প্রসঙ্গ নতুন শিক্ষাক্রম
নামমাত্র প্রশিক্ষণের ফল ভালো হবে না
- খাঁন মুহাম্মদ মামুন
- প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০৪:০০ PM , আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০৫:০৮ PM
২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে সরকার ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। শুরুতে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম এবং বাকি শ্রেণিগুলোতে ২০২৪ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে এই শিক্ষাক্রম চালু হবে। নতুন এই শিক্ষাক্রমে অতীতের কোনো ধরনের শিক্ষণ (টিচিং), শিখন (লার্নিং) এবং মূল্যায়ন (পরীক্ষা) পদ্ধতির সঙ্গে মিল নেই এর। এজন্য শিক্ষণ-শিখন কার্যক্রম ফলপ্রসূ করতে শিক্ষকদের প্রস্তুত করা জরুরি। কিন্তু নামমাত্র প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে পাঠানো হচ্ছে ক্লাসরুমে।
এর ফলে কোন ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না বলে মনে করেছেন শিক্ষাবিদরা। তাদের মতে, সামগ্রিক বিবেচনায় প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। তবে তা হতে হবে যথাযথ, সময়ের নিরিখ বিচার করতে হবে। কিন্তু এরকম স্বল্প প্রশিক্ষণ দিয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করা যেকোন সেক্টরে একটি অসম্ভব ব্যাপার।
আরও পড়ুন: শিক্ষকদের ১ ঘন্টা প্রশিক্ষণ দিয়ে শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, প্রথমে আমাদের শিক্ষকরা বিষয়ভিত্তিক পাঠদান করছেন কিনা বা করবেন কিনা-সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রমে তা কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাবে তা নিয়ে সংশয় থেকে যায়। তিনি সরকারের এ সিদ্ধান্তকে কোনোভাবেই ইতিবাচক বলতে চাচ্ছেন না; এটি একটি অপরিপক্ব সিদ্ধান্তের উদাহরণ-যুক্ত করেন অধ্যাপক ড. এস এম হাফিজুর রহমান।
এই অধ্যাপক সমাধান হিসেবে মনে করেন, শিক্ষাকে এভাবে কম বাজেটে রাখার সুযোগ নেই। এখানে সমন্বয় করতে হবে; বাজেট বাড়াতে হবে। আর শিক্ষানীতি ও শিক্ষাক্রমে আমরা শুরু থেকেই নানা রকম সমস্যা দেখছি তার সমাধান হওয়া দরকার; আমাদের শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করা দরকার। তার জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ দরকার। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্টদের সাথে সমন্বয় করা দরকার। সরকারের দক্ষ জনগোষ্ঠী বানানোর লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য যারা কাজ করবে সে শিক্ষকদের কতটুকু দক্ষতা রয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের সবার আগে প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য কোন শিক্ষাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করতে অর্থ প্রাপ্তির বিষয়টি সবার আগে নিশ্চিত করতে হবে।
অর্থনীতিবিদ, উন্নয়ন চিন্তাবিদ ও জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, যার যেটা দরকার, সে হিসেবে হতে পারে। দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়টি শিক্ষানীতিতেও ছিল। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এতে সমন্বয় করবে। আমাদের কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনে আরও বেশি সমন্বয় করতে হবে। সেজন্য আমাদের শিক্ষকদের দক্ষ করতে হবে; দক্ষ হতে হবে।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আপাতত শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ অনলাইনে শুরু হলেও শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়টি সরকার আরও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে এবং তা চলমান থাকবে।
জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটি ও শিক্ষা আইন প্রণয়ন কমিটির সদস্য এবং প্রবীণ শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, দক্ষতা উন্নয়ন কোন সুইচ নয় যে আমি তা চালু করে দিলাম আর তা বাস্তবায়ন হয়ে গেল। প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নাই; পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দেবার ক্ষেত্রে মনিটরিং করতে হবে তা কতটা কাজে আসছে সময়ের সাথে। এটাকে হালনাগাদ করতে হবে। যারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তাদেরও দক্ষতা থাকতে হবে।
প্রবীণ এই শিক্ষাবিদ মনে করেন, বাস্তবতা, দক্ষতা-অদক্ষতা এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে বয়সও একটি বড় বিষয় বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, এরকম হুটহাট সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বল্প প্রশিক্ষণ দিয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হবে না। তার মতে, সামগ্রিক বিবেচনায় প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। তবে তা যথাযথ হতে হবে, সময় দিতে হবে এবং বাস্তবতা ও সময়ের নিরিখ বিচার করে কাজ করতে হবে।