শাবিপ্রবির হলে ছাত্রের গলায় ছুরি ধরে ‘শিবির, শিবির’ বলে চিৎকার ছাত্রদলকর্মীর

অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী ফাকাব্বির ও সাথে থাকা অস্ত্র
অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী ফাকাব্বির ও সাথে থাকা অস্ত্র  © টিডিসি ফটো

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শাহপরান হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করার অভিযোগ উঠেছে এক ছাত্রদল কর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর উল্টো শিবিরের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শেখ ফাকাব্বির। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

রবিবার (৫ জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরাণ হলের ৪৩৬ নম্বর কক্ষে ঢুকে ছুরি দিয়ে হত্যারচেষ্টা করেন বলে জানান ওই কক্ষে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা। কক্ষটিতে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আমিরুল ইসলাম, আতিকুজ্জামান ও আবু হুরায়রা রাতিন থাকতেন। 

শাহপরান হলের ৪৩৬ নাম্বার কক্ষের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি রাত ৯টার দিকে টিউশন থেকে এসে রুমে শুয়ে রেস্ট নিচ্ছিলাম। হঠাৎ ফাকাব্বির (অভিযুক্ত) আমার সাথে কথা বলতে আসে। এর আগে তাকে আমি দেখিনি। তার পড়নে ছিল শর্ট প্যান্ট। আমি যখন তাকে জিজ্ঞেন করলাম তুমি কে? শর্ট প্যান্ট পড়ে হুটহাট রুমে ঢুকে পড়েছ। তখনই সে পকেট থেকে একটা ছুরি বের করে আমাকে মারার চেষ্টা করে এবং ইউটিউব থেকে একটা ভিডিও প্লে করে আমাকে বলে যে দেখ আমি খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী। পরে দৌড়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে আমি প্রক্টরকে ফোন দিয়ে জানাই।’

সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রত্যক্ষদর্শী ও ফাকাব্বিরের সাবেক রুমমেট সুসম সাহা বলেন, ‘ফাকাব্বিরের সাথে আমি মেসে থাকতাম। সে দীর্ঘদিন নেশাগ্রস্ত। গতকাল সে আমাকে খুঁজেই হলে আসে। আমিরুলের গলায় ছুরি ধরার পর চিৎকার করে বলেন, এই তোরা শিবির না? তোরা শিবির।’

আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও ৪৩৬ নম্বার কক্ষের শিক্ষার্থী আশিকুজ্জামান বলেন, ‘ফাকাব্বিরের হিংস্র মনোভাব দেখে ভয়ে আমরা রুম থেকে দৌড়ে বের হয়ে বাহির থেকে দরজা আটকে দিয়ে হলের নিরাপত্তা কর্মীদের জানাই এবং পাশাপাশি প্রক্টর স্যারকে অবহিত করি।  এসময় সে নাঈম সরকার নামের একজনকে ফোন দিয়ে চিৎকার করে বলেন, ‘ভাই আপনি কি কিছু করবেন নাকি আমি ৩টাকে শেষ করে চলে আসবো?’

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রাইভেট গ্রুপ ‘সাস্টিয়ান ভয়েসে’ শিবিরকে জড়িয়ে পোস্ট দেন ফাকাব্বির। পোস্টে ফাকাব্বির লেখেন, আমি শাহপরাণ হলে টাকা নিতে আসলে শিবিরের ছেলেরা আমাকে কুপিয়ে জখম করে। পরবর্তীতে আনুমানিক রাত ২টার দিকে একই গ্রুপে ক্ষমা চেয়ে ফাকাব্বির লেখেন, আমি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিবিরকে জড়ানোর চেষ্টা করেছি। একরকম ভবিষ্যতে আর করবেন না বলেও পোস্টে উল্লেখ করেন সে।’

ঘটনার সময় ফোনকল পেয়ে হলে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোখলেছুর রহমান ও শাহপরাণ হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমেদ। প্রক্টর ও প্রভোস্ট এসে আনুমানিক রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফাকাব্বিরকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে বলেন, ‘আমি ছাত্রদলের সাথে রাজনীতি করার কারণে আমাকে এক সেমিস্টার ড্রপ দিতে হয়েছে। গতকাল আমি সুসমের কাছ থেকে ইন্টারনেট বিল নিতে আসলে ৪৩৬ নাম্বার কক্ষে বসবাসরত শিক্ষার্থীরা আমাকে শিবির পরিচয় দিয়ে মারধর করে।’ এসময় তিনি নিজেকে খুলনা সিটি কলেজের ছাত্রদলের কমিটিতে ছিলেন বলে দাবি করেন।

এসময় সহকারী প্রক্টর এর সহযোগিতায় ফাকাব্বিরের মোবাইলের মেসেঞ্জার চেক করলে দেখা যায় রাত সাড়ে ৯টা থেকে শাবিপ্রবি ছাত্রদল নেতা নাঈম সরকারের সাথে কয়েকবার ফোনো কথা বলছেন সে। এক পর্যায়ে তার হাঁটুতে আচড় লেগেছে এমন একটি ছবি নাঈম সরকারকে পাঠালে নাঈম সরকার বলেন, ‘আমরা সাস্টিয়ান ভয়েসে পোস্ট কর।’ এরপর সে শিবিরকে জড়িয়ে পোস্ট করেন। তার মেসেঞ্জার চ্যাটিং থেকে জানা যায় এর আগেও নাঈম সরকারের সঙ্গে অর্থের লেনদেন হয়েছে তার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ফাকাব্বির বলেন, ‘নাঈম সরকার আমার অভিভাবক। আমি কাউকে না পেয়ে নাঈম সরকারকে ফোন দিয়েছি। যেহেতু শিবির আমাকে মারছিল তাই নাঈম সরকার ভাই আমাকে পোস্ট করতে বলেছিল।’

এসময় প্রক্টর অফিসে উপস্থিত ছিলেন সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. সুব্রত সরকার। তিনি বলেন, ‘ফাকাব্বির আমাদেরকে ফোন দিয়ে বলছে শিবিরের ছেলেরা তার পায়ের রগ কেটে ফেলছে। যদিও পরবর্তীতে এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এটি খুবই দুঃখজনক এবং আমাদের বিভাগের জন্য মানহানিকর।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী তদন্ত করে অপরাধীকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে তিনি আহ্বান জানান তিনি। 

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোখলেছুর রহমান বলেন, বিষয়টি যথাযথ তদন্ত করতে আমরা একটি কমিটি গঠন করবো। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করবো।

শাবিপ্রবি ছাত্রদল নেতা নাঈম সরকার বলেন, ‘আমি সিলেটের বাহিরে আছি। গতকাল রাতে ফাকাব্বির আমাকে ফোন দিয়ে বলে যে শিবিরের ছেলেরা তাকে মারধর করতেছে। তাই জরুরি মুহূর্তে আমি তাকে বিশ্ববিদ্যালয় গ্রুপে পোস্ট করতে বলি। তাছাড়া আমি আর কিছু জানিনা।’

জানা যায়, শেখ ফাকাব্বির বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন আখালিয়া আবাসিক এলাকার একটি মেসে থাকেন। তার সাথে থাকেন একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রিয়াদ ভূঁইয়া। রিয়াদ ভূঁইয়া জানান, ‘ফাকাব্বির দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। সে নিয়মিত গাঁজা সেবন করে রুমে।’ 


সর্বশেষ সংবাদ