কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যক্রম বিলুপ্ত হলে শিক্ষকদের বেতন থেকে নেওয়া অর্থের কী হবে?

শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও সরকারি লোগো
শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও সরকারি লোগো  © ফাইল ছবি

বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনতে যাচ্ছে সরকার। আগামী জুলাই মাস থেকে শিক্ষকদের পেনশন স্কিমের আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর ফলে শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্ট্রের কার্যক্রম বাতিল হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যক্রম বিলুপ্ত হলে শিক্ষকদের জমানো অর্থের কী হবে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ফেসবুকের একাধিক গ্রুপে। শিক্ষকরা বলছেন, যাদের বেতন থেকে পাঁচ কিংবা দশ বছর বা তারও কম সময় ধরে টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে, তাদের অর্থ কী সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হবে? নাকি এই অর্থ তাদের ফেরত দেওয়া হবে?

বিষয়টি জানতে মঙ্গলবার (১১ জুন) দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস কথা বলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান আলম সাজুর সাথে। তিনি বলেন, শিক্ষকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যক্রম চলবে।

আরও পড়ুন: ৫ম গণবিজ্ঞপ্তির প্রাথমিক সুপারিশের ফল যে কোনো মুহূর্তে

এই শিক্ষক নেতা জানান, কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যক্রম বিলুপ্ত করার সুযোগ নেই। সারা দেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া অর্থ এখানে জমা হয়। এই অর্থ শিক্ষকদের বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম চলবে। কাজেই সহজেই কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যক্রম বিলুপ্ত হবে না। এছাড়া এ ধরনের কোনো কথাও সরকারের পক্ষ থেকে তিনি শোনেননি বলে জানান।

সরকার যদি কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যক্রম বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে শিক্ষকদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া অর্থের কী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের কেটে নেওয়া অর্থ বুঝে দেওয়ার জন্যই কল্যাণ ট্রাস্ট। কাজেই এর কার্যক্রম কখনো বিলুপ্ত হলেও শিক্ষকদের অর্থ বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

জানা গেছে, সারাদেশে প্রায় ৩০ হাজার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ৫ লাখের বেশি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। অবসরের পর পেনশন সুবিধা পান না তারা। পুরো চাকরি জীবনে অবসর ও কল্যাণ ফান্ডে বেতন থেকে ১০ শতাংশ। এর মধ্যে অবসর বোর্ড কাটে ৬ শতাংশ ও কল্যাণ ট্রাস্ট কাটে ৪ শতাংশ। অবসরের পর সেই টাকা তুলতে গিয়ে নানা হয়রানিতে পড়তে হয় শিক্ষক-কর্মচারীদের। বিষয়টি সমাধান করতে শিক্ষকদের পেনশন স্কিমের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এটি চালু হলে অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের কার্যক্রম বাতিল হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে কল্যাণ ট্রাস্টে এক বছরে গড়ে আবেদন পড়ে ১৬ হাজার ৮০০ থেকে ১৭ হাজার, যা নিষ্পন্ন করতে প্রয়োজন ৭২০ কোটি টাকা। আর অবসর সুবিধা বোর্ডে বছরে ১০ হাজার ৮০০টি আবেদন পড়ে। এসব আবেদন নিষ্পন্ন করতে প্রয়োজন ১,৩২০ কোটি টাকা। দুই খাতে প্রতিবছর ৫৭০ কোটি টাকা ঘাটতি থাকে। দুই বোর্ডে প্রায় ৬৭ হাজার পেন্ডিং আবেদন নিষ্পত্তি করতে ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রয়োজন।

তহবিল সঙ্কটের কারণে অনেক শিক্ষক-কর্মচারী অবসর নেওয়ার পর তিন-চার বছর পরও প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা পান না। এমন প্রেক্ষাপটে গত ২২ ফেব্রুয়ারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক ও অবসর সুবিধা অবসরের ছয় মাসের মধ্যে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে রায় দেন হাইকোর্ট। 

 

সর্বশেষ সংবাদ