০৮ ডিসেম্বর ২০২২, ২২:১৪

মোবাইল দিয়ে শুরু, জবির মুনের ছবি এখন ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে

জবি ছাত্র মুন  © টিডিসি ফটো

ছাত্রজীবনে একটা পর্যায়ে বিশেষকরে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর উদ্দেশ্য ছোটখাটো কাজে নিজেকে মনোনিবেশ করেন। কেউ পারিবারিক অক্ষমতায় টিকে থাকার প্রয়াসে, আবার কেউবা শুধুই শখের বসে পড়াশোনার পাশাপাশি বাইরে কোনো না কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত হন। আর এই শখ বা নেশার বসে যুক্ত হওয়া এই কাজই হয়ে উঠে একসময় অনেকের পরিচয়।
 
তেমনি একজন শিক্ষার্থী হচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র মুন হৃদয়। ৭ম শ্রেনীতে পড়াকালীন অবস্থায় সেলফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন রকমের ছবি তোলার ভালো লাগা থেকে তা ধীরে ধীরে মুনের নেশায় পরিণত হয়। এখন তিনি একজন ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার। তার এই পথচলার গল্প দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। মুনের কথাগুলো শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের মো. সাগর হোসেন

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: শুভেচ্ছা নেবেন। আপনি কেমন আছেন? আপনার শৈশব এবং প্রাথমিক শিক্ষা জীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
মুন হৃদয়: আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আমার বেড়ে ওঠা বগুড়া জেলায়। আমি বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এসএসসি এবং ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছি। উভয় পরীক্ষাতেই আমি জিপিএ ৫.০০ পেয়ে উত্তীর্ণ হই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এখন ফটোগ্রাফিতে আপনার বেশ সুনাম। এতে যুক্ত হলেন কীভাবে?
মুন হৃদয়: আমি যখন বগুড়ার পল্লী উন্নয়ন একাডেমীতে ৭ম শ্রেনীতে পড়তাম তখন আমার একটা স্যাম্পোনি মোবাইল ছিলো। তখন ফোনেই আমি বিভিন্ন রকম ছবি তুলতাম। ধীরে ধীরে বিষয়টি আমার নেশায় পরিণত হয়। যখন শখ নেশায় পরিণত হয় তখন বাবা ২০১৮ সালে আমাকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে প্রথম ডিএসএলআর ক্যামেরা কিনে দেন।

আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক বেস্ট ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড পেলেন হাবিপ্রবি শিক্ষার্থী

এরপর থেকে আমি পশু-পাখির ছবির সন্ধানে আমার পরিচিত কয়েক জন ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার খাজা ভাই, আদনান ভাই, বিপ্লব ভাই, পায়েল ভাই তাদের সাথে বিভিন্ন বনে-জঙ্গলে ঘুড়ে বেড়ানো শুরু করি। তারপর থেকেই নেশা আরও বেড়ে যায়। তখন আরও ভালো ছবি তোলার জন্য ২০২১ সালে আমার বাবা আমার আগ্রহ দেখে দেড় লাখ টাকা দিয়ে আমাকে আরেকটি ক্যামেরা ও ১টি ল্যান্স কিনে দেন। আর এভাবেই আমি ফটোগ্রাফির সাথে যুক্ত হয়ে পড়ি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ফটোগ্রাফি এবং আপনার একাডেমিক পড়াশুনা দুইটা একসাথে চালিয়ে নিতে কোন সমস্যা হয় কিনা?
মুন হৃদয়: আমি বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যায়নরত আছি। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আসার আগে আমি যখনই সময় পেতাম চলে যেতাম বনে ছবি তুলতে। তবে এখন একাডেমিক পড়াশুনা, ক্লাসের কারণে আর আগের মতো যখন ইচ্ছা তখন ছবি তুলতে যেতে পারি না। এছাড়া তেমন কোন সমস্যা হয় না।

