‘সন্ধ্যাকালীন কোর্সে নিরুৎসাহিত করছি’

ড. মো. আখতারুজ্জামান
ড. মো. আখতারুজ্জামান

১৯৯০ সালে অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ভারতের আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি থেকে ইতিহাসে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

২০১৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাবির ২৮তম ভিসি হিসেবে দায়িত্ব নেন। ১ জুলাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ইরফান হক

প্রশ্ন: ভিসি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই কোন বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন?

ড. মো. আখতারুজ্জামান: ভিসি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর কতগুলো চ্যালেঞ্জ আমাদের ছিল। এর মধ্যে রাজধানীর সাত কলেজের অধিভুক্তির বিষয়টি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আমরা সমস্যা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছি। এরপর এলো ডাকসু নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ। এটা এখন একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জীবনমান নিয়েও আমরা কাজ করছি।

প্রশ্ন: সাত কলেজের সমস্যা সমাধানে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?

ড. মো. আখতারুজ্জামান: সাত কলেজের অধিভুক্তি ছিল একটি খুবই অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। এতে ব্যবস্থাপনা ও নীতিমালার ঘাটতি ছিল। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা এক বছর পিছিয়ে আছে। তবে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে যারা ভর্তি হয়েছে, তাদের সমস্যা হবে না। এসব কলেজ দেখাশোনার জন্য কিছু স্বতন্ত্র লোক দেওয়া হয়েছে এবং নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। আমরা সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।

প্রশ্ন: ডাকসু নির্বাচন কি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে? এজন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে?

ড. মো. আখতারুজ্জামান: দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে না। নির্বাচনের জন্য আদালতের নির্দেশনা আছে। বর্তমানে এটি একটি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। ডাকসু নির্বাচন আমাদের করতে হবে- এটি একটি ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে এসেছি। লক্ষ্য স্থির করে ফেলছি, এখন শুধু অনুষঙ্গী উপাদানগুলো সংযোজন ঘটানো হবে। সেটি একটার পর একটা করেছি। ভোটার তালিকা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বসতে হবে। সেজন্য শিগগিরই উদ্যোগ নেব। আমরা গভীরভাবে অনুভব করি যে, ডাকসু নির্বাচন প্রয়োজন।

প্রশ্ন: ক্যাম্পাসে সব ছাত্র সংগঠনের সহ-অবস্থান নেই। তাদের সঙ্গে বসতে গেলে কোনো সমস্যা হবে?

ড. মো. আখতারুজ্জামান: সমস্যা হওয়ার কথা না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কে কোন দলের- সেটা বড় কথা নয়। আমাদের কাছে সবাই ছাত্র। তারা যদি কোনো সমস্যায় পড়ে তাহলে আমরা দেখব। তবে ছাত্র সংগঠনের সহ-অবস্থান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করতে পারে না। এটা স্বাভাবিক যে, দেশে যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে ক্যাম্পাসে তাদের ছাত্র সংগঠনের প্রভাব একটু বেশি থাকে।

প্রশ্ন: অনেকেই মনে করেন, ডাকসু অচল থাকায় আগামীতে জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি হবে- এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য।

ড. মো. আখতারুজ্জামান: এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে বাস্তবতা হলো ২৮ বছর ধরে ডাকসু নির্বাচন হয়নি। এখন আমাদের নির্বাচন না হওয়ার এ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ইনশাআল্লাহ, আমরা ডাকসু নির্বাচন করব। এজন্য আমরা ক্রিয়াশীল যত ছাত্র সংগঠন আছে, সবার সঙ্গে আলোচনা করব।

প্রশ্ন: ছাত্রদের জীবনমান নিয়ে কী কাজ করছেন?

