সাক্ষাৎকার

ডাকসু নির্বাচন হলে আবারও নিরঙ্কুশ বিজয় হবে ছাত্রলীগের

তানভীর হাসান সৈকত
তানভীর হাসান সৈকত  © ফাইল ছবি

গত বছরের ২০ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছেন তানভীর হাসান সৈকত। এর আগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। করোনাকালীন প্রান্তিক মানুষের জন্য টানা ১১৬ দিন সহায়তা কার্যক্রম করে জাতিসংঘ কর্তৃক পেয়েছেন "রিয়েল লাইফ হিরো" স্বীকৃতি। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের জন্য তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, ডাকসু নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচন, ক্যাম্পাস রাজনীতি, গণরুম ব্যবস্থা, সংগঠনে অনুপ্রবেশ, দলীয় অন্তঃকোন্দল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ঢাবি প্রতিনিধি রিফাত হক—


দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশের ইতিহাসে ছাত্রলীগের ভূমিকাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
তানভীর হাসান সৈকত: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগের বীজ বপন করেছিল। ছাত্ররা যে একটা দেশের অধিকার আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। সেটি বঙ্গবন্ধু অনুধাবন করতে পেরেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা দেখেছি ভাষা-আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা-সংগ্রাম পর্যন্ত পুরোটা সময় ছাত্রলীগ ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ন্যায্য অধিকারের দাবিতে ছাত্রলীগ রাজপথে লড়াই করেছে এবং রক্ত দিয়েছে। সেক্ষেত্রে জাতির পিতা নিজেই বলেছেন ছাত্রলীগের ইতিহাস, বাংলাদেশের ইতিহাস। আমিও মনে করি, ছাত্রলীগের ইতিহাস, বাংলাদেশের ইতিহাস। বাংলাদেশকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে ছাত্রলীগ।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত ‘রিয়েল লাইফ হিরো’। করোনাকালীন টানা ১১৬ দিন সহায়তা কার্যক্রম চালান। এই সময়ে এসে শিক্ষার্থীদের জন্য কী কী কল্যাণমূলক কাজের পরিকল্পনা নিয়েছেন? 
তানভীর হাসান সৈকত: প্রথমে আমরা মনে করি ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। হল গুলোতে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল করা, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরীর জন্য কাজ করছি। অচিরেই তার ফলাফল দেখা যাবে। পাশাপাশি অ্যান্টি-র‍্যাগিং, অ্যান্টি-সেক্সুয়াল হ্যারেসমেন্ট বিষয়ে সেল গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। সেখানে শিক্ষার্থীদের আমরা আইনী সহায়তা দিব। সর্বোপরি, শিক্ষার্থীদের জন্য যেটি প্রয়োজনীয় সেটিই করার জন্য আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি তো ডাকসুর নির্বাচিত সদস্য ছিলেন। সেক্ষেত্রে বর্তমানে ডাকসুর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন কী?
তানভীর হাসান সৈকত: অবশ্যই ডাকসুর প্রয়োজনীয়তা আছে। ডাকসু শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করবে। গত ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগ থেকে আমরা ২৩ জন (২৫টি পদের মধ্যে) নির্বাচিত হয়েছিলাম। এটা ছাত্রলীগের জন্য বড় অর্জন ছিল। আমাদের সাথে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। অন্য ছাত্র সংগঠনগুলো আমাদের আশেপাশে নেই। ফলে ডাকসু নির্বাচন হলে আমরা আবারও নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করবো। সে জায়গা থেকে আমরা চাইব, ডাকসু নির্বাচন হোক।

আরও পড়ুন: নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন না হওয়াটা ঢাবি প্রশাসনের ব্যর্থতা: কাদের

