স্রষ্টার পর মানুষ বিচারক-ডাক্তারের ওপর ভরসা রাখে

শফিউল্লাহ লিখন
শফিউল্লাহ লিখন  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএসসি) নিয়োগ পরীক্ষায় চলতি বছরে সারাদেশে ১০২ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। এ তালিকায় ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আইন বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শফিউল্লাহ লিখন। তিনি দুইবার ভাইভা থেকে ফেরৎ আসলেও হাল ছাড়েননি, তৃতীয়বারে আসে সাফল্য। এখন অনেকের কাছে অনুপ্রেরণার নাম শফিউল্লাহ লিখন।

তার ব্যক্তিগত জীবন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা ও বিজেএসসি পরীক্ষায় সাফল্য নিয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের সঙ্গে কথা বলেছেন। তার কথাগুলো শুনেছেন—রেদওয়ান রাকিব

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনি বিজেএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। আপনাকে অভিনন্দন।
শফিউল্লাহ লিখন: ধন্যবাদ আপনাকে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার জন্ম, শৈশব এবং পিতা-মাতার অবদান সম্পর্কে জানতে চাই
শফিউল্লাহ লিখন: আমার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে বামুনখালিতে। ওখানেইও বেড়ে ওঠা। আমার পিতা নূরুল হুদা ও মাতা রাবিয়া খাতুন। গ্রামের ঐতিহ্যবাহী গফরগাঁও জে এম কামিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল (মাধ্যমিক) ও একই প্রতিষ্ঠান থেকে আলিম (উচ্চমাধ্যমিক) পাশ করেছি।

উভয় পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। আমার বড় হওয়ার পেছনে পিতা-মাতার অবদান অনস্বীকার্য। কেননা বাবা অতি সাধারণ কৃষক মা গৃহিণী। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও আমাদের সবাইকে শিক্ষিত করেছেন। বাবার কোনো কাজে সাহায্য করতে গেলে তিনি বলতেন, ‘আমার কাজ করুন লাগতো না, তোকে বড় সাইব (বড় অফিসার) হওয়া লাগবে।’ কষ্টের সংসারেও আমার কোনো অভাব রাখেননি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিচারক হওয়া স্বপ্ন ছিল কি?
শফিউল্লাহ লিখন: আমার স্বপ্ন ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার। ছোটবেলা থেকেই টিউশনি করেছি, সেখান থেকেই শিক্ষক পেশার প্রতি ভালোলাগা। আইন বিভাগের প্রথম সারির ছাত্রও ছিলাম। শিক্ষক হতে না পারলেও আইনের ছাত্র হিসেবে আইন পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকতে চেয়েছিলাম। আজ সেটি পূরণ হয়েছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিচারক হওয়ার পেছনে কোন বিষয়টি সবচেয়ে বেশি কাজে লেগেছে?
শফিউল্লাহ লিখন: নিয়মিত পরিশ্রম আমার বিচারক হতে সবচেয়ে কাজে লেগেছে। প্রতিদিন নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করতাম। নবম শ্রেণি থেকেই পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ছিলো। কয়েকবছর টিউশন করার কারণে গণিত ও ইংরেজির বেসিক শক্ত হয়। এগুলো অন্যদের থেকে আমাকে এগিয়ে রেখেছিল।

আরও পড়ুন: শেখা, শেখানো ও গবেষণার ইচ্ছা থেকেই শিক্ষকতায় এসেছি

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কীভাবে পড়ালেখা করেছেন?
শফিউল্লাহ লিখন: ছোটবেলা থেকেই গুছিয়ে পড়ার অভ্যাস ছিল। না বুঝে কখনো কিছু মুখস্থ করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যারদের লেকচার নোট করে পড়তাম। পরীক্ষার আগে রিভাইস দেওয়ার সুবিধার্থে ছোট ছোট কাগজে নোট করে বইয়ের পাশে পিন মেরে রাখতাম। প্রতিদিন পড়ার চেষ্টা করতাম।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিচারক হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর অনুভূতি কেমন?
শফিউল্লাহ লিখন: যখন হাজারো রাত জাগার ফল ও শত প্রচেষ্টার ফলাফল হাতে পাই তখন সেই ভাললাগা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: কয়বার ভাইভা দিয়েছেন এবং কততম ভাইভাতে সফল হয়েছেন?
শফিউল্লাহ লিখন: মোট তিনবার ভাইবা দিয়েছি। এর পূর্বে দুইবার ব্যর্থ হয়েছিলাম। কোনো কিছু না পাওয়ার মাঝেই হতাশা থাকে। আমিও ব্যতিক্রম ছিলাম না। তবে কঠিন সময়ে পরিবারের সবাইকে পাশে পেয়েছি। বিশেষ করে আমার মা আমাকে আত্মবিশ্বাস যোগাতেন। প্রতিবার ব্যর্থ হওয়ার পর নিজের দুর্বলতা খুঁজে তা থেকে উত্তরণের চেষ্টা করেছি। ফলে তৃতীয়বারে সাফল্য অর্জন করি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বিচারক হিসেবে দেশ ও মানুষের জন্য কী করতে চান?
শফিউল্লাহ লিখন: বাংলাদেশ আমার অহংকার। এই দেশ আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। দেশের মানুষের টাকায় আমি পড়াশোনা করেছি। দেশকে অনেক কিছু দেওয়ার আছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে আমার উপর অর্পিত যে দায়িত্ব তা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে অবদান রাখতে চাই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: যারা বিচারক হতে চায় তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
শফিউল্লাহ লিখন: আমার পরামর্শ থাকবে সবার আগে ভালো মানুষ হতে হবে। কারণ অসৎ মানুষ সাময়িক উন্নতি করলেও দিন শেষে তারা পরাজিত। মেধাবী হওয়ার চেয়ে বেশি পরিশ্রমী হতে হবে। আইনের বিষয়গুলো ভালোবেসে ও বুঝে বুঝে পড়তে হবে। সাধারণ বিষয়গুলোও গুরুত্ব দিতে হবে। সফলতার কোন শর্টকাট রাস্তা নেই। দিন যত যাবে প্রতিযোগিতা ও প্রতিযোগীর সংখ্যা ততই বৃদ্ধি পাবে। এজন্য নিজেকে এগিয়ে রাখতে বুদ্ধিদীপ্ত পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দেশের মানুষের বিচার নিশ্চিতে আপনি কী ভূমিকা রাখতে চান?
শফিউল্লাহ লিখন: মানুষ সৃষ্টিকর্তার পরেই পেশাগত দিক থেকে বিচারক ও ডাক্তারদের উপর বেশি আস্থা রাখে সাধারণ মানুষ। আমি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে বিচার প্রার্থীদের আস্থার সেই সঠিক প্রতিদান দিতে চাই। আইনের সুফল জনগণের দোড়গোড়ায় পৌছে দিতে চাই।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
শফিউল্লাহ লিখন: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিও শুভ কামনা রইলো।


সর্বশেষ সংবাদ