জিপিএর পেছনে না দৌঁড়ে সহশিক্ষা গ্রহণের পরামর্শ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের
- নোবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২০, ০৫:৫০ PM , আপডেট: ০৮ জুন ২০২০, ১১:৩৮ AM
আসন্ন বাজেট নিয়ে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংগঠন রয়্যাল ইকোনমিকস ক্লাবের (আরইসি) উদ্যোগে এক ভার্চুয়াল সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। করোনা মহামারিতে সংকটাপন্ন বাংলাদেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছরের ভাবনা শীর্ষক এই আয়োজনে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব অধ্যাপক ড. শামসুল আলম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শাহাদাত হোসেন সিদ্দিকী আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার (৬ জুন) রাতে নোবিপ্রবি রয়্যাল ইকোনোমিকস ক্লাবের ফেসবুক পেজে এই সংলাপটির লাইভ দেখানো হয়। সংলাপের শুরুতে রয়্যাল ইকোনোমিকস ক্লাবের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জয় ভৌমিক। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন নোবিপ্রবির অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস. এম. ওয়াহিদ মুরাদ।
বাজেট বিষয়ে ভাবনা নিয়ে এ সংলাপে নানাবিধ তথ্য উঠে এসেছে। বাজেট ভাবনা নিয়ে অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, “অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের স্বাস্থ্য খাতেও অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রত্যেকেই একমত যে, যদি জীবনকে বাঁচাতে পারি, তবে জীবিকাকেও রক্ষা করা যাবে।” এছাড়াও তিনি সামাজিক নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ানোর দিকেও জোর দিয়েছেন।
সংলাপে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, করোনাভাইরাস আমাদের বিভিন্ন খাতের দুর্বলতাগুলো ধরিয়ে দিয়েছে; এখন আমাদের উচিত হবে এবারের বাজেটে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বক্তব্যে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবারের বাজেটের মূল ৪টি চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন তিনি।
এসময় শিক্ষার্থীদের জন্য দিকনির্দেশনা দিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের শুধু জিপিএ গ্রেডের পিছনে না দৌঁড়ে সহশিক্ষা কার্যক্রমের সাথেও নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে হবে।
ঢাবির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, বাজেটে সাংবিধানিক কিছু বাধ্যবাধকতা রয়েছে, যা আমাদের মানতে হবে। ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা আমাদের ভিন্ন ভাবে ভাবতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ লকডাউনে দেয়া যাবে না, কারন কাজ হারিয়েছে অনেকেই। ইতোমধ্যে দারিদ্র্যতার হার বেড়েছে। এ দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে খাদ্য ও কাজের আওতায় আনতে হবে।
অনুষ্ঠানের প্রশ্নোত্তর পর্বে অতিথিবৃন্দ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। এক প্রশ্নের জবাবে গার্মেন্টস খাতে প্রণোদনা সত্ত্বেও কর্মী ছাঁটাই প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. আলম বলেন, হুট করে কর্মী ছাঁটাই শ্রমিক কল্যাণ আইনে আসলে সম্ভব নয়। নোটিশ দিতে হবে এবং যথোপযুক্ত নিয়ম মেনে তবেই সম্ভব। এ ব্যাপারে সরকারের আগ্রহের কমতি নেই। প্রণোদনার সুযোগ পেয়েছে বলে গার্মেন্টস সেক্টরের বিষয়টা ভালোভাবে বিবেচনা করা উচিৎ।
ড. শাহাদাত যোগ করেন, সেইফটি এন্ড সিক্যুরিটি অফ দ্যা জব নিয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে। এত বড় একটা সেক্টরকে আমরা কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না তাও ভেবে দেখতে হবে।
বাজেটে আয় বৈষম্য কমানোর জন্য উচ্চসম্পদশালীদের উপর সম্পদ কর আরোপের জন্য কি ব্যবস্থা নেয়া উচিত কিনা, প্রশ্নের জবাবে ড. ভট্টাচার্য বলেন, প্রবৃদ্ধি ও বন্টনের মধ্যে বিদ্যমান বিরোধের নিষ্পত্তি হয় এর ট্রেড অফ আসলে কার্যকর হয় উন্নয়ন অর্থনীতিতে। সম্পদের উপর কর আরোপ না করে সকলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা যায়না।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও নোবিপ্রবি অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদ মুরাদ বলেন, বাংলাদেশের আয় বৈষম্য কমে গিয়ে আবার বৃদ্ধি পাচ্ছে। অর্থাৎ এখন এটা ইংরেজি বর্ণ ‘N’ এর মত। তাছাড়া কোভিড-১৯-এর প্রভাবে দারিদ্রের হারও প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। বেকারত্বের হারও অনেক বেড়ে গিয়েছে।