এক ব্যক্তির নামে কয়টি সিম থাকবে, জানাল বিটিআরসি
একজন গ্রাহক এখন থেকে নিজের নামে সর্বোচ্চ ১০টি সিম নিতে পারবেন। এত দিন জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্মনিবন্ধন সনদ ও পাসপোর্ট দিয়ে সব অপারেটর মিলিয়ে ১৫টি সিম নেওয়া যেত। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এই সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিটিআরসি জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক অনুশীলন এবং জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ বিবেচনা করে একজন গ্রাহকের নামে সর্বোচ্চ নিবন্ধনযোগ্য সিম সংখ্যা ১৫ থেকে দশে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
সংস্থাটি আরও জানায়, সর্বোচ্চ ১০টি ব্যক্তিগত সিম নিবন্ধনের সীমা নির্ধারণ করা হলে প্রায় ২৬ লাখ গ্রাহকের মোট ৬৭ লাখ সিম বন্ধ করতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের পরিচালক লে. কর্নেল মুহম্মদ রাশেদুজ্জামান (পিবিজিএমএস, পিএসসি, সিগন্যালস) দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক চর্চা ও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের আশেপাশে সিমের সংখ্যা এত বেশি না, অনেক কম। অনেক দেশে দুই-তিনটাও আছে। নানা কারণে আগে আমাদের দেশে ১৫টা সিম ছিল। অনেকে এত সিম ব্যবহার করে না। অনেক সময় গ্রাউন্ড লেভেলে সিম যারা বিক্রি করে, তারা একজনের নামে ২০ টাকা, ৩০ টাকা দিয়ে সিম করায় তার নামে ১৫টা সিম হয়ে গেল। এই ১৫টার মধ্যে তিনি ১টা সিম ব্যবহার করেন বাকি ১৪টা বিভিন্ন হাতে চলে যায়। এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে দুর্বৃত্তরা অপরাধের কাজগুলো করে থাকে। আমরা এও দেখেছি, যাদের নামে ১৫টা সিম তোলা আছে, সে ক্ষেত্রে কারোরই চার-পাঁচটার বেশি সক্রিয় নেই। তাহলে বাকি সিমগুলো কারও না কারও হাতে আছে, যা একটা বিপজ্জনক ব্যাপার।
আরও পড়ুন : বাকৃবিতে স্নাতকে ভর্তি কার্যক্রম শুরু সোমবার, যা করতে হবে
সিম কমানোর এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কমিশন এ-সংক্রান্ত পর্যালোচনা করেছে। তাদের পর্যালোচনা বলছে, এত বেশিসংখ্যক সিম একজন গ্রাহক ব্যবহার করেন না। পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা, অপারেটরদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং আন্তর্জাতিক অনুশীলন চর্চা বিবেচনায় একজনের নামের বিপরীতে সিম সর্বোচ্চ ১০টি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই পরিচালক বলেন, মাঝেমধ্যে দেখা যায় একজনের নম্বরে হঠাৎ ওটিপি নম্বর আসে, ফোন করে বলে ‘আপনার ওটিপি নম্বরটা আমাকে দেন’, আবার স্ক্যাম কল আসে। এই সব ঘটনা ঘটে বাড়ি সিমগুলো দিয়ে। অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা যখন তদন্ত করতে যাই, তখন দেখা যায় এই গ্রাহক মারা গেছেন বা তিনি তৃণমূলের কোনো গৃহবধূ, বা তিনি দূরের কোনো গ্রামের রিকশাওয়ালা। এ অবস্থায় তার সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করা যায় না। এটা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার জন্য আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উন্নত বিশ্বের মতো আমরা হয়তো দুই-তিনটা সিমে আনতে পারব না, তবে কমিয়ে আপাতত ১০টায় এনেছি। কারণ আমাকে তো পরিবারের উপযুক্ত সদস্যকে সিম দিতে হবে।
বিটিআরসির হিসাবে, গত মার্চ শেষে দেশে সক্রিয় সিমের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ৬২ লাখের বেশি। যদিও এক ব্যক্তির কাছে একাধিক সিম থাকতে পারে। বিটিআরসি বলছে, দেশে নিবন্ধিত প্রকৃত গ্রাহকের সংখ্যা ৬ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৪৫। এর মধ্যে ৮০ দশমিক ৩২ শতাংশ গ্রাহকের নামে ৫টি বা তার কম সিম রয়েছে। ৬ থেকে ১০টি সিম রয়েছে ১৬ দশমিক ২৩ শতাংশ গ্রাহকের কাছে। ১১ থেকে ১৫টি সিম ব্যবহারকারী গ্রাহক মাত্র ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
আরও পড়ুন : ১০ দাবিতে পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরির মালিকদের ধর্মঘট, ভোগান্তিতে চালক-যাত্রীরা
লে. কর্নেল মুহম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, আমরা ১০টি ব্যক্তিগত সিম নিবন্ধনের সীমা নির্ধারণ করা হলে ১১ নম্বর সিম থেকে হিসাব ধরলে প্রায় ২৬ লাখ গ্রাহকের মোট ৬৭ লাখ সিম বন্ধ করতে হবে এবং আমরা এসব সিম ধীরে ধীরে যাছাই-বাছাই করে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
কবে থেকে এ কাজ শুরু হবে এবং গ্রাহকরা কীভাবে জানবে তার কয়টা সিম আছে বা তিনি কতটা রাখতে চান, সেটা কী পদ্ধতিতে হবে? এমন প্রশ্নে লে. কর্নেল মুহম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, অবশ্যই গ্রাহককে আগে ফরমালিটিস জানিয়ে তারপর তিনি কয়টা বা কোন কোন সিম চালু রাখতে চান, সেটা নিশ্চিত করে বাকি সিমগুলো বন্ধ করা হবে। কোনো গ্রাহককে না জানিয়ে তার সিম বন্ধ করা হবে না। এই প্রক্রিয়া মাত্র শুরু হয়েছে। বিষয়টি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে খুবই বিষয়টি প্রক্রিয়াগতভাবে গ্রাহকদের জানিয়ে সম্পন্ন করা হবে।