শাবিপ্রবি ভিসি থাকলো, আন্দোলন শেষ হলো

শাবিপ্রবি
শাবিপ্রবি  © টিডিসি ফটো

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রীর আশ্বাসে ‘আপাতত’ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। সংবাদ সম্মেলন থেকে শিক্ষার্থীরা দ্রুত ক্লাস ও পরীক্ষা চালু করার দাবি জানান। এদিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে অনাকাঙ্খিত বলে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

১৩ জানুয়ারি রাত থেকে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে সেই আন্দোলন ভিসির পদত্যাগের আন্দোলনে রূপ নেয়। টানা ৩১ দিনের আন্দোলনের পর হল প্রভোস্ট, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক এবং প্রক্টর পরিবর্তন হলেও এখনো বহাল আছেন ভিসি। রাষ্ট্রপতি ও আচার্যের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় সবাই।

আন্দোলন চলার সময়ে গত ১৬ জানুয়ারি ভিসিকে আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করে আন্দোলনকারীরা। পুলিশ ভিসিকে সেখান থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপরে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও ককটেল ছুড়ে। এতে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। সেদিন রাতে ভিসি অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ ও হল ত্যাগের নির্দেশনা দিলেও তা প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীরা গড়ে তুলে ভিসি পদত্যাগের আন্দোলন। শুরুর দিকে ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও পরে ভিসিকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি আমরণ অনশনে বসেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। পরে গণ অনশনের ঘোষণা দিয়ে মোট ২৮ জন শিক্ষার্থী অনশনে অংশ নেয়। অনশন কর্মসূচির সাথে সাথে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর ও বিভিন্ন স্থাপনায় ভিসি বিরোধী স্লোগান ও ব্যঙ্গচিত্র আঁকে এবং ভিসির কুশপুত্তলিকা দাহ করে। সর্বশেষ ২৬ জানুয়ারি অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক সরকারের উচ্চমহল থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি মানার বিষয়ে আশ্বস্ত হয়ে ক্যাম্পাসে আসে। শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান তারা। এরপর থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিলো শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন- ক্ষমা চেয়েছেন শাবিপ্রবি ভিসি

গত শুক্রবার বিকেলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদল আলোচনা করেন। সেদিন রাত ৯টায় সংবাদ সম্মেলন করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, তারা শনিবার বিকেলে নিজেদের মধ্যে আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত জানাবেন।

শনিবার সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী আমাদের সকল দাবি মেনে নিয়ে বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়ায় তাদের প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে আমরা আমাদের আন্দোলন আপাতত প্রত্যাহার করে নিলাম এবং আমাদের দাবি পূরণের অপেক্ষায় থাকলাম। আমরা আগামীকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ও ক্লাস-পরীক্ষা শুরু করার আহ্বান জানাচ্ছি।

শিক্ষার্থীরা বলেন, শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী আমাদের আমন্ত্রণে শাবিপ্রবিতে এসেছিলেন। আমাদের দাবি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। তিনি আমাদের সকল দাবি আন্তরিকতার সঙ্গে শুনেছেন এবং আমাদের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আরও বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের পাঁচটি দাবি এবং দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। আমাদের প্রথম দাবি ছিল ভিসির পদত্যাগ। এই বিষয়ে তারা বলেছেন ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ আচার্যের কাছে উপস্থাপন করা হবে। আচার্য এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তাই আমরা আশা করছি আচার্য আমাদের শিক্ষার মান ও পরিবেশ নিশ্চিত করতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমাদের কথা বিবেচনায় রাখবেন।

আরও পড়ুন- শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহার

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের ওপর দায়ের করা মামলার বিষয়ে বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর যে দুইটি মামলা হয়েছে সেগুলো অতিদ্রুত প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মোবাইল সিম ও মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ থাকার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে সকল নম্বর ও মোবাইল ব্যাংকিং সচল করা হবে বলে জানিয়েছেন। এদিকে পুলিশের স্প্লিন্টারে আহত সজল কুন্ডুসহ অনশনকারী সকল শিক্ষার্থীর সুচিকিৎসা চলমান আছে এবং থাকবে। এছাড়া মন্ত্রী সজল কুন্ডুর শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তার চাকরির ব্যবস্থা করার বিষয়ে মন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা।

এদিকে ১৬ জানুয়ারির ঘটনায় আহত সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ সকলের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। শনিবার দুপুরে ভিসির স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। বিবৃতিতে তিনি বলেন, আমাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারা আহত হয়েছেন, তাদের সবার প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। ওই ঘটনার ধারাবাহিকতায় সৃষ্ট অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী যারা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

ভিসি বিবৃতিতে আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দর ও স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনার জন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের এই প্রিয় প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা সম্ভব হবে।


সর্বশেষ সংবাদ