকে সেটি নিশ্চিত করার জন্য আমরা কাজ করবো। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ছাত্রদলের নেতৃত্বে ছাত্র ঐক্য, বামদের উদ্যোগে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট, এরপর ইসলামী ছাত্রসংগঠনগুলো জোট করার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। ছাত্রলীগের উদ্যোগে কোন জোট করার পরিকল্পনা আছে?

সাদ্দাম হোসেন: আমরা সুস্পষ্টভাবে বলছি স্মার্ট বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে ছাত্রসমাজের মধ্যে কিন্তু অভিন্ন একতা গড়ে উঠেছে। মানে একজন কোন রাজনৈতিক দল করছেন অথবা কোন রাজনৈতিক দল করছেন না, কাকে পছন্দ করছেন, কাকে পছন্দ করছেনা না। এসবের ঊর্ধ্বে উঠে তরুণ প্রজন্মের একটি রায় সেটি হচ্ছে ‘once again sheikh hasina’। তরুণ প্রজন্মের একটি স্বপ্ন সেটি হলো স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। আমাদের ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ তো ক্রিয়াশীল রয়েছে এর বাহিরে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নটি তরুণ প্রজন্মের ড্রিম প্রজেক্ট। স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নটি বাস্তবায়ন করার জন্য বৃহত্তর ছাত্রঐক্য রয়েছে সেটিকে আমরা আরো ঋদ্ধ করবো। সাংগঠনিক রূপ দেওয়া যায় কিনা সেটি আমরা ভেবে দেখবো। শুধু ছাত্র সংগঠন নয়, আমরা একটি কমন প্লাটফর্ম তৈরি করতে চাই সেখানে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলো যেমন থাকবে তেমন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও থাকবে। ক্যাম্পাস কেন্দ্রীক বিভিন্ন প্লাটর্ফম যারা থাকবে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন প্লাটফর্ম থাকবে এগুলোকে কেন্দ্র করে একটি স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে বৃহত্তর ঐক্যবদ্ধ ছাত্রসমাজের রিপ্লেকশন নিশ্চিত করার চেষ্টা করবো। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিরোধী ছাত্রসংগঠনের ওপর হামলার অভিযোগ থাকে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। তাহলে কি রাজনীতিতে সব সংগঠনের সমান অধিকার দরকার নেই? 

সাদ্দাম হোসেন: আমরা মনে করি ক্যাম্পাসগুলোতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে। ছাত্রসংগঠনগুলোর মাঝে ইতিবাচক কাজের প্রতিযোগিতা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের সাথে যাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই, জাতীয় রাজনীতির এক্সটেনশন হিসেবে ভূমিকা পালন করাই যাদের একমাত্র কাজ। ছাত্ররাজনীতির নাম করে যারা মূলত দুর্নীতিবাজদের পিঠ রক্ষা করতে চায়, জঙ্গিবাদের পুনর্বাসন করতে চায়, যুদ্ধাপরাধীদের রাজনৈতিক আদর্শ বাস্তবায়ন করতে চায় তাদের সাথে তরুণদের অনুভূতির কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বরং তরুণরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে। সন্ত্রাসীরা যে জোট গঠন করে, সেটা সন্ত্রাসীদের গেট টুগেদার হয়। এটির সাথে শিক্ষাঙ্গনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিভিন্ন ইউনিটে বিশেষ করে নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। এসব ইউনিটে কমিটি নিয়ে কী ভাবনা?

সাদ্দাম হোসেন: আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করার চেষ্টা করছি। যেখানে আমাদের দীর্ঘদিন ধরে কমিটি নেই, বিলুপ্ত রয়েছে, সাংগঠনিক স্থবিরতা তৈরি রয়েছে, সুস্থ সুন্দর ইতিবাচক রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে তাদের কমিটিগুলোর বিরুদ্ধে কিন্তু ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সকল জেলা-মহানগর নতুন যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রয়েছে সেখানে আমরা কমিটি গঠন করবো।


সর্বশেষ সংবাদ