বাংলাদেশি কাচ্চি-পরোটা-শিঙাড়া উগান্ডায় চালু করতে চাই

ফিরদৌস ন্যামিহিঙ্গো
ফিরদৌস ন্যামিহিঙ্গো  © টিডিসি ফটো

উগান্ডা থেকে বাংলাদেশে পড়তে এসেছেন ফিরদৌস ন্যামিহিঙ্গো। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। তার বাংলাদেশে পড়তে আসা এবং দুই দেশের শিক্ষাব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। তার কথাগুলো শুনেছেন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি প্রতিনিধি তাওফিকুল ইসলাম হিমেল

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার বাংলাদেশে আসার পেছনের গল্প কী?
ফিরদৌস ন্যামিহিঙ্গো: আসসালামু আলাইকুম। আমি ফিরদৌস ন্যামিহিঙ্গো, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির একজন শিক্ষার্থী। পড়াশোনা করছি বিশ্ববিদ্যালয়টির বিবিএ বিভাগে। বাংলাদেশ সম্পর্কে কথা বলার এই সুযোগে আমি খুবই আনন্দিত।

বাংলাদেশে আমার আগমনের পেছনের গল্প হল আমি প্রথম আমার বাবার সঙ্গে দেখা করতে প্রথম এখানে এসেছিলাম। আমার বাবা ডক্টর মেবেসা উমর। তিনি ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করছেন। পরে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমি বাংলাদেশে পড়াশোনা করবো এবং একইসঙ্গে আমার বাবার যত্ন নেব।

পরে আমি ২০১৮ সালের জুলাইয়ের দিকে বাংলাদেশে আসি। আমি পড়াশোনা করতে এসে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে বিবিএতে ভর্তি হই। বর্তমানে আমি বিশ্ববিদ্যালয়টির অনার্স চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়ন করছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশ সম্পর্কে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কেমন
ফিরদৌস ন্যামিহিঙ্গো: বাংলাদেশ সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ দেশ। এ দেশের মানুষজন খুব অতিথিপরায়ণ। এখানে আমার পরিচিত অনেকে আমাদের উগান্ডার সংস্কৃতি সম্পর্কেও জানতে চান। বাংলাদেশের মানুষ ভাষা অত্যান্ত মিষ্টি। 

ব্যক্তিগতভাবে আমি এ দেশের অনেকের সঙ্গে মিশেছি। এখানে আসার পর আমি বেশকিছু সমস্যার ফেস করেছি। যেগুলোতে তারা আমাকে বেশ সহায়তা করেছেন। এই মানুষগুলো আমার কাছে দেবদূত। এসব গুণে এখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বহির্বিশ্বের ব্যবসায়ীদের দারুণ একটা সমন্বয় সাধিত হচ্ছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশে আপনি কি ধরনের জিনিস পছন্দ করেন? 
ফিরদৌস ন্যামিহিঙ্গো: আমি এখানকার প্রায় সব ধরনের খাবার ভালোবাসি। প্রতিটি উদযাপনের জন্য প্রচুর মিষ্টি জাতীয় খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। যা সত্য খুব চিত্তাকর্ষক।

বাংলাদেশে পাওয়া বহুমুখী খাবার যেমন কাচ্চি বিরিয়ানি, নান, পরোটা, শিঙাড়া ইত্যাদি খুবই আকর্ষণীয়। এছাড়া আমি পোশাকের মধ্যে বোরকা ভালোবাসি। একসঙ্গে শাড়ি এবং সালোয়ার-কামিজও আমার পছন্দ। এসব পোশাক পরে খুব মজা পাওয়া যায়। পোশাকগুলো নারীদের মর্যাদাও রক্ষা করে।

আরও পড়ুন: দেশেই আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন আইইউটি শিক্ষার্থীরা

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাংলাদেশে আপনি কি ধরনের জিনিস অপছন্দ করেন?
ফিরদৌস ন্যামিহিঙ্গো: বাংলাদেশ সম্পর্কে আমার অপছন্দের একমাত্র বিষয় হল আবহাওয়া। আবহাওয়ার ঋতু আমার স্বাস্থ্যে অনেকটা অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। তবে আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন সিস্টেমে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে উগান্ডা এবং বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য কী?
ফিরদৌস ন্যামিহিঙ্গো: উগান্ডা থেকে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা অনেক ভালো। কারণ বাংলাদেশে যে মানের পাঠ্যক্রম রয়েছে; তা সহজে বোধগম্য করার মতো এবং মানসম্মত। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনুষদগুলোর পাঠদান প্রক্রিয়ায়ও মোটামুটি সহজ।

তবে কুইজ-প্রেজেন্টেশন ইত্যাদির মতো অনেক পরীক্ষা রয়েছে যা প্রচুর উদ্বেগ এবং চাপ সৃষ্টি করার মতো। কিন্তু এটা শিক্ষার্থীদের জন্য খারাপ কিছু নয়। এতে শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে চাপের মধ্যে কীভাবে কাজ করতে হয়।

উদাহরণ স্বরূপ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি আমাদের যেটা হয়, এ সংক্রান্ত কুইজ-প্রেজেন্টেশনে আমরা ফরমাল ড্রেস পরিধান করি। এতে শিক্ষার্থীরা শিখতেছে তাদের পরবর্তীতে কর্মস্থলে কীভাবে নিজকে উপস্থাপন করতে হবে। ক্লাসেও সবাই মানসম্মত পোশাক পরিধান করেন। কিন্তু এসব বিভিন্ন ক্ষেত্রে উগান্ডার শিক্ষাব্যবস্থার চিত্র একেবারে ভিন্ন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: স্নাতক শেষ করার পরে আপনার পরিকল্পনা কি?
ফিরদৌস ন্যামিহিঙ্গো: উদ্যোক্তার প্রতি আমার একটা দুর্বলতা রয়েছে। সে জায়গা থেকে আমি ব্যবসায়ে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা করছি।

বাংলাদেশে আসার আগে আমি উগান্ডায় একটি কাগজের ব্যাগ তৈরির ছোট প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেছি। এটা আপাতত বন্ধ রয়েছে। স্নাতক শেষে আমি ওই প্রতিষ্ঠান আবার নতুন করে শুরু করতে চাই।

এছাড়া আমার একটি কফি শপেরও ব্যবসা ছিলো। এই কফি শপ আমি আবার উগান্ডায় গিয়ে শুরু করতে চাই। এখানে আমি বাংলাদেশের শিঙাড়ার মতো খাবার আইটেমগুলোও যুক্ত করতে চাই। আমরা ইচ্ছা, আমার দেশে গিয়ে সেখানে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরবো। এভাবে আমি আন্তর্জাতিক উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ফিরদৌস ন্যামিহিঙ্গো: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্যেও শুভ কামনা রইলো।


সর্বশেষ সংবাদ