চুয়েটে ইন্টারনেটের ‘হতশ্রী’ অবস্থা, খোলে না পিডিএফ চলে না ইউটিউব

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © সংগৃহীত

প্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেট ছাড়া চিন্তা করা দুষ্কর। আর যদি ধীরগতির ইন্টারনেট হয়, তাহলে তা অসহ্য ও যন্ত্রণাকর। কিন্তু সেই ধীরগতি ও নিম্নমানের ইন্টারনেট সেবায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা। এমনিতেই প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের একাডেমিক চর্চার সঙ্গে ইন্টারনেট ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তার ওপর এ অবস্থায় তারা পিছিয়ে পড়ছেন ক্রমাগত।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) ইন্টারনেটের ধীরগতি ও নিম্নমানের সেবার কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। একাডেমিক ভবন ও আবাসিক হলগুলোতে পর্যাপ্ত সংযোগ থাকলেও বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত এসব সমস্যার কথা তুলে ধরছেন। তাদের অভিযোগ, দীর্ঘ সময় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করা লাগে। এ সময়ে ধীরগতির কারণে ওয়াই-ফাই ব্যবহার করতে পারেন না তারা। এ ছাড়া বারবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়াসহ দীর্ঘ সময় নিয়ে লোডিং হওয়ায় ওয়াই-ফাই সেবা ব্যবহারে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

ওয়াই-ফাই সমস্যার ব্যাপারে শেখ রাসেল হলের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব নাবিল দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রকৌশল শিক্ষায় ইন্টারনেটের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের পড়ালেখার সময় প্রায়ই অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি কিংবা প্রেজেন্টেশনের জন্য গুগল থেকে তথ্য নিতে হয়। ইউটিউবেও কনটেন্ট দেখতে হয়। অথচ চুয়েটে ইন্টারনেট ব্যবস্থা তেমন একটা ভালো না। মূলত চুয়েট ওয়াই-ফাই যেটা সবাই ব্যবহার করি, সেটা হুটহাট বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরীক্ষার আগের রাতে এ ধরনের পরিস্থিতি বেশ ঝামেলায় ফেলে। অতএব, এখনই সময় এ সমস্যা নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়া।

তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের  শিক্ষার্থী অনুরাশা রাফানা বলেন, সব হলের তুলনায় তাপসী রাবেয়া হলে উচ্চমানের ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেটার মাধ্যমে আমরা কয়েকভাবে (সুইচ, রাউটার) নেটওয়ার্ক সংযোগ দিতে পারি। এই সুবিধা ভোগ করার জন্য আমাদের সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে রাউটার কিনতে হয়েছে। তারপরও প্রায়ই প্রত্যাশিত গতির ওয়াইফাই পেতে অসুবিধা হয়। এ ছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে মোবাইল নেটওয়ার্কের অকার্যকারিতার জন্য আরও বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তবু নতুন হল হিসেবে এই সম্পূর্ণ ওয়াই-ফাই ব্যবস্থা সত্যিই প্রশংসনীয়।

বিষয়টি নিয়ে হল কর্তৃপক্ষকে প্রতিনিয়ত জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না অভিযোগ করেন পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২২ আবর্তের শিক্ষার্থী তাফহীম রহমান। তিনি বলেন, হাতে গোনা কয়েকটা জায়গা ছাড়া কোথাও এই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়াইফাইয়ের স্পিড পাওয়াই যায় না। হলেও একই বেহাল অবস্থা। শহীদ তারেক হুদা হলের গণরুমে ৫জি ম্যাশ রাউটার থাকায় ওখানে তাও স্পিড পাওয়া যায়, কিন্তু মেইন হলের চার তলায় দিনে তিন-চার ঘণ্টা সংযোগই করা যায় না। ডিএলের সময় একটা পিডিএফ ওপেন হতেও অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। বাফারিংয়ের জন্য ইউটিউব ব্যবহারেও অসুবিধা হয়।

বিষয়টি সহ্যসীমার বাইরে চলে গিয়েছে জানিয়ে শামসুন্নাহার খান হলের আবাসিক ছাত্রী নিশাত সায়েরা বলেন, চুয়েটে ভর্তির পর থেকেই ওয়াই-ফাইয়ের সমস্যা দেখে আসছি। কিন্তু ইদানীং তা সহ্যসীমার বাইরে চলে গিয়েছে। আগে হলে রুমের ভেতর দিকে ওয়াই-ফাই না পাওয়া গেলেও দরজার পাশে পাওয়া যেত। এখন দরজার পাশে বসেও ওয়াই-ফাইয়ের দেখা পাওয়া যায় না। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ যে কতটা জরুরি, তা আমরা সবাই জানি। আশা করি কর্তৃপক্ষ শিগগিরই ওয়াই-ফাই সমস্যা নিরসনে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার খান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. রাজিয়া সুলতানা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ওয়াই-ফাই সমস্যা নিয়ে আমরা খুব উদ্বিগ্ন আছি। এটা নিয়ে সেন্ট্রালিও চিন্তাভাবনা চলছে। হলের দিক থেকে আমরা যতটা সম্ভব রাউটার দিয়ে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। তবু কিছু জায়গায় তা সম্পূর্ণ সমাধান নিয়ে আসতে পারছে না। হলে ওয়াই-ফাই সমস্যা দেখা দিলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করি।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মশিউল হক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, গত ১০ বছরে ওয়াই-ফাই ব্যবস্থাপনা খাতে তেমন কোনো বিনিয়োগ করা হয়নি বা উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাই বর্তমান শিক্ষার্থীরা এ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সমস্যা সমাধানে আমরা প্রত্যেক হল প্রভোস্টসহ একটা প্রস্তাবনা তৈরি করি, যার মধ্যে প্রতিটি হলে ও রুমে পর্যাপ্ত ব্রডব্যান্ড কানেকশন দেওয়ার একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ প্রস্তাব দুই মাস আগে আমরা উপাচার্য মহোদয়কে উপস্থাপন করি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও বাজেট সাপেক্ষে আমরা ব্যবস্থা নেব।


সর্বশেষ সংবাদ