ছুটির পরও পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত বুয়েট শিক্ষার্থীদের
ঈদ ও পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে ৪ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল (মঙ্গলবার) পর্যন্ত ছুটি ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ক্লাস-পরীক্ষা। বুধবার (১৭ এপ্রিল) ১৩ দিন ছুটি শেষে খোলার প্রথম দিন বুয়েট’২১ ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। তবে এ পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে মাত্র ৮ জন পরীক্ষার্থী আর অনুপস্থিত ছিল ১ হাজার ২৭১ জন। অর্থাৎ ৯৯.৩৭% পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি বলে ব্যাচটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময় ছিল বুধবার সকাল ৯টা। পরে সাড়ে ৯টার দিকে শূন্য উপস্থিতির পরীক্ষার হলগুলো থেকে শিক্ষকরা বেরিয়ে যান বলে জানায় ব্যাচটির শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন: ১৩ দিনের ছুটিতে বুয়েটে
২০১৯ সালের অক্টোবরে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এক ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’র মাধ্যমে ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গত ২৭ মার্চ বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রবেশকে কেন্দ্র করে ২৯ মার্চ থেকে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।
৩ এপ্রিল পর্যন্ত টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন ও অবস্থান কর্মসূচি করে শিক্ষার্থীরা বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থানের কথা জানান দেন। শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ইমতিয়াজ হোসেনকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার, ডিএসডব্লিউর পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করেন।
আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সরিয়ে দেওয়া হলো বুয়েটের ডিএসডব্লিউকে
শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২৮ মার্চ রাতে ছাত্রলীগ নেতা ইমতিয়াজ হোসেনের হলের আসন বাতিল করে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। পরে সব রাজনৈতিক সংগঠন ও এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণার বিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ইমতিয়াজের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ১ এপ্রিল বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সেই ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’র কার্যক্রম স্থগিত করেন উচ্চ আদালত। ফলে ক্যাম্পাসে আবার ছাত্ররাজনীতি চালুর প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি চান না।
আরও পড়ুন: আজও পরীক্ষা বর্জন বুয়েট শিক্ষার্থীদের
৩ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, দুই দিনব্যাপী জনমত নিরীক্ষণের জন্য তাঁরা নিজ নিজ প্রাতিষ্ঠানিক ই-মেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে-বিপক্ষে অনলাইনে ভোট গ্রহণ করেন। ৫ হাজার ৮৩৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে স্বাক্ষর করেছেন ৫ হাজার ৬৮৩ জন। অর্থাৎ ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে। পরদিন ৪ এপ্রিল থেকে ঈদ ও পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে ১৩ দিনের ছুটি শুরু হয় বুয়েটে।
আরও পড়ুন: পরীক্ষা বর্জন বুয়েট শিক্ষার্থীদের, পরীক্ষার্থী শূন্য হল
এদিকে, বুয়েট’২১ ব্যাচের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ছুটির আগেও একাধিক ব্যাচের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করা হয়েছিল। তবে সেগুলোতে উপস্থিতি আরও কম ছিল। ২২ ব্যাচে পরীক্ষার্থী ছিল শূন্য, ২০ ব্যাচে ১ থেকে ৩ জনের মধ্যে, ১৮ ব্যাচে শূন্য।
আরও পড়ুন: নিয়মিত এক শিক্ষার্থী ছাড়া কেউই অংশ নেননি বুয়েটের পরীক্ষায়
তবে ২১ ব্যাচে ৮ জন উপস্থিতি ব্যাখ্যা দিয়ে তারা জানায়, ২৭ মার্চ রাতে বুয়েট ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর আমরা সকল বুয়েটিয়ান একত্র হয়ে যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বুয়েট প্রশাসনের কাছে দাবি তুলেছিল, তাদের মধ্যে ৫ জনই ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী। বাকি ৩ জন পরীক্ষার্থী তাদের সিদ্ধান্ত স্বাধীনভাবে গ্রহণ করেছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন - বাকি ১ হাজার ২৭১ জন পরীক্ষা দিল না কেন? আজকেও কী কোনো জমায়েত ছিল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের? না।
আরও পড়ুন: তৃতীয় দিনের মতো ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন বুয়েট শিক্ষার্থীদের
মূলত, গত ৩০ মার্চ তারিখে তার জুনিয়র ব্যাচ জীবনের প্রথম টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা দেয়নি। ৩১ মার্চ ও ৩ এপ্রিল সিনিয়ররা পরীক্ষা বর্জন করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় বুয়েটকে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতির কালো থাবা থেকে মুক্ত করার দাবি আদায়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যেই ২১ ব্যাচ, সেই ব্যাচের সাধারণ শিক্ষার্থীরা যারা বুয়েটের সত্যিকার অর্থে ভালো চায়, তাই তারা পরীক্ষা দিতে হলে যায়নি— জানানো হয় ২১ ব্যাচের পক্ষ থেকে।
পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ার বিষয়ে নিহত আবরার ফাহাদের ছোটভাই ও বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফায়াজ জানান, পরীক্ষা দিতে না পারার ক্ষতি সবারই হচ্ছে৷সবারই অনেক পরিকল্পনা থাকে টার্ম ব্রেক নিয়ে। তা সত্ত্বেও ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার ব্যাপারে কেউ আপস করছে না। সত্যিই এটা গর্ব করার মতো বিষয়।