ড্রোনের নিরাপত্তায় ব্লকচেইনের ব্যবহার: কুবি শিক্ষক ইমরানের নতুন উদ্ভাবনের হাতছানি

মো. ইমরান হোসেন
মো. ইমরান হোসেন  © টিডিসি ফটো

প্রযুক্তির বিকাশে ড্রোন বা পাইলটবিহীন উড়োজাহাজের (UAV) ব্যবহার আজ আর কেবল সামরিক বাহিনীর গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নেই। আকাশপথে পরিবহন, খাদ্য সরবরাহ, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা, এমনকি ট্যাক্সি পরিষেবার মতো ক্ষেত্রেও ড্রোন ব্যবহারের সম্ভাবনা দিন দিন বাড়ছে। তবে এর সঙ্গে নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগও বাড়ছে।

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ড্রোন নেটওয়ার্কে ব্লকচেইন প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে কাজ করছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও প্রকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও গবেষক মো. ইমরান হোসেন। বর্তমানে তিনি শিক্ষা ছুটিতে থেকে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস-এ (UNSW) পিএইচডি গবেষণায় নিয়োজিত।

ইমরান হোসেন ড্রোন নেটওয়ার্কে ব্লকচেইন প্রযুক্তি সংযুক্ত করার মাধ্যমে সাইবার আক্রমণ, ডেটা চুরি এবং অবৈধ নজরদারি প্রতিরোধের সম্ভাব্য সমাধান খুঁজছেন।

ইমরান হোসেন বলেন, ‘ব্লকচেইন প্রযুক্তির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এটি অনুমতি সাপেক্ষে ব্যবহারযোগ্য, কপি করা যায় না এবং সংরক্ষিত ডেটা পরিবর্তন করা অসম্ভব। এটি একটি বিকেন্দ্রীভূত ব্যবস্থা, যেখানে কেন্দ্রীয় কোনো সিস্টেম ছাড়াই ড্রোন পরিচালনা করা যায়।’

ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ড্রোনগুলো টোকেনের মাধ্যমে ইন্টারনেট, চার্জিং স্টেশন কিংবা অন্যান্য পরিষেবা পেতে পারে। এর ফলে ড্রোন নেটওয়ার্কে স্বচ্ছতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

তবে নিরাপত্তা নিশ্চিত না করতে পারলে ড্রোন নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি তৈরি হয়। হ্যাকিং, অবৈধ নজরদারি, সামরিক বা গবেষণা ডেটা চুরি ইত্যাদি ঝুঁকি ড্রোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।

ইমরান হোসাইন বর্তমানে ড্রোন নেটওয়ার্কে সংঘর্ষ শনাক্তকরণ এবং এড়িয়ে যাওয়ার প্রযুক্তি উন্নয়নেও কাজ করছেন। তার মতে, ব্লকচেইন ড্রোন নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা, স্কেলেবিলিটি এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ‘ব্লকচেইনের গুরুত্ব শুধু আর্থিক লেনদেনে সীমাবদ্ধ নয়। ড্রোন প্রযুক্তিতে এটি নিরাপত্তার এক নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে।’

ইমরান আশা করছেন, তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে তার গবেষণার ফলাফল বাস্তবে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে। তবে এর সফলতা নির্ভর করবে শিল্পের গ্রহণযোগ্যতা এবং নিয়মকানুনের ওপর।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আমাদের কাজটি মূলত একটি আইস ব্রেকিং উদ্যোগ। এর মাধ্যমে তরুণ গবেষকরা নতুন গবেষণায় অনুপ্রাণিত হবে এবং ধীরে ধীরে ড্রোন প্রযুক্তিতে ব্লকচেইনের ব্যবহার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’

ব্লকচেইন প্রযুক্তির সঙ্গে ড্রোনের সীমিত সম্পদ ব্যবস্থার সামঞ্জস্যতা এবং কম্পিউটেশনাল ওভারহেড কমানোর বিষয়টি এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে এ প্রযুক্তি ড্রোনের প্রমাণীকরণ, লেনদেনের নিরাপত্তা এবং সাইবার আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম বলে প্রমাণিত হয়েছে।

ড্রোন প্রযুক্তিতে ব্লকচেইনের সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী ইমরান মনে করেন, সঠিক বিনিয়োগ এবং নিয়ন্ত্রণ সংস্থা  পেলে ড্রোন শিল্পে ব্লকচেইন এক বিপ্লব আনতে পারে।

জানা গেছে, মো. ইমরান হোসেন বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস (UNSW)-এ ব্লকচেইন-সক্ষম UAV নেটওয়ার্ক নিয়ে গবেষণা করছেন। গবেষণার পাশাপাশি তিনি অস্ট্রেলিয়ার শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে (যেমন UNSW, ANU, এবং ACU) ক্যাজুয়াল অ্যাকাডেমিক হিসেবে শিক্ষকতা করেছেন।

আইইইই এসিটি সেকশন-এর ইয়াং প্রফেশনাল চেয়ার হিসেবে ২০২৪ এবং ২০২৫ সালে তার নেতৃত্ব প্রমাণ করেছে যে তিনি অ্যাকাডেমিক ও প্রযুক্তিগত অঙ্গনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। ইমরান তার মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন সুইডেনের 
ব্লেকিং ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (BTH) থেকে এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন বাংলাদেশে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা ও গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

এছাড়াও আইইইই এসিটি ইয়াং প্রফেশনাল চেয়ার হিসেবে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং এবং প্রযুক্তি ক্ষেত্রে তরুণ পেশাজীবীদের সম্পৃক্ত করা, জ্ঞান বিনিময় প্রচার করা এবং উদ্ভাবন ও সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইভেন্ট আয়োজন করেছেন।


সর্বশেষ সংবাদ