ড. মো. আখতারুজ্জামান: একটা সময়ে আমি এ বিষয় নিয়ে কাজ করেছিলাম। আমি ভিসি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ছাত্রদের আবাসন ও খাদ্যের মানের দিকে নজর দিতে হয়েছে। আমরা খাবারের একটি মান এবং দাম নির্ধারণ করে দিলাম। এর ভালো ফল হলো, আমাদের মতো অজোপাড়াগাঁ থেকে যারা ক্যাম্পাসে এসেছে, তাদের জন্য সুবিধা হয়েছে। আগে একেক হলে একেক ধরনের দাম নিত। এখন সেটা বন্ধ করতে পেরেছি। অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক একাডেমিক জীবন যাতে কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়, সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

প্রশ্ন: ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল প্রতিপাদ্য ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা’। এ প্রতিপাদ্য কোন মানন্ডে নির্ধারণ করা হয়েছে?

ড. মো. আখতারুজ্জামান: ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন বলতে বুঝায় উন্নয়নটা হবে ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট। ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট বলতে সমাজের সব সেক্টর, সব অংশ, সব জনপদ, সব শ্রেণি-পেশার মানুষ সমন্বিতভাবে, সমভাবে উন্নয়নটা ঘটে। এ ধারণাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যায়। তাই এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল প্রতিপাদ্য দেওয়া হয়েছে, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে উচ্চশিক্ষা’।


প্রশ্ন: কোটা সংস্কার আন্দোলন নামে ভিসি বাসভবনে হামলা। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

ড. মো. আখতারুজ্জামান: ক্যাম্পাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন ছিল আমাদের জন্য একটি বাড়তি ঝামেলা। একে কেন্দ্র করে দুর্বৃত্ত-সন্ত্রাসীরা ভিসি বাসভবনে ঢুকে হামলা-ভঙচুর-লুটতরাজ চালিয়েছে। কবি সুফিয়া কামাল হলেও একটি গুজব ছড়িয়েছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবারের সবাই দ্রুত বুঝতে পেরেছে যে, এর মধ্যে একটি অপশক্তি কাজ করছে। এজন্য এটি বেশি দূর যেতে পারেনি। এর বিরুদ্ধে সবাই সোচ্চার ছিল।

প্রশ্ন: বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান তলানিতে। সেটা কেন?

ড. মো. আখতারুজ্জামান: বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রচুর বিনিয়োগ করে থাকে। জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি পদ্ধতি অনুসরণ করে। তারা প্রতি বছর একটি টার্গেট নেয়। তাদের ১০০ থেকে ২০০টি মতো বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তারা সেখান থেকে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিল এবং তাদের বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ দিয়ে বলা হলো- তাদের একটি মানে পৌঁছাতে হবে। এভাবে তারা একটি টার্গেট ঠিক করে। আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এ ধরনের কোনো টার্গেটেট কিছু করা হয় না। অমুক খাতে এত এত বাজেট দিয়ে সেটা সম্ভব নয়। এখানে টার্গেটেট বাজেট লাগবে। এছাড়া, যেসব বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিংয়ে এগিয়ে রয়েছে, তাদের মূল কারণ তারা আন্তর্জাতিকভাবে সম্পৃক্ত। তার মানে তাদের আন্তর্জাতিক শিক্ষক ও ছাত্র রয়েছে। এজন্য টাকা লাগবে, বিনিয়োগ প্রয়োজন; যেটি আমাদের জন্য সম্ভব হয় না। আমিও তো বৃত্তি নিয়ে বিদেশে পড়তে গেছি। এখন আমরা কতজন বিদেশি শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দিয়ে এখানে নিয়ে আসি? ক’জন বিদেশি অধ্যাপককে বিমান ভাড়া দিয়ে এখানে নিয়ে আসি? সুতরাং, আমাদের বিনিয়োগ দুর্বল। যেমন বিনিয়োগ, তেমন ফল। তাই আমাদের টার্গেটেট বাজেট নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এসব বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে। আমরা এখনও আগের মতোই আছি। আমাদের টার্গেটমুখী করে ক্ষেত্রেগুলো চিহ্নিত করে ওইসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ লাগবে। এতে আন্তর্জাতিকভাবে আমরা সমৃদ্ধ হব, বিশ্ব র‌্যাংকিংয়েও এগিয়ে যাব।

প্রশ্ন: বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে হলে কী করতে হবে?

