কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল পরীক্ষা

‘টপ ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ পুরস্কার পেল বাংলাদেশি ৯ শিক্ষার্থী

‘টপ ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ পুরস্কার পেল বাংলাদেশি ৯ শিক্ষার্থী
‘টপ ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ পুরস্কার পেল বাংলাদেশি ৯ শিক্ষার্থী  © টিডিসি ফটো

চলতি বছরের জুনে অনুষ্ঠিত ক্যামব্রিজ পরীক্ষা সিরিজে অসাধারণ অ্যাকাডেমিক নৈপুণ্যের জন্য কেমব্রিজ অ্যাসেসমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশনের (কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল) ‘টপ ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশের ৯ জন কৃতি শিক্ষার্থী। এ উপলক্ষে শুক্রবার (০৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর বসুন্ধরায় অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে দেশব্যাপী স্কুল শিক্ষার্থীদের অসাধারণ অ্যাকাডেমিক কৃতিত্বের স্বীকৃতি দেয়া হয়। যৌথভাবে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল ও ব্রিটিশ কাউন্সিল, বাংলাদেশ।  

কেমব্রিজ পরীক্ষায় অসাধারণ সাফল্যের জন্য বাংলাদেশের ৭১জন শিক্ষার্থী সম্মানসূচক ক্যামব্রিজ লার্নার্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। চারটি ক্যাটাগরিতে এই অ্যাওয়ার্ডগুলো দেয়া হয়েছে। টপ ইন দ্য ওয়ার্ল্ড, টপ ইন কান্ট্রি, হাই অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ও বেস্ট অ্যাক্রোস। এর মধ্যে নির্দিষ্ট একটি বিষয়ে বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করতে সক্ষম হওয়ায় বাংলাদেশের ৯ শিক্ষার্থী টপ ইন দ্য ওয়ার্ল্ড পুরস্কার অর্জন করে। বিজয়ী ৯ জনের মধ্যে ৭ জনই গণিতে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য এ স্বীকৃতি লাভ করে। কেমব্রিজ আইজিসিএসই, কেমব্রিজ ‘ও’ লেভেল, কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল এএস ও ‘এ’ লেভেল কোয়ালিফিকেশনের আলাদা আলাদা বিষয়ে এ পুরস্কার অর্জন করে তারা। 

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন, ব্রিটিশ কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর ডেভিড নক্স, কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনালের টিচিং অ্যান্ড লার্নিং ডিরেক্টর লি ডেভিস, ব্রিটিশ কাউন্সিলের এক্সাম অপারেশনসের ডিরেক্টর জুনায়েদ আহমেদ এবং কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ম্যানেজার শাহীন রেজা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। 

অনুষ্ঠানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, এটি একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। কেমব্রিজ পরীক্ষায় তোমাদের অর্জন কঠোর পরিশ্রম এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে তোমরা যে প্রতিযোগিতা করতে পারো, তারই প্রমাণ। আমার বিশ্বাস, কেমব্রিজ পরীক্ষায় এ অর্জনের মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে এবং ভবিষ্যতে বৈশ্বিক পর্যায়ে অবদান রাখতে পারবে। 

তিনি বলেন, একটি বিষয় আমি তোমাদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে ৩০ লাখ শহীদের জীবনের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। তাই, মাতৃভূমির প্রতি তোমাদের যে দায়িত্ব রয়েছে, সেটা অবশ্যই ভুলে গেলে চলবে না। তোমাদের সবসময় গর্বিত হওয়া উচিত। 

আরও পড়ুন: যুক্তরাজ্যের স্কুলগুলোতে সবচেয়ে ভালো করছে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশ নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন বলেন, শিক্ষার্থীরা বৈশ্বিকভাবে সেরার স্বীকৃতি অর্জন করেছে, এটা প্রত্যক্ষ করাও উল্লেখযোগ্য একটি ব্যাপার। এর মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশেও মেধাবী শিক্ষার্থীরা রয়েছে এবং তাদের সফলতা অর্জনের প্রচেষ্টা রয়েছে। যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের সামগ্রিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। শিক্ষা-সংস্কৃতি ও অর্থনীতি-বাণিজ্য সহ সকল ক্ষেত্রে এবং ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সুদৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাজ্যে ৬ লাখের বেশি বাংলাদেশি রয়েছেন, যারা সমাজের উন্নতিতে অবদান রেখে চলেছেন। আমি মনে করি, এক্ষেত্রে শিক্ষা সবকিছুর মূলে রয়েছে। এরপর, তোমরা যখন তোমাদের জীবন গড়া ও শিক্ষা অর্জনের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ভাববে, আমার প্রত্যাশা তোমরা এক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যকে বিবেচনা করবে। কেননা, হাই কমিশনার হিসেবে হিসেবে আমি সবচেয়ে আনন্দিত কারণ এ সময়ে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে।

এ নিয়ে কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনালের টিচিং অ্যান্ড লার্নিং ডিরেক্টর লি ডেভিস বলেন, আমরা পুরস্কারপ্রাপ্তদের অসাধারণ প্রচেষ্টা, তাদের দুর্দান্ত পারফরমেন্সে আমরা সবাই আনন্দিত। এসটিইএম বিষয়গুলোতে ভালো করা ছাড়াও, শিক্ষার্থীরা হিসাব বিজ্ঞান, ইংরেজি, আর্ট ও ডিজাইন বিষয়ে অত্যন্ত ভালো করেছে। শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসী, দায়িত্বশীল, উদ্ভাবনী ও চিন্তাশীল করে গড়ে তুলে মেধার সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটাতে স্কুলগুলোকে সহায়তা দিয়ে থাকে কেমব্রিজ এডুকেশন বলেও জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের অসাধারণ কৃতিত্বের ফল হিসেবে ৯০টি কেমব্রিজ লার্নার্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেছে। এই বৈশ্বিক অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয় ৪০টিরও বেশি দেশের সেরা শিক্ষার্থীদের। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানও এ স্বীকৃতিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করে।  প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থী কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনালের কোর্স পড়াশোনা করে। কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল গত ১৬০ বছর ধরে আন্তর্জাতিকভাবে এ পরীক্ষার আয়োজন করে আসছে।


সর্বশেষ সংবাদ