ঢাকা ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেন বারবার মারামারি হয়, সাবেক শিক্ষার্থীর ব্যাখ্যা

ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ
ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ  © সংগৃহীত

রাজধানীর দুই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপীঠ ঢাকা সিটি কলেজ ও ঢাকা কলেজ। কয়েকদিন পর পরই দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মারামারিতে লিপ্ত হন। সায়েন্স ল্যাব ও নিউমার্কেট এলাকা যেন হয়ে ওঠে রণাঙ্গন।   বারবার কেন তাদের মধ্যে সংঘাত বাধে, কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছেন সিটি কলেজের সাবেক ছাত্র কবি ও সাংবাদিক শোয়েব সর্বনাম।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) শোয়েব সর্বনাম তার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে কিছু কারণ তুলে ধরেছেন। 

শোয়েব সর্বনাম লিখেছেন, সিটি কলেজের স্টুডেন্ট হিসেবে ঢাকা কলেজ আর সিটি কলেজের গ্যাঞ্জামগুলো আমিও দেখে আসছি। গ্যাঞ্জাম মানে মারপিট। আমাদের সময় এই মারপিটের পরিসর অনেক বড় হতে শুরু করে। 

তিনি আরও লিখেছেন, তখন থেকেই ধানমন্ডি আইডিয়ালের পোলাপানরাও এসব গ্যাঞ্জামে যুক্ত হতে রাজি হয়। ইম্পিরিয়াল নতুন হয়েছে। তাদেরও অনেক আগ্রহ। রাইফেলসের পোলাপানরাও গ্যাঞ্জামে যুক্ত ছিল। 

তিনি আরও লিখেছেন, তবে তারা এখনকার পোলাপানদের মত রাস্তায় নেমে যেত না। তখনকার রণক্ষেত্র ছিল ধানমন্ডি লেক। একেক কলেজের একেকটা দল লাঠিসোটা নিয়ে লেকের একেক অংশ দিয়ে প্রবেশ করতো এবং একটা স্পট বেছে নিয়ে সবাই মিলে ধুমছে মারামারি করতো। 

তিনি লিখেছেন, ক্লাসের সবাই তো আর মারামারি করবে না। এসব কলেজে প্রতিটা ক্লাসের দুই একজন করে আছে যারা সবসময় ক্ষেপে থাকে। ক্লাস করে না। কলেজের গেটের উল্টাপাশে কুয়াকাটা হোটেলে বসে বসে চা, সিঙ্গারা ও সিগারেট খায়। তাদের সামনে অন্য কলেজের কেউ সিগারেট খাইলে বা আপনি করে না বললে তারা আরো ক্ষেপে যাবে। সেখানেই কানের তলে দুয়েকটা দিয়ে দিবে। 

তারপর অন্য কলেজের সেই বেয়াদব ছেলে আবার দলবল নিয়ে আসে এরে মারতে। এই দলগুলাই আস্তে আস্তে বড় হয়। স্থানীয় পোলাপান যে বছর যে কলেজে বেশি থাকে সে বছরের গ্যাঞ্জামগুলাতে ওই কলেজটাই জিতে যায়। ধানমন্ডির পোলাপানরা একটু ঘাউড়া। 

ফলে, এই কলেজগুলাতে পড়ালেখা করার অভিজ্ঞতা যাদের নাই, তারা গ্যাঞ্জামের কারণ জীবনেও বের করতে পারবেন না। 

এখন তো ঢাকা কলেজ সিটি কলেজ ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজ ইম্পিরিয়াল কলেজ আলাদা আলাদা পক্ষ হয়ে উঠছে। একই দিনে ত্রিমুখি মারামারি চলে। তবে রাইফেলসের পোলাপানরা এখন মনে হয় ভাল হয়ে গেছে। অনেকদিন ধরে তাদেরকে আর গ্যাঞ্জামগুলাতে দেখি না।

ধানমন্ডি লেকের মাঝখানে ছোট দ্বীপে একটা ওয়াচ টাওয়ার আছে। সেখান থেকে লক্ষ্য রাখা যেত কোন পক্ষ কোন দিক দিয়ে ঢুকতেছে। এখন সেখানে চটপটির দোকান হইছে। এছাড়াও লেকের নানাখানে দোকানপাট বসায় দিছে। সেখানে আর মারামারি করা যাচ্ছে না। অনেকটা বাধ্য হয়েই পোলাপানদেরকে রাস্তা বন্ধ করে মারামারি করতে হচ্ছে। লোকেদের ডিস্টার্ব করার কোন উদ্দেশ্য তাদের নাই। মারামারি শেষ করে ওরা সবাই বাসায় চলে যায়। 

তিনি শেষে রসিকতা করে লিখেছেন, আমার প্রস্তাব হচ্ছে, গ্যাঞ্জামের জন্য উদ্যান বা কোন ময়দান নির্ধারন করে দেয়া যেতে পারে। বছরে একটা নির্দিস্ট দিনক্ষণ বেছে নিয়ে ধানমন্ডি লেকের দুয়েকটা স্পট তাদের জন্য বরাদ্দ দিতে হবে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে।

সেক্ষেত্রে ডিএমপি থেকেও অনুমোদনের প্রশ্ন চলে আসবে। লাঠিসোটা ছাড়া অন্য অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। প্রতিপক্ষকে খুব বেশি মাত্রায় আঘাত করা যাবে না। লাঠির মাপ ও ওজন ঠিক করে দিবে বুয়েটের লোকেরা। এসব শর্তে সামনে রেখে ডিএমপির পক্ষ থেকে গ্যাঞ্জামের অনুমোদন দেয়া যেতে পারে। অদূরে একটা ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প থাকতে পারে। লাঠি ও মেডকেল ক্যাম্পের স্পন্সর পাওয়া যাবে। ভিন্ন ভিন্ন কলেজের পোলাপানদের ভিন্ন ভিন্নকালারের টি শার্টও করা যেতে পারে। 

 


সর্বশেষ সংবাদ