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ঢাবির হলের গণরুমের বিপক্ষে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল। এখন তো আপনি শাখা ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। সেক্ষেত্রে আপনার কী করণীয় বলে মনে করেন?
তানভীর হাসান সৈকত: আমি ডাকসুতে থাকাকালীন গণরুম বিরোধী আন্দোলন করেছি। আমি চাই না বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম কালচারটা থাকুক। শুধু আমি না, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীই এই কালচারটা পছন্দ করে না। গণরুমে বিরুদ্ধে আমি যখন প্রশাসনকে স্মারক লিপি দিয়েছিলাম। সেখানে আসন-সংখ্যা সীমিত করণ এবং হল নির্মাণের কথা উল্লেখ করেছিলাম। গতবছর থেকেই আমাদের আসন সংখ্যা কিছুটা সীমিত করেছে। বঙ্গবন্ধু হল ও সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে নতুন ভবন নির্মাণ হচ্ছে। এই ভবনগুলো নির্মাণ হলে আমাদের আর আসন সংকট থাকবে না। আমরা গণরুম কালচার থেকে চলে আসতে পারবো। আমরা চাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোর কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ হোক এবং শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট দূর হোক।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: অনুপ্রবেশ একটা সংগঠনের জন্য ক্ষতিকর মনে করা হয়। ছাত্রলীগের অনুপ্রবেশ ঠেকাবেন কীভাবে? 
তানভীর হাসান সৈকত: আওয়ামী লীগ ১৪ বছর টানা ক্ষমতায় রয়েছে। একটা সময় আদর্শিক জায়গা থেকে অন্য দল করলেও বর্তমানে টুকিটাকি আমাদের সংগঠনে ঢুকে গেছে। এই অনুপ্রবেশকারীরাই বিভিন্ন সময় এমন এমন কাজ করে থাকে, যার ফলে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের কাছে আমাদের সংগঠন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সেজন্যে অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য নেতৃত্ব বাছাইয়ের সময় জাতির পিতার আদর্শিক, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসীদের নেতৃত্বে স্থান দেওয়া হবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সম্প্রতি ঢাবির বেশ কয়েকটি হলে ছাত্রলীগের মধ্যে অন্তঃকোন্দল দেখা গেছে। এটা কীভাবে দেখছেন? 
তানভীর হাসান সৈকত: নতুন কমিটি হলে মাঝেমধ্যে হলগুলোতে এসব সংকট তৈরী হয়। সংকট নিরসনের জন্য আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা হলে হলে কর্মী সভা করছি। আর কর্মী সভাগুলো খুবই ইফেক্টিভ হচ্ছে। আমরা কর্মীদের বুঝানোর চেষ্টা করছি যে, এধরনের সংকট সৃষ্টি না হয়। তাদের নির্দেশনা দিচ্ছি-কী করা যাবে, কী করা যাবে না। একইসাথে নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রলীগের আরও কীভাবে জনপ্রিয় হতে পারে। সেটি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি, আমাদের কর্মী সভাগুলো শেষ হয়ে গেলে এধরনের সংকট আর তৈরি হবে না।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী বিভিন্ন রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে কী বলবেন?
তানভীর হাসান সৈকত: যে কেউ অপরাধ করলে তাকে তো আমরা কোনোভাবেই ছাড় দিচ্ছি না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বহিষ্কার করার জন্য আহবান জানিয়েছে। ইতোমধ্যে সেই প্রতিফলন আমরা দেখতে পেয়েছি। আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বলেছি। একইসাথে আমাদের সংগঠন থেকে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। পাশাপাশি বলতে চাই যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এতটুকু বুঝা উচিত সে জনগণের করের টাকায় পড়ছে। জনগণের প্রতি তার একটা দায়বদ্ধতা তৈরি হয়েছে। সে জনগণের টাকায় পড়াশোনা করে যদি এদেশের ক্ষতি করে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। সে জায়গা থেকে আমরা মনে করি, এ ধরনের কার্যকলাপে আমাদের শিক্ষার্থী যেন নিরুৎসাহিত হয়।  বরং, মগজের যে অন্ধত্ব রয়েছে সেটি নিরসনের জন্য আমরা কালচারাললি মুভমেন্ট শুরু করেছি। আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তিনটি বড় বড় কালচারাল করেছি। এই সাংস্কৃতিক আন্দোলনগুলো এসব শিক্ষার্থীদের মগজের অন্ধত্বকে দূর করবে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ছাত্রলীগের অনেকেই বলে থাকে তাদের ইতিবাচক সংবাদগুলো গণমাধ্যমে আসে না। আসলে এটি কেন বলা হয়?
তানভীর হাসান সৈকত: গণমাধ্যম আমাদের পক্ষে লিখে না, বিষয়টি এমন না। গণমাধ্যম আমাদের পক্ষেও লিখে আবার বিপক্ষেও লিখে। অনেক সময় দেখেছি যে, গণমাধ্যম ব্যক্তির দায় আমাদের সংগঠনের উপর ঢালাওভাবে চাপিয়ে দিচ্ছে। একজন শিক্ষার্থী ব্যক্তিগতভাবে কিছু করলে তা সংগঠনের উপর দায় দিচ্ছে- এটি ঠিক নয়। কিছু গণমাধ্যমে অনেক ফিকশন-গল্প আসে। অসত্য তথ্য দুই একটা জায়গায় মাঝেমধ্যে আসে। এটা গণমাধ্যমের দায়িত্ব নয়। গণমাধ্যমগুলো বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ও জাতির বিবেক হিসেবে কাজ করলে খুশি থাকি। আমরা মনে করি, গণমাধ্যম আমাদের বন্ধু। আমাদের উভয়ের দায়িত্ব একই। আমরা জনগণের জন্য কাজ করছে, তারাও জনগণের জন্য কাজ করছে। আমাদের উভয়ের লক্ষ্য যেহেতু একই, সেক্ষেত্রে আমরা তাদের প্রতি বন্ধুসুলভ সবসময়। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ২০২৩ সালের নির্বাচনকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কী ভাবছে?
তানভীর হাসান সৈকত: আমরা বাংলাদেশে দেখে এসেছি এমন রাজনৈতিক কালচার, যেখানে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটা পক্ষ সবসময় আপামর জনতা, হত-দরিদ্র, প্রান্তিক মানুষের উপর অগ্নি সন্ত্রাস করে থাকে। একটা সময় দেখা গেছে গার্মেন্টস কর্মীরা অগ্নি সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। আমরা সতর্ক থাকব সামনে দিনগুলোতে যাতে এরকম পরিস্থিতি তৈরী না হয়। একই সাথে আমরা জানি যে, অনেক সংগঠন বিদেশি প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করে। আবার অনেকে চেষ্টা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশে রাজনীতি করবে। নির্বাচনের দিনগুলোতে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি না হয় এবং শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষার সুস্থ পরিবেশের নিশ্চয়তা দিতে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ রাজপথে থাকব। কোনো ধরনের অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে সেটা প্রতিহত করবো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। 
তানভীর হাসান সৈকত: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।


সর্বশেষ সংবাদ