ড. মো. আখতারুজ্জামান: বিশ্ববিদ্যালয় একটু মানে উঠতে হলে সেখানে বিনিয়োগ দরকার হবে। সেজন্য আমরা একটি প্রস্তাবনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফান্ড নামে একটি ফান্ড গঠন করব। ধরুন, সেটি ১ হাজার কোটি টাকার ফান্ড হতে পারে। আজ থেকে ৫ বছর আগে সিনেটে আমি এ প্রস্তাবটি দিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় সেটা নিয়ে এগিয়ে যায়নি। এর নাম ছিল ‘দি ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফান্ড’। সেটাতে আমাকে প্রধান করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীও সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এতে ফান্ডিং করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইরাসহ বিত্তবানরা। এখন আমার সুযোগ আসছে। এ বিষয়ে উদ্যোগ নেব। একটি বড় গবেষণা করতে চাইলে কোটি কোটি টাকা প্রয়োজন। বড় অঙ্কের টাকা ছাড়া কিছুই হবে না। আমাদের অবকোঠামো নেই। শিক্ষাকরা রুমে বসতে পারেন না, ছাত্ররা গণ-রুমে। মান এত সোজা না। আমরা আগামীতে কিছু হল বানানোর প্রস্তাব করব।

প্রশ্ন: বিদেশি শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কিনা?

ড. মো. আখতারুজ্জামান: এক সময় আমাদের পাশের দেশের অনেকেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়তে আসত। বর্তমানে এসব দেশ উন্নত হয়ে যাওয়ায় তারা দেখছে আমাদের দেশ গবির। আগে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া থেকে শিক্ষার্থী আসত। এখন তারা দেখছে যে তাদের অবকাঠামো আমাদের চেয়ে বেশ ভালো। তাই কেন আসবে তারা? সুতরাং, আমাদের অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তবে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি জন্য রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে একটি ‘হেল্প ডেস্ক’ চালু করেছি। ‘ফরেন ডেস্ক’ নামে এবং দুইজনকে এটি দেখাশোনারও দায়িত্ব দিয়েছি।

প্রশ্ন: বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে শিক্ষার্থীরা পড়ার জায়গা পায় না। এটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেবেন কি?

ড. মো. আখতারুজ্জামান: শিক্ষার্থীরা গণরুমে ঘুমায়। কিন্তু গ্রন্থাগারে গিয়ে যদি একটু বসার জায়গা পেত, তাহলে তারা সেখানে পড়তে পারবে। কিন্তু এখন শিক্ষার্থীরা গ্রন্থাগারে সকাল ৫টার সময় লাইন দেয়, বসার জায়গা পায় না। গ্রন্থাগারকে ১০ তলা করে এর ভেতরে কয়েকটি রিডিং ফ্লোর করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রশ্ন: এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বলা হতো। সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে কতটা সক্ষম হয়েছে বলে মনে করেন?

ড. মো. আখতারুজ্জামান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউটরিয়াল, প্রশাসনিক কার্যক্রম ও আবাসিক সুবিধার নিয়ম-নীতি অক্সফোর্ডের আদলে তৈরি করা হয়েছিল। এ কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে তখন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হতো। কিন্তু এখন তো সেই পরিবেশ নেই। অক্সফোর্ডে কি গণরুম আছে। এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০০ একর জায়গা ছিল কিন্তু এখন তা কমে ২০০ থেকে ২৫০ একরে পরিণত হয়েছে। এমন আরও কিছু বিষয় আছে যেগুলো আমাদের চিহ্নিত করতে হবে।

প্রশ্ন: পূর্বাচলে আরেকটি ক্যাম্পাস হওয়ার কথা। সে ব্যাপারে আপডেট কোনো তথ্য রয়েছে কিনা?
ড. মো. আখতারুজ্জামান: আমাদের জন্য একটি আনন্দের খবর হলো, সম্প্রতি পূর্বাচলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৫২ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম। সেখানে ক্যাম্পাস সম্প্রসারণ হবে। কিছু অনুষদ বা ইউনিট সেখানে যাবে। সম্প্রতি জমি বরাদ্দ পেয়েছি। এবার জমির মূল্য পরিশোধের অর্থছাড়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি পাঠাব। আশা করছি, দ্রুতই এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারব।

প্রশ্ন: শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, বর্তমানে তাদের মূল দর্শনকে কতটুকু ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছেন?