আরও পড়ুন: শখে আনন্দ, শখে আয়

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার লাইফস্টাইল সম্পর্কে কিছু বলুন
মুন হৃদয়: আমি মনে করি অন্যান্যদের থেকে আমার লাইফ স্টাইলটা একটু আলাদা। একাডেমিক কাজের বাইরে আমি শুধু একটি জিনিসিই করতে পছন্দ করি সেটি হচ্ছে ছবি তোলা। এখনো তাই করে যাচ্ছি। বন্যপ্রাণীদের কাছে থাকতে আমার ভালো লাগে। তাই ক্যামেরা নিয়ে ছুটে বেড়াই দেশের এই বন জঙ্গলে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ফটোগ্রাফি করার পেছনে অনুপ্রেরণা কি ছিলো
মুন হৃদয়: আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। শুরুতে কেউই পছন্দ করতো না ছবি তোলা। আমি ভালো ভালো ছবি তোলার মাধ্যমে আস্তে আস্তে বাবা-মাকে বিষয়টা বোঝাতে সক্ষম হই এবং উনারাও বুঝলো এটাতে আমি ভালো করছি। একজন ফটোগ্রাফার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে আমার বড়ভাই আমাকে সবচেয়ে বেশী অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: এখন পর্যন্ত আপনি কি কি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন?
মুন হৃদয়: আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতে আমার ছবি পাবলিশ হওয়া। আমি ২০২০ সালে ইতালি থেকে ‘sieana award’ পেয়েছি। এছাড়াও দেশের অনেক জায়গায় অনেক পুরস্কার পেয়েছি। ২০১৯ সালে আমি বাংলাদেশের জাতীয় যুব ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা এবং অন্যান্য ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতা থেকে মেধা তালিকায় উর্ত্তীর্ণ  হই।

এছাড়াও ২০২০ সালে ‘৩৫ জাতীয় পুরস্কার’ প্রতিযোগিতায় আমার ছবি ১০০টি মোবাইল বিভাগে মনোনীত হয়েছে। ২০২১ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফির ফেসবুক, টুইটার ও ইন্সটাগ্রাম অফিসিয়াল পেজে প্রকাশ করেছিল যে ছবির নাম “কিস অফ ডেথ”। একই বছরে আমি জাতীয় জলবায়ু পরিবর্তন আন্তর্জাতিক পুরস্কার জিতেছি।

আরও পড়ুন: শখের বসেই ছবি তোলা, এখন ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার জবি ছাত্র মুন হৃদয়

‘ইউনেস্কো সিল্ক রোড প্রতিযোগিতায় আমার একটি ছবি সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত হয়েছিলো যেই প্রতিযোগিতার আয়োজক ছিলো ইউনেস্কো। ২০২২ সালের এপ্রিলে আমি একটি প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়ার জন্য রাশিয়া থাকার পাস পেয়েছি। মজার বিষয় হচ্ছে ৫-৬টি প্রতিযোগিতায় জিতেছে আমার ১টি মাত্র ছবি। সেই ছবির নাম দিয়েছি ‘এঞ্জেল ফল’। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: নতুনদের উদ্দেশ্য আপনার আপনার উপদেশ কি থাকবে? 
মুন হৃদয়: ছবি তোলা অনেক ভালো একটা শখ এবং পেশা। আজকাল কার ছেলে-মেয়েরা ফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তারা এই ছবি তোলার মাধ্যমে বিভিন্ন নেশাজাতক খারাপ কাজ থেকে দুরে থাকবে এবং নিজেকে সবার মাঝে তুলে ধরতে পারবে এক নতুন পরিচয়ে। 

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
মুন হৃদয়: বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা। দেশের বিলুপ্ত  বন্যপ্রাণীদের  রক্ষার্থে কাজ করতে চাই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের অনেক ধন্যবাদ।
মুন হৃদয়: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্যেও রইলো শুভ কামনা।