স্কুলের চেয়ে কলেজে আসন বেশি, ফাঁকা থাকবে প্রায় ৮ লাখ
চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যত শিক্ষার্থী পাস করেছে, তারা সবাই যদি একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়, তারপরও প্রায় আট লাখের মত আসন খালি থাকবে। স্কুলের চেয়ে কলেজে আসন সংখ্যা বেশি হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (০১ ডিসেম্বর) ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আসনের এ তথ্য জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) তথ্য বলছে, সারাদেশে একাদশ শ্রেণিতে আসন ২৫ লাখ। এর মধ্যে রাজধানীতেই রয়েছে ৫ লাখের বেশি আসন। এবার মাধ্যমিকে ১১টি বোর্ড মিলে পাস করেছে ১৭ লাখ ৪৩ হাজার ৬১৯ জন। সে হিসাবেও অন্তত সাড়ে ৭ লাখ আসন খালি থাকবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৬৫৩ জন। কিন্তু ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে একাদশ শ্রেণিতে আসন আছে ৫ লাখের বেশি। এ রকম অন্য শিক্ষা বোর্ডগুলোতেও পাস করা শিক্ষার্থীর চেয়ে একাদশ শ্রেণিতে আসন বেশি আছে।
আরও পড়ুন: দোয়াপ্রার্থী সেই পাঁচ শিক্ষার্থীর চারজন পেল জিপিএ-৫
শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, সারাদেশে মানসম্পন্ন কলেজের সংখ্যা প্রায় ২০০। এতে আসনসংখ্যা এক লাখের কাছাকাছি। এসব কলেজেই শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি। তবে সারা দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকে রাজধানীর দিকে। ঢাকায় মানসম্পন্ন কলেজের সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০টি।
এসব কলেজের যাদের স্কুল সংযুক্ত রয়েছে, তারা তাদের নিজস্ব শিক্ষার্থী ভর্তির পর বাকি আসনে বাইরের শিক্ষার্থী ভর্তি করবে। ফলে রাজধানীর ভালো কলেজে ৩০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ নেই। অথচ জিপিএ ৫ পাওয়া প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতেই থাকবে রাজধানীর নামীদামি কলেজ।
এদিকে, শিক্ষাপঞ্জি অনুসারে প্রতি বছরের ১ জুলাই থেকে একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু এবার করোনার প্রাদুর্ভাব ও বন্যার কারণে পরীক্ষাই শুরু হয়েছে গত ১৫ সেপ্টেম্বর। আর ফল প্রকাশ হয়েছে ২৮ নভেম্বর। ফলে শিক্ষার্থীরা ইতিমধ্যেই ৫ মাসের সেশনজটের মধ্যে আছে, যা আরও বাড়বে।
আরও পড়ুন: এসএসসির ফলাফলে বাবা-ছেলে সমানে সমান
জানা যায়, এবারও ক্যাথলিক চার্চ পরিচালিত রাজধানীর নটর ডেম কলেজ, হলিক্রস কলেজ, সেন্ট জোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সেন্ট গ্রেগরি কলেজ ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে চায়। আগের বছরগুলোর মতো এ বছরও তাদের নিজস্ব প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী ভর্তিতে অনুমোদন দিতে পারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ৮ ডিসেম্বর। চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এবারও একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে। ভর্তির জন্য কোনো পরীক্ষা হবে না। অনলাইনে হবে ভর্তির কাজটি।
এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন গ্রহণের এই তারিখসহ অন্যান্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি অনলাইনে সভায় যোগ দেন। বাকিরা সশরীর সভায় যোগ দেন। বৈঠকে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকারও উপস্থিত ছিলেন।
তিনি বলেন, উচ্চমাধ্যমিকে আসনের কোনো সংকট নেই। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সব শিক্ষার্থীই ভর্তি হতে পারবে। এরপরও অনেক আসন খালি থাকবে। তবে সারা দেশের জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকেরই পছন্দের কেন্দ্রবিন্দু রাজধানীর কিছু কলেজ। পছন্দের এসব কলেজে ভর্তি হতে অনেককেই বেগ পেতে হবে। এ জন্যই শিক্ষার্থীরা যদি অনলাইন আবেদনের সময় ১০টি কলেজ পছন্দ করে, তাহলে তাদের পছন্দের কলেজ খুঁজে দিতে সুবিধা হবে।
উচ্চমাধ্যমিকের আসন নিয়ে কথা বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিও। ফল প্রকাশের দিন গত সোমবার শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি যে পদ্ধতিতে হয়, এ বছরও সে পদ্ধতিতেই হবে। সেখানে কোনো ব্যত্যয় হবে না। আর ভর্তিতে আসনসংকট হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ, যত শিক্ষার্থী পাস করে, তার চেয়ে আসনসংখ্যা অনেক বেশি আছে।