মা তার সন্তানকে দেখছেন
- শিহাব উদ্দিন
- প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০১৯, ০৭:২৭ PM , আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৯, ১১:৪৪ PM
সাতদিন হলো আবরার নেই। চলে গেছেন না ফেরার দেশে; ক্যাম্পাসের মায়া ত্যাগ করে, পলাশীর আড্ডা ছেড়ে। আবরারকে যখন ছাত্রলীগ নেতারা রুম থেকে ডেকে নেন, তখনও তার অংকের খাতাটা খোলাই ছিল। অংক শেষ করতে পারেননি আবরার, তার আগেই জীবন অংকের পাঠ চুকেছে। আবরার চলে যাওয়ায় বন্ধু-বান্ধব তো বটেই, গোটা দেশ শোকাহত গত সাতদিন। বাবা বরকত উল্লাহ যথার্থই বলেছেন- ‘আমার ছেলের জন্য আজ সারা বাংলা কাঁদছে, এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ’
আবরারের জন্য নানাভাবে শোক প্রকাশ করছেন সহপাঠীরা। যদিও যতটা না শোক, তার চেয়ে বেশি বিচার দাবি। বন্ধুদের জন্য হয়তো এটাই আবরারের প্রতি শেষ ভালোবাসা। ভালোবাসার এমন স্বীকৃতিস্বরূপ ক্যাম্পাসে গ্রাফিতি এঁকেছেন শিক্ষার্থীরা। স্লোগান লিখেছেন, পোস্টার সাঁটিয়েছেন। আবরারের সেই পোস্টারের দিকেই এক মাকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখা গেল। যদিও তিনি সত্যিই আবরারের মা কিনা- তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে মা তো মা-ই; পৃথিবীর সব সন্তানের প্রতি তার ভালোবাসা তো একইরকম।
বুয়েটিয়ান পেইজে পোস্ট করা ওই ছবিটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘মা দেখছেন তার সন্তানকে... কষ্ট... জাস্টিস ফর আবরার’। যে পোস্টের নিচে নানা আবেগী কমেন্ট করেছেন বুয়েটিয়ানরা। হাবিবুল্লাহ মহান নামে একজন লিখেছেন, ‘এর চেয়ে মর্মান্তিক ছবি আর হয় না ভাই।’ অন্য এক ছাত্র লিখেছেন, ‘আবরারকে চিরস্মরণীয় রাখবে এ দেশ। এ জাতি নূর, আসাদ, রফিক, সফিক, কাউকে ভুলে যায়নি। আমরা আবরারকেও ভুলবনা। মায়ের কান্নার কারন, আবরার আসবে ফিরে ঘরে ঘরে।’
তন্ময় হুমায়ন কবির নামে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘বুয়েটের ছাত্রদের প্রতি অনুরোধ... তোমরা শহীদ আবরারের স্মৃতি রক্ষার্থে তার নামে বুয়েটের সবচেয়ে বড় একটি ছাত্রাবাসের নামকরণ করার দাবী জানাও। এই দাবীটিই আবরারের আত্বত্যাগের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত দাবি’।
জানা যায়, চলে যাওয়ার রাতে আবরার ফাহাদকে অনেকবোর কল দিয়েছিলেন মা রোকেয়া। ফোন বেজেছিল, কিন্তু রিসিভ করেননি আবরার। কল রিসভ না করায় মেসেঞ্জারে নক দিয়েছিলেন ছোট ভাই ফায়াজ। ফেসবুকে আবরার একটিভ ছিল, কিন্তু সাড়া দেননি। দেবে কীভাবে- হয়তো তখন তার বুকের পাঁজরে কেউ চড়ে বসেছিল।
পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ছাত্রলীগ নেতারা আবরারকে রাত আটটার দিকে ২০১১ নম্বর রুমে ডাকেন। পেটানো হয় রাতভর। পরে রাত তিনটার দিকে শোনা যায়, আবরার বেঁচে নেই।
মা যখন আবরারকে ফোন করছিলেন তখনও আবরার পৃথিবীতে ছিলেন। কিন্তু কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না; ছিলেন টর্চার সেলে। হয়তো মা মা, বাবা বাবা বলে ডাকছিলেন; কিন্তু সেই ডাক বাস্তবতাকে ভেদ করে মা-বাবার কানে পৌঁছায়নি।