ড. মো. আখতারুজ্জামান: এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের দর্শনের আলোকেই এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ১৯৭৩ সালে তাদের দর্শনের ভালো একটি মাত্রা দিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি তখন বিশ্ববিদ্যালয় আইন করেন। এটি একটি গণতান্ত্রিক আইন ছিল। বর্তমানে সেই গণতান্ত্রিক আইনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। এ রীতিতে শিক্ষার্থীরাও গণতন্ত্র মনস্ক, রাজনৈতিক মনস্ক হয়ে গড়ে উঠতে পারছে।

প্রশ্ন: ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী ও ২ হাজার শিক্ষক- এ অনুপাতটা কি বিশ্বমানের?

ড. মো. আখতারুজ্জামান: ১৯২১ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয় শুরুর পর থেকে অনেক সংযোজন ও বিয়োজন হয়েছে। ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী, অধিভুক্তি রয়েছে প্রায় ৩ লাখ। ২ হাজারের বেশি শিক্ষক রয়েছেন আর কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে ৮ হাজারের মতো। অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এসবের সঙ্গে যে অন্য অনুষঙ্গী দরকার, সেগুলো সেই অনুপাতে বাড়েনি। ফলে মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

প্রশ্ন: সন্ধ্যাকালীন কোর্স নিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি কী?

ড. মো. আখতারুজ্জামান: বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মান বজায় রাখতে হলে এর নিয়মিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষকদের পর্যাপ্ত সময়-শ্রম দিতে হবে। যখন শিক্ষকরা এটা না করে বিভিন্ন জায়গায় মেধা ও শ্রমকে বিভাজন করে দেয়, তখন অটোমেটিকলি মূল ধারার শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে কারণে আমরা সন্ধ্যাকালীন কোর্সে কাউকে উৎসাহিত করি না। দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর আমি এদিকে আর সম্প্রসারণ ঘটাইনি। আগামীতেও যাব না। আমাদের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা কীভাবে বাড়ানো যায়, সেদিকে নজর দিতে হবে।

প্রশ্ন: অতীতে দেশের যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্ব দিত। বর্তমানে সে চর্চা আছে কিনা?

ড. মো. আখতারুজ্জামান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বুদ্ধিভিত্তিক চর্চা আগেও ছিল, এখনও আছে। দেশের যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে সব সময় নেতৃত্ব দিত, এখনও দেয়।

প্রশ্ন: গেল ভিসির আমলে ১৫টিরও বেশি নতুন বিভাগ খোলা হয়েছিল। এসব বিভাগের যৌক্তিকতা কতটুকু?

ড. মো. আখতারুজ্জামান: এসব অপরিকল্পিতভাবে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এসব বিভাগ অনেক কিছু বিবেচনায় না নিয়েই অপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। থিউরিটিক্যাল ফিজিক্স নামের একটি বিভাগের অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে, আমরা সেটা বন্ধ করে দিয়েছি। এসব বিষয় নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে।

প্রশ্ন: আমাদের সমাজে নৈতিক অধঃপতন এবং মূল্যবোধের অবক্ষয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা বিকাশ এবং মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধে আপনার পরামর্শ কী?

ড. মো. আখতারুজ্জামান: সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো একটি মূল্যবোধের অবক্ষয়ের ঘটনা ঘটেছে। একটি বিভাগের পাঁচ ছেলে তাদের মেয়ে সহপাঠীকে ফেইসবুকে অশ্লীল মন্তব্য করেছিল। মেয়েরা অভিযোগ দিলে ওই পাঁচ শিক্ষার্থীকে শাস্তির আওতায় এনেছি। যারা এ ধরনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করবে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা শক্ত অবস্থান নেব। কোথাও বিচারহীনতার সংস্কৃতি থাকবে না।

আপনাকে ধন্যবাদ।

ড. মো. আখতারুজ্জামান: আপনাকেও ধন্যবাদ। 


সর্বশেষ সংবাদ