যবিপ্রবিতে ১৭ চাকরিপ্রার্থীকে ছয় ঘণ্টা আটকে রাখল ছাত্রলীগ
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) লিফট অপারেটর পদে নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আসা ১৭ চাকরিপ্রার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে তাদের আটকে রাখার পর প্রায় ৬ ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগ। অন্যদিকে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অপহরণের মামলাসহ রিজেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির কথা জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন।
যবিপ্রবি প্রশাসন ও ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থীরা জানিয়েছেন, গতকাল যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লিফট অপারেটর পদের নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে। ১১টি পদের বিপরীতে এই পরীক্ষায় প্রার্থী ছিলেন ৩৮ জন। এর মধ্যে ২১ জনকে ছাত্রলীগ পরীক্ষা দিতে ‘অনুমতি’ দিয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, লিফট অপারেটর পদে ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকের কয়েক জন প্রার্থী ছিল। ফলে তাদের প্রার্থী ছাড়া অন্যরা যাতে পরীক্ষা দিতে না পারে, সেজন্য বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন। তাদের প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলেই তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসীয়ূর রহমান ছাত্রবাসের ৩০৪ ও ৩০৯ নম্বর কক্ষে আটকে রাখা হয়।
অপহরণের শিকার এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে আসার সঙ্গে সঙ্গে কিছু শিক্ষার্থী আমাকে শহীদ মসীয়ূর রহমান হলের ৩০৯ নম্বর রুমে নিয়ে যায়। ওই রুমে আমিসহ ৬ জন চাকরি পরীক্ষার্থী ছিলাম। বের হতে চাইলে আমাকে এলোপাতাড়ি কিলঘুসি মারে। আমার চেয়ে রুমের অন্যান্য পরীক্ষার্থীকে অনেক বেশি মারধর করা হয়। তারপর সাড়ে ৩টার দিকে তারাই (অপহরণকারীরা) পালবাড়ি নিয়ে ছেড়ে দেয়।
আরও পড়ুন: ছাত্রলীগের বাধায় ফজিলাতুন্নেছা বিশ্ববিদ্যালয়ে দরপত্র জমা দিতে পারেনি ঠিকাদাররা
আরেক চাকরিপ্রার্থী বলেন, আমাকে প্রধান ফটক থেকে ৩০৪ নম্বর রুমে নিয়ে যায়। কিছু সময় পর পাশের কক্ষ থেকে একজন বলেন, চাকরি বড় নাকি জীবন? তারপর আমি ওয়াