সরকার সহায়তা দিলে আইইউটির আরেকটি ক্যাম্পাস করতে চাই

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম  © টিডিসি ফটো

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম একজন শিক্ষাবিদ। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নেভাল আর্কিটেকচার ও মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক এবং গাজীপুরে অবস্থিত ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্প্রতি তিনি তার ব্যক্তিগত জীবন, বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ভাবন ও সমসাময়িক বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। তার কথাগুলো শুনেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের—তাওফিকুল ইসলাম হিমেল

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: ছোটবেলায় সবার স্বপ্ন থাকে। তখন কিসের স্বপ্ন দেখেছিলেন?
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম: স্বপ্ন ছিলো প্রকৌশলী হবো। তবে সেটা কোন প্রকৌশলী হবো তা জানা ছিলো না। আলহামদুলিল্লাহ বুয়েটে যখন চান্স পেলাম তখন আমার মেরিট ছিলো ২৪৫। ২৪৪ মেরিট ছিলো বন্ধু শফিকের, ও ইইই পেলো আর আমি পেলাম নেভাল আর্কিটেকচার! তা নিয়ে অনেক মন খারাপ হয়েছিল। ইইইতে অনেক সিট খালি ছিলো। তবে একটা নির্দিষ্ট সময় পরে আর বিষয় বদলানো যায় না। আমার শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছেও ছিলো। কারণ আমার নানা কোলকাতার  একজন শিক্ষক ছিলেন। আর মামা প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: বাবা-মায়ের স্বপ্ন কী ছিলো আপনাকে নিয়ে?
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম: বাবা-মা সব সময়ই চাইতেন যেন ভালো একজন মানুষ হই। তা সেটা যেখানে পড়াশোনা করেই হই না কেন। যেহেতু পড়াশোনায় ভালো করছিলাম তাই তারা আশাবাদি ছিলেন—যে জীবনে ভালো কিছু করবো।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আইইউটি নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম: আমি যখন আইইউটির পার্টটাইম টিচার ছিলাম আমি তখনই বুঝতে পেরেছি এটার অনেক পটেনশিয়াল আছে। এটা ওআইসি  কর্তৃক পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক, মাল্টি কালচারালাল,পলেটিক্স ফ্রি বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে কোয়ালিটি ইডুকেশন প্রোভাইড করে এটাকে পৃথিবীর বুকে তুলে ধরা সম্ভব। যেটার জন্যই আমি প্রথমদিন থেকেই কাজ করে যাচ্ছি। আমরা গ্লোবাল ম্যাপে আমাদের আইইউটিকে তুলে ধরতে চাই।
 
আলহামদুলিল্লাহ, আমরা গত বছর QS Asia Ranking-র‍্যাংকিংয়ে একটি কো-অর্ডিনেট পেয়েছি। এবছর আশা করছি, আরো একটু ভালো করবো। আমাদের শিক্ষার্ধীদের ডিগ্রি যেনো বিশ্ব স্বীকৃত হয় তা নিয়ে কাজ করছি। পাশাপাশি আমরা কোয়ালিটি কালচার ডেভেলপ করব আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি সবচেয়ে খুশি আমার শতভাগ শিক্ষক আগ্রহী আউটকাম বেসড ইডুকেশন দিতে। শিক্ষকদের মোটিভেশনের জন্যও আমরা যথেষ্ট কাজ করে যাচ্ছি। চেষ্টা করছি বিশ্ববিদ্যালয়কে পুরোপুরি আবাসিক করার জন্য।

এছাড়া ইন্টান্যাশনাল ফ্যাকাল্টি ও শিক্ষার্থী বাড়ানোরও চেষ্টা করছি। আমরা কোয়ালিটি স্টুডেন্ট ভর্তি করছি। আমাদের ১ম লক্ষ্যই হলো কর্ম উপযোগী গ্রাজুয়েট তৈরি করা। আমাদের ছেলে-মেয়েরা গ্র্যাজুয়েশনের প্রথম দিন থেকেই তার নিজ নিজ কর্মস্থলে যেন অবদান রাখতে পারে এবং প্রথমদিন থেকেই তাদের সঙ্গে দেশ-বিদেশের যেকোনো ভার্সিটির গ্রাজুয়েটদের পার্থক্য ফুটে উঠবে ইনশাল্লাহ।

আমরা এভাবে এগোতে চাই যে, ইন্ডাস্ট্রি ও একাডেমিকের মধ্যে বন্ধনটা অনেক ভালো হবে। আমাদের প্রতিটি প্রোগ্রামের জন্য আমরা ইন্ডাস্ট্রি থেকে ইনপুট নেই। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল এডভাইসরী প্যানেল রয়েছে। আমাদের বেশীর ভাগ শিক্ষক ক্যাম্পাসে থাকতে পারেন না। যার ফলে সন্ধ্যার আগেই বিশ্ববিদ্যালয় বেশ নীরব হয়ে যায়। আমার ইচ্ছে তাদের থাকার জন্য একটা সুন্দর জায়গা করে দিয়ে যাওয়া।

আরও পড়ুন: দেশেই আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন আইইউটি শিক্ষার্থীরা

