রাবিপ্রবিতে এক দশকেও হয়নি স্থায়ী ভবন, নানান সংকটে ভোগান্তি শিক্ষার্থীদের
- রাবিপ্রবি প্রতিনিধি
- প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৮ AM , আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ PM
প্রতিষ্ঠার ১০ বছর পার করলেও রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) স্থায়ী কোনো ভবন হয়নি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই জাতীয় সংসদে ‘রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন’ পাস করে তৎকালীন সরকার। নানা প্রতিকূলতা পার করে ২০১৪ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে এরপর এক দশক পার হলেও পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায়নি শিক্ষার পরিবেশ। প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়লেও নির্মাণ করা যায়নি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো।
নানান সংকটে ভোগা বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে অস্থায়ী ভবনে। নিয়োগ দেওয়া হয়নি পর্যাপ্ত শিক্ষক-কর্মকর্তা। বর্তমানে পাঠদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে মাত্র ৩০ জন শিক্ষক দিয়ে। এক দশক পার হলেও ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া কোনো কাজই দৃশ্যমান হয়নি। গত জুন মাসে সয়েল টেস্ট কাজের পরিদর্শন করেন তৎকালীন উপাচার্য। পরবর্তীতে শিক্ষকদের আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের কারণে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদত্যাগের পরে কার্যত কোন উন্নয়নকাজের অগ্রগতি হয়নি।
জানা গেছে, গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারবিহীন বছর পার করেছে রাবিপ্রবি। স্থায়ী ভবন না থাকায় ক্লাসরুম সংকটের সমস্যা দিন দিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এছাড়া লাইব্রেরির জায়গা সংকট, ল্যাব কক্ষের ঘাটতি, অডিটোরিয়াম ও প্রার্থনার আলাদা ব্যবস্থা না থাকাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত রাবিপ্রবি। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
সংশ্লষ্টিদরে ভাষ্য, বর্তমানে প্রশাসনবিহীন রাবিপ্রবির কার্যক্রমে তেমন কোনো দায়বদ্ধতা নেই। চলতি বছরের শেষের দিকে স্থায়ী ভবন নির্মাণের কাজ শুরুর কথা থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। স্থায়ী অবকাঠামোবিহীন ক্যাম্পাসে দিন দিন দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। দুর্দশার চিত্র এমন যে, একটি ব্যাচের ক্লাস বন্ধ রেখে অন্যদের ক্লাস চালু রাখতে হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী এম,আকতারুজ্জামান অপু বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১০ বছরে আমরা দু্ই ভিসি পেয়েছি। কিন্তু এখনও শিক্ষক, শ্রেণীকক্ষ, যানবাহনসহ অনেক সংকট রয়ে গেছে। এসব সমস্যার সাথে সেশনজট তো আছেই। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার কোনো ব্যবস্থা নাই। কম্পিউটার ল্যাব রুম আছে একটি। তাও সব বিভাগের জন্য, যার বেশিরভাগ কম্পিউটারই নষ্ট।’
তিনি বলেন, ‘সিএসই বিভাগের জন্য কোনো আলাদা কম্পিউটার ল্যাব নেই। প্র্যাকটিকাল জ্ঞানে বড় ঘাটতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সরকার কবে সঠিক ব্যবস্থা নেবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য? আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সবসময়ই অবহেলিত কেন? কবে এ অবহেলা থেকে মুক্তি পাবে রাবিপ্রবি?
স্বল্প জনবল ও শিক্ষক সংকটে নানান সমস্যায় পড়তে হয় রাবিপ্রবিকে। শিক্ষক সংকট থাকায় বিভিন্ন বিভাগে অল্প ও বৃহৎ পরিসরে সেশনজট লেগেই আছে। অধ্যাপকবিহীন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষকের সংখ্যা মাত্র ৩০ জন। তাদের অনেককে প্রশাসনিক কাজেও ব্যস্ত থাকতে হয়।
এমনকি গণঅভ্যুত্থানের পরে ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসার্চ টেকনোলজি বিভাগে কোনো শিক্ষকই নেই। শিক্ষক না থাকায় এ বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাকাল্টি অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শাহেদ সরোয়ার। তিনি মূলত বাংলাদেশ স্টাডিজের শিক্ষক।
সরজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে রাবিপ্রবির একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে অস্থায়ী ভবনে। চলতি বছরের শেষের দিকে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়নের কোনো দৃশ্য চোখে পড়েনি। ফলে অবকাঠামোগত সংকটের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় প্রতিটি বিভাগেই ক্লাসরুম ও ল্যাব সংকট রয়েছে।
শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য নেই প্রয়োজনীয় কক্ষ। ভাড়া করা আবাসিক হলে ১০ বছর পার করেছেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে নেই কোনো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা। নিরাপত্তা, ইন্টারনেট সংযোগ, রিডিং রুম, ডাইনিং সমস্যা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন তারা। অবশ্য কিছু সমস্যার সমাধান হয়েছে।
অস্থায়ী ভবনের কারণে লাইব্রেরিতেও ভোগান্তি পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের। মাত্র ৪০ জন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন লাইব্রেরিতে বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। সিট সংকটের কারণে অনেকে বেশিক্ষণ অবস্থান করতে পারেন না। এছাড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও যানবাহনের সংখ্যা বাড়েনি। মাত্র চারটি যানবাহন দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে প্রশাসন। বেশিরভাগ সময় ঠাসাঠাসি করে শিক্ষার্থীরা এসব বাসে চলাচল করেন।
অবকাঠামোগত উন্নয়নের বাইরে খেলার মাঠ ও বিনোদনের ব্যবস্থা নেই। খেলাধুলার জন্য নেই তেমন কোনো মাঠ। নামমাত্র খেলার মাঠ নির্মাণ করেছে রাবিপ্রবি প্রশাসন। সময় বাড়লেও খেলার মাঠের উন্নয়ন আগের জায়গায় আটকে আছে।
আরো পড়ুন: ঢাবিতে গভীর রাতে মুছে ফেলা হয়েছে হাসিনার ব্যঙ্গ গ্রাফিতি, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে জরুরি আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম দায়িত্বপ্রাপ্ত ড. নিখিল চাকমা বলেন, আগামী বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু হবে। ইতিমধ্যে টেন্ডার হয়েছে। ২০২৬ সালে কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যার বিষয়ে নিজেদের পরিকল্পনার কথা জানান।
তিনি বলেন, ‘আমরা প্রথমে শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষার্থীদের প্রধান সমস্যা নিয়ে কাজ করব। এরপর ধাপে ধাপে অন্য সমস্যা নিয়ে কাজ শুরু হবে। শিক্ষার্থীদের সার্বিক সমস্যা সমাধান করা গেলে অন্য দিকে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।
শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শিক্ষক সংকট রাবিপ্রবির অনেক দিনের সমস্যা। আমরা এ বিষয়ে ইউজিসির সাথে বৈঠক করেছি। নতুন বছরে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে বলে আমি আশাবাদী। শিক্ষার্থীরা যেন সেশনজটে না পড়েন, সে দিকে নজর রেখে আগামী মাসে একটি আলোচনার আয়োজন করছি। আশা করি, সেখানে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’