কোটা সংস্কারের বিরোধিতা করে সমালোচনায় বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার সমিতি
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০১:১৬ PM , আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৪১ PM
দেশব্যাপী চলা কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতির সদস্যদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে শিক্ষা প্রশাসনে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিও-তে দেখা যায়, গত ৪ আগস্ট মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ্য করে নানা ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন শিক্ষা ক্যাডার সমিতির সদস্যরা। বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) কর্মকর্তা বলে জানা গেছে। যদিও শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। তারা বলছেন, মাউশি ভবনের নিচে হট্টগোলের শব্দ শুনে তারা নিচে গিয়েছিলেন। এ সময় অনেকে স্লোগান দিয়েছেন। তবে তারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই কর্মসূচি পালন করেছেন। এখানে সংগঠনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি তাদের।
শিক্ষা ক্যাডার সমিতির দুটি গ্রুপ রয়েছে। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন মাউশির সাবেক পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শাহেদুল খবীর চৌধুরী; তিনি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আরেকটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মামুনুল হক ও মাউশির বর্তমান পরিচালক (মাধ্যমিক) সৈয়দ জাফর আলী। এ গ্রুপটি মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী। তারা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রশাসনের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন।
এ বিষয়ে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার সমিতির সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কোটা সংস্কারের বিপক্ষে সমিতির পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি পালন করা হয়নি। যারা স্লোগান দিয়েছেন কিংবা মিছিল করেছেন, তারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে করেছেন। সরকারি চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী এ ধরনের স্লোগান কিংবা মিছিল করার এখতিয়ার শিক্ষা ক্যাডারদের নেই বলেও জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৪ আগস্ট মাউশি ভবনের সামনে দিয়ে ছাত্র-জনতার একাধিক মিছিল শহীদ মিনারের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় মাউশি এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা ভবনের গেটে অবস্থান নেন। তারা বিভিন্ন রাজনৈক স্লোগান দিতে থাকেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে দেশকে পাকিস্তান বানানোর প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করেন তারা। স্লোগান দেওয়ার সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গালাগালিজ করতে থাকেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষা ক্যাডার সমিতির দুটি গ্রুপ রয়েছে। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন মাউশির সাবেক পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) শাহেদুল খবীর চৌধুরী; তিনি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আরেকটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মামুনুল হক ও মাউশির বর্তমান পরিচালক (মাধ্যমিক) সৈয়দ জাফর আলী। এ গ্রুপটি মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী। তারা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষা প্রশাসনের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। মাউশি ও ডিআইএসহ অন্যান্য কার্যালয়গুলোকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন অভিযোগ করে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য, এ কর্মকর্তাদের হাত থেকে শিক্ষা প্রশাসনকে উদ্ধার করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে কোনো স্লোগান দেইনি। মাউশি ভবনের নিচে সবাইকে জড়ো হতে দেখে আমিও গিয়েছিলাম। ছাত্রলীগের রাজনীতি করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন হলে সিট পেতে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। আমার কোনো পদ-পদবী ছিল না—মনকিউল হাসানাত
মাউশি ভবনের সামনে থেকে তোলা ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভে কালো শার্ট পড়ে এক কর্মকর্তা স্লোগান দিচ্ছেন। তিনি পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের শিক্ষা পরিদর্শক স্বরূপ কুমার কাহালি। বিসিএস ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তা তিনি। এছাড়া মিছিলে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতির দপ্তর সম্পাদক সরকার মো. শফিউল্লাহ দিদারকেও দেখা গেছে। এ কর্মকর্তা বিসিএস ৩৪ ব্যাচের।
ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মুকিব মিয়া (৩১তম বিসিএস), মো: দেলোয়ার হোসেন (২৫তম বিসিএস), বিজয় কুমার ঘোষ (২৪তম বিসিএস), তরিকুল ইসলাম বাবু (৩৫তম বিসিএস), ওয়াইজ করনী (৩২তম বিসিএস), শাহীনূর ইসলাম শাহীন (৩৩তম বিসিএস), আব্দুল করিম (২৮তম বিসিএস), সাদিয়া বন্যা (৩৫তম বিসিএস), মনিরুল আলম মাসুম (২৪তম বিসিএস), কামরুন্নাহার (৩৪তম বিসিএস), কায়েস হোসেন (২৯তম বিসিএস), সুমন বিশ্বাস (৩৪তম বিসিএস), রিপন সরকার (৩৪তম বিসিএস), মো: মেহেদী হাসান (৩৬তম বিসিএস), মিজানুর রহমান (৩৪তম বিসিএস), তাপস কুমার দাশ (৩৩তম বিসিএস), আলমগীর হোসেন (৩০তম বিসিএস) উপস্থিত ছিলেন। তাদের সবাইকে স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্লোগান দেওয়া ও মিছিলে অংশ নেওয়া সবাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরে কর্মরত আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনে তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। যদিও এ কর্মকর্তাদের দাবি, হলে সিট পাওয়ার জন্য তারা ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। তাদের কোনো পদ পদবী ছিল না।
এ বিষয়ে বিক্ষোভ মিছিলে স্লোগান দেওয়া স্বরূপ কুমার কাহালি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষার্থীরা দেশকে পাকিস্তান বানাতে চায়, এমন কোনো স্লোগান আমি দিইনি। অন্য কর্মকর্তাদের মতো আমিও মাউশি ভবনের গেটে অবস্থান করছিলাম। এর বাইরে আর কিছুই করিনি।
মিছিলে অংশ নেওয়া শিক্ষা ক্যাডারের আরেক কর্মকর্তা মনিরুল আলম মাসুম বলেন, আমি মাউশি গেটের সামনে অবস্থান করছিলাম। সেখানে আনসার সদস্যের সাথে শুধু দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি কোনো স্লোগান দেইনি। মিছিলেও অংশ নেইনি।
মোহাম্মাদ মনকিউল হাসানাত বলেন, শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে কোনো স্লোগান দেইনি। মাউশি ভবনের নিচে সবাইকে জড়ো হতে দেখে আমিও গিয়েছিলাম। ছাত্রলীগের রাজনীতি করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন হলে সিট পেতে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। আমার কোনো পদ-পদবী ছিল না।
মিছিলে অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার সমিতির দপ্তর সম্পাদক মো. শফিউল্লাহ দিদারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।