আইইউটিতে আরো ২টি প্রোগ্রাম খোলার ইচ্ছে আছেঃ একটি  আর্কিটেকচার যেখানে ইসলামিক আর্কিটেকচারকে প্রাধান্য দেয়া হবে আর অন্যটি বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। আইডিবি থেকে যে সফট লোন পাওয়ার চেষ্টা চলছে সেটা থেকে  যে অর্থ পাবো সেটা দিয়ে আরো একটি একাডেমিক বিল্ডিং, ছাত্রদের হল এবং শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন করবো ইনশাল্লাহ। যদি বাংলাদেশ সরকার আমাদের সহায়তা করে তাহলে নতুন একটি ক্যাম্পাস করার ইচ্ছে আছে আমাদের গভার্নিং বোর্ডের।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আইইউটিতে উপাচার্য হিসেবে যুক্ত হওয়ার পর আপনার সবচেয়ে বড় সফলতা কোনটি?
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম: নিজে একা কাজ করে সফলতা পাওয়া বেশ কঠিন। সফলতা পেতে হলে দলগত কাজ করতে হয়। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সবদিক দিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ । আমাদের সকল ফ্যাকাল্টি মেম্বার এডমিনিষ্ট্রেশনের প্রতি লয়াল এবং শিক্ষার্থীরাও খুব লয়াল।

তাছাড়া গতবার আমরা QS Asia Ranking-এ জায়গা পেয়েছি। রিসার্চ কালচার, কোয়ালিটি কালচার এগুলো আমাদের এখানে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান করে ফেলেছি এবং সে অনুযায়ী আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: সংক্ষেপে আপনার অর্জনগুলো শুনতে চাই
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম: আমার ব্যাক্তিগত কোনো অর্জনকে অর্জন মনে করি না। সামষ্টিক অর্জনই আসল অর্জন। আমি একজন সোস্যাল ওয়ার্কার। আমি মানুষের জন্য কাজ করতে ভালোবাসি। ২০১০ সাল থেকে আমি ফোরাম-৮৬ এর প্রেসিডেন্ট। যার মাধ্যমে আমরা শিক্ষা ক্ষেত্রে এবং বেশ কিছু সামাজিক কার্যক্রম করে থাকি। আমার ডিগ্রি বা পুরষ্কারগুলো  প্রকৃত অর্জন নয়। আমার সবচেয়ে বড় অর্জন আমার শিক্ষার্থীদের ভালোবাসা। আইইউটি বা বুয়েট এর আমার সকল শিক্ষার্থীই আমাকে ভালোবাসে।

এমনকি পাশ করে বের হয়ে বড় বড় চাকরি করছে আমার শিক্ষার্থীরা। তারা এখনো আমার খোজ রাখে। এর থেকে বড় অর্জন আর কি হতে পারে? আমার ফ্যাকাল্টি মেম্বাররাও অনেক ভালোভাসেন আমায়। আমার বন্ধুরা আমাকে অনেক বিশ্বাস করে। সিনিয়ররাও অনেক ভালোবাসে আমায়। এগুলোই আমার অর্জন।

বুয়েটের কথা বললে বলতে হয়, আমার ইচ্ছে ছিলো প্রকৃত এবং যুগোপযোগী শিক্ষা দিতে ডিপার্টমেন্ট এর ফ্যসিলিটি বৃদ্ধি করা; আলহামদুলিল্লহ আমরা সকলে মিলে পেরেছিও। আমাদের ডিপার্টমেন্ট এখন যে কোন ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে তুলনীয়। বুয়েটে আমার দুটো বেবি আছে। একটি হলো আমার ডিপার্টমেন্টে একটি ল্যাব করার স্বপ্ন দেখতাম যেটি না থাকলে নেভাল আর্কিটেকচারে প্রকৃত শিক্ষা দেয়া সম্ভব নয় এবং আলহামদুলিল্লাহ সরকারের সহযোগিতায় আমরা পেরেছি ল্যাবটি করতে। এই ডিসেম্বরেই সেটা উদ্বোধন হবে ইনশাল্লাহ। আরেকটি হলো IQAC, যেটার মাধ্যমে কোয়ালিটি এডুকেশন, এক্রিডিটিশন এবং র‍্যাংকিং-এর কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের নিয়ে নানান সময় নানান কথা শোনা যায়। এসব কারণে সম্প্রতি একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিদায়টাও ভালোভাবে হয়নি। এটা কেন?
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম: সকল উপাচার্যই তার প্রতিষ্ঠানের ভালো চান। তবে পারিপার্শিক পরিস্থিতির কারণে তাদের এভাবে বিদায় নিতে হয়। আমার মনে হয় না কোনো উপাচার্য তার প্রতিষ্ঠানের খারাপ চান।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: চলার পথে উল্লেখযোগ্য এমন ঘটনার কথা বলুন, যেটা আগে কোথাও বলা হয়নি।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম: আমার ছেলে সবসময় একটি কথা বলে যে, বাবা আমি তোমাকে নিয়ে একটি ছবি আঁকবো। যেখানে তোমাকে আমি একটি ঘোড়ার সাথে তুলনা করি। যে ঘোড়াটিকে অনেক জন মিলে ধরে রাখতে চাইছে তবে সকলকে উপেক্ষা করে ঘোড়াটি সামনের দিকে ছুটছে।

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম: দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের জন্যেও শুভ কামনা রইলো।


সর্বশেষ সংবাদ