আনন্দের ছলে বছরে ২ দিন র্যাগিং চলে ডুয়েটে
- হোসাইন আরমান
- প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০২২, ০৫:৫৭ PM , আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২২, ০৭:৩৯ PM
গত দুইদিন আগে শেষ হলো ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) ২০২২ সালের দুই দিনব্যাপী র্যাগ ডে। ক্যাম্পাস জীবনের শেষ সময়টিকে রাঙ্গিয়ে তুলতে র্যাগ ডে সব বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজেই পালন করা হয়। এদিন নাঁচ, গান, কনসার্ট, আবৃত্তি, অভিনয় ইত্যাদি নানা আয়োজনে ভরপুর থাকে। আনন্দঘন পরিবেশের মাধ্যমে দিনটিকে উদযাপন করে বিদায়ী শিক্ষার্থীরা।
তবে ডুয়েটের র্যাগ ডে একটু ব্যতিক্রম বলা যায়। কারণ এই দুইদিন অন্যান্য আয়োজনের পাশাপাশি র্যাগিংয়ের ঘটনাও ঘটেছে। ডুয়েটের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দাবি করেন ডুয়েট র্যাগিং মুক্ত ক্যাম্পাস। এখানে কেউ র্যাগিংয়ের শিকার হন না। তবে র্যাগ ডে উপলক্ষে যে র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছে সেটা নিচক আনন্দের উদ্দেশ্যে। এর মাধ্যমে কাউকে কষ্ট দেয়া নয় বরং আনন্দ করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। কিছু কিছু শিক্ষার্থী এ দাবির সাথে দ্বিমত ও পোষন করেছেন। র্যাগ ডের দিন র্যাগিংয়ের বিষয়টিকে তারা বিরক্তির চোখে দেখছে।
আরও পড়ুন: চলন্ত ট্রেন থেকে ছিটকে পড়ে প্রাণ গেল ঢাবি ছাত্রের
জানা যায়, ডুয়েটের র্যাগ ডের প্রথম দিন ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের, তারা আবার ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের, ২য় বর্ষ আবার ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদেরকে র্যাগ দেয়। তবে র্যাগ ডের ২য় দিন ঘটে বিপরীত ঘটনা। ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীরা ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীদেরকে এভাবে ক্রমান্বয়ে জুনিয়রা সিনিয়রদেরকে র্যাগ দেয়।
র্যাগিংয়ের শাস্তির মধ্যে ছিল, একটা ললিপপ মুখে দিয়ে হাসতে নিষেধ করে। যদি কেউ হাসে তাকে ২টা ললিপপ দেয়। মুরগি বানানো, কানে ধরা, রংয়ের পানি দিয়ে গোসল করানো, বড় বোনদের প্রপ্রোজ করা ইত্যাদি।
১ম বর্ষের শিক্ষার্থী সারোয়ার জাহান ফাহিম বলেন, প্রথম বর্ষে যখন ভর্তি হই দ্বিতীয় বর্ষের ভাইয়েরা এসে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়। মিষ্টি খাওয়ায়। অন্য ক্যাম্পাসের মত জামা-কাপড় পড়ার নিয়ম, চলাফেরা বা অন্য কোন নিয়ম মানার কথা বলেনি। সবাইকে মিলেমিশে থাকতে বলছে।
তিনি বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসে কোন র্যাগিং দেখিনি। ম্যানার শিখানোর নামে আমাদের উপর বড় ভায়েরা কোন রকম অত্যাচার করেন না। তবে র্যাগ ডেতে যেটা ঘটেছে সেটা আমরা সানন্দে উপভোগ করেছি। বছরে ওই দুইটা দিনই মজার ছলে র্যাগ দেয়। তবে র্যাগ শেষে আমাদেরকে আপ্যায়নও করায়। যা চাই তাই খাওয়ায় এটি ভালো লাগে। অনেকে তো এদিন ইচ্ছা করে র্যাগ খেতে যায়।
ফেসবুকে ডুয়েটের র্যাগ ডের ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও প্রসঙ্গে ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ডুয়েট ক্যাম্পাসে কোন ধরনের র্যাগিং ছিল না এবং এখনও নেই। সিনিয়র ও জুনিয়র এর মধ্যে যে সুসম্পর্ক, বন্ধন, ভালোবাসা রয়েছে আমার বিশ্বাস কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে খুঁজে পাওয়া বিরল। গত দু’বছরের বেশি সময় করোনা পরিস্থিতি ছিল, তাই ক্যাম্পাসে কিংবা হলে তেমন আনন্দ কিংবা মজা করা হয়নি। চতুর্থ বর্ষের বড় ভাইয়েরা বিদায় নেবেন, তাই একটু মজা করা হয়েছে।
