২৯ জুন ২০২৫, ১৮:৪৭

তৃতীয় পক্ষ ছাড়া মেলে না ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউ

হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)  © সংগৃহীত

রোগীর বাঁচা-মরার শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ)। রোগীর জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা সেই আইসিইউ বেড ঘিরে চলে গোপন দৌড়ঝাঁপ। পরিবেশটা এমন যে সরাসরি নয়, বরং বর্তমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) আইসিইউ মিলছে অনেকটা থার্ড-পার্টির মাধ্যমে। ইমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ে ৪১, নতুন বিল্ডিংয়ে ২১ ও বার্ন ইউনিটে ২০—মোট ৯৪টি আইসিইউ বেড নিয়ে চলছে হাসপাতালটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেবার কাজটি। 

আইসিইউতে ভর্তি হওয়া রোগীর স্বজনদের ভাষ্য, `অনেক সময় গুরুতর অবস্থার রোগীদের জন্য আইসিইউ দরকার হলেও সিট পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা গরিব মানুষ, টাকা ছাড়া অনেক জায়গায় দৌড়ঝাঁপ করি কিন্তু লাভ হয় না। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে সেই সব লোকদের দ্বারস্থ হতে হয়, যারা হাসপাতালের ভেতরের অনেকের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রাখে। তারাই মূলত আইসিইউ বেড ম্যানেজ করে দেয়। অনেক সময় আইসিইউ বেড নিয়ে ‘ওপর থেকে চাপ’ এলে সহজেই সিট মিলে যায়। অথচ সাধারণ রোগীর স্বজনরা দিনের পর দিন দৌড়ঝাঁপ করেও তা অনেক সময় পান না। এতে তৈরি হয় বৈষম্য। এরই মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে দালালদের খপ্পরে পড়ার মতো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে।

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় করোনায় কোনো মৃত্যু নেই, তবে আক্রান্ত বেড়েছে

চাঁদপুর থেকে আসা এক রোগীর স্বজন রজব আলী বলেন, `ঢাকা মেডিকেলে আইসিইউ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আমার স্বজনকে গত ১৪ জুন আইসিইউতে ভর্তি করানো হয়েছে। তার আগে আমাকে অনেক দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছিল। রোগীকে নিয়ে টানা ১৫ দিন ধরে হাসপাতালে আছি, কতদিন থাকতে হবে তা-ও জানি না। এখন পর্যন্ত প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। নার্ভের সমস্যা নিয়ে অপারেশনের পর তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।'

ব্রেনের সমস্যায় আক্রান্ত এক রোগীর স্বজন তামিম বলেন, `আমরা আর্থিকভাবে দুর্বল। প্রথমে তিন-চার দিন অনেক চেষ্টা করেও আইসিইউ পাইনি। পরে এক পরিচিত লোকের মাধ্যমে যোগাযোগ করি, যিনি হাসপাতালের কিছু লোকজনকে ম্যানেজ করে সিটের ব্যবস্থা করে দেন। অনেক কষ্টে সিট পেলেও এর মধ্যে আমাদের খরচ প্রায় এক লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।'

হাসপাতালসূত্রে জানা গেছে, ঢামেকের অপারেশন থিয়েটার বা ওটির সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। এটি প্রতিদিন নানা ধরনের সার্জারির জন্য ব্যবহৃত হয়। আইসিইউ সেবার ক্ষেত্রে হাসপাতালটির রয়েছে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত ইউনিট। ওএসইসি (One Stop Emergency and Casualty)–এর অধীনে ইমার্জেন্সি আইসিইউ বেড রয়েছে ১২টি। এখানে সর্বাধিক জরুরি অবস্থার রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। 

আরও পড়ুন: তিনবার বদলির সুযোগ পাবেন কারিগরি শিক্ষকরা, নীতিমালা দেখুন এখানে

সূত্র আরও জানায়, পুরাতন ভবনের ৪র্থ তলায় ইমার্জেন্সি বিল্ডিংয়ের ওপরে মোট ৪১টি আইসিইউ বেড রয়েছে। এর মধ্যে ৩১টি বেড রয়েছে একটি সেলে, যেখানে সব ধরনের রোগী ভর্তি করা হয়। তবে এখানে কোনো কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী ভর্তি করা হয় না। অন্যদিকে ১০টি বেড রয়েছে এইচডিও (High Dependency Unit)-এর ভেতরে যা মূলত সার্জারি রোগীদের জন্য সংরক্ষিত। বর্তমানে এই ইউনিটে কোনো আইসিইউ বেড বিকল বা অকার্যকর নয়—সবগুলো বেডই সচল ও ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় রয়েছে। বার্ন ইউনিটে রয়েছে ২০টি বেড এবং নতুন ভবনে রয়েছে আরও ২১টি আইসিইউ বেড। সব মিলিয়ে মোট আইসিইউ বেডের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৪টি। 

এসবের পাশাপাশি নবজাতকদের জন্য রয়েছে NICU (Neonatal Intensive Care Unit) এবং শিশুদের জন্য রয়েছে PICU (Pediatric Intensive Care Unit), যা শিশু ও সদ্যোজাতদের জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসায় বড় ভূমিকা রাখে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ডাক্তাররা সাধারণত আইসিইউ ভর্তি সংক্রান্ত সিদ্ধান্তে রোগীর বয়সকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হিসেবে দেখেন। অল্প বয়সী রোগীদের ক্ষেত্রে বাঁচার সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি হওয়ায়, এখানে তারা বেশি অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন। অন্যদিকে বয়স বেশি হলে, শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এবং জটিলতা বেশি হওয়ার আশঙ্কায়, অনেক সময় তাদের অগ্রাধিকার কিছুটা কম দেওয়া হয়। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রোগীর শারীরিক অবস্থা, রোগের প্রকৃতি এবং চিকিৎসা সফলতার সম্ভাবনা বিবেচনায় নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: দেশে নিবন্ধিত ইংরেজি মাধ্যম স্কুল ও কলেজের সংখ্যা ১৪৭টি

আইসিইউ রোগীদের সার্বিক অবস্থা ও সেবা প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চাইলে আইসিইউ কনসালটেন্ট চিকিৎসকরা মন্তব্য করতে অনীহা প্রকাশ করেন। দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতেও তারা অপারগতা প্রকাশ করেন।

এসব বিষয়ে জানতে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পরিচালকের দপ্তরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।