ফয়সাল ইসলাম নামে চতুর্থ বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এ দুদিন শুধু বড় ভাইয়েরা র্যাগ দেয় এমননা জুনিয়ররাও সিনিয়রদেরকে র্যাগ দেয়। এতে করে বুঝায় যায় এটি আসলে প্রকৃত র্যাগ না। এটি আমাদের ক্যাম্পাসের সিনিয়র-জুনিয়রের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। এর ফলে সিনিয়রদের সাথে জুনিয়রদের সম্পর্কটা বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ুন: বুয়েট শিক্ষার্থী ইফতেখার ৩ দিন ধরে নিখোঁজ
তবে এর ব্যতিক্রম চিত্রও রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানায়, অনেক শিক্ষার্থী র্যাগ ডের এসব কার্যক্রম পছন্দ করেনা। র্যাগ ডে চলাকালিন দুইদিন অনেকই হলে থাকে না। ভয়ে মেসে চলে যায়। যারা হলে থাকে তারাও দরজা বন্ধ করে রাখে। তবে অনেক সময় দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ডুকে গায়ে পানি ঢেলে দেয়, রংয়ের পানি মারে। এতে তারা বিরক্ত হন। তবে অনেকেই আবার এটিকে উপভোগ করেন।
ডুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বিনয় মুখার্জি বলেন, আমাদের ক্যাম্পাস অন্যান্য অনেক ক্যাম্পাসের চেয়ে ব্যতিক্রম, র্যাগিংমুক্ত। এখানে আমরা সবাই ভাইয়ের মত। এখানে যারা ভর্তি হয় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশে-পাশের কোচিং সেন্টারগুলোতেই ভর্তি কোচিং করে। আর যারা কোচিং করায় তার এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র। তখন থেকেই তাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তীতে ডুয়েটে ভর্তি হলেও এই সম্পর্ক বজায় থাকে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ডুয়েটের র্যাগ ডের দিনের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে দেখা গেছে। ভিডিও দেখে অনেকে হয়তো ভুল বুঝেছে। কিন্তু আসলে এখানে কোন র্যাগ দেয়া হয়নি। সবাই স্বতস্ফূর্তভাবে মজা করেছে। কাউকে র্যাগ দেয়া হয়েছে এমন কোন অভিযোগ কেউ করেনি। এই দিনে বরং জুনিয়রদের চেয়ে সিনিয়ররা বেশি র্যাগ খেয়েছে। এ থেকেই বুঝা যায় এটি আসলে র্যাগিং না আনন্দ।
এদিকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ডুয়েটের র্যাগ ডের ওই ভিডিওতে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা জানান, ডুয়েট সব সময় র্যাগিংমুক্ত ছিলো এখনও আছে। আমরা কখনো জুনিয়রদের র্যাগ দেইনি। তবে প্রতিবছর বিদায়ী ব্যাচের র্যাগ ডের সময় আমরা সিনিয়র-জুনিয়ররা মিলে আনন্দ করতাম।
তারা জানান, এবার যেটি হয়েছে সেটি দুঃখজনক। যদিও এটি মজা। তবে এরকম মজা যাতে আর কোন ব্যাচ না করে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। এভাবে চলতে থাকলে এটি এক সময় নিয়ম বা খারাপ ঐতিহ্যে পরিণত হবে। আমরা চাই না আমাদের প্রিয় ক্যাম্পাসে নেগেটিভ কিছু হোক।
ডুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, র্যাগ ডে উপলক্ষে ডুয়েটে র্যাগিংয়ের কোন ঘটনা ঘটেনি। আমরা কোন অভিযোগ পাইনি। যদি আপনারা পেয়ে থাকেন তাহলে আমাদেরকে জানাবেন; আমরা ব্যবস্থা নেবো। ডুয়েটে র্যাগিং করার সুযোগও নেই। কারণ প্রথম এবং দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা হলে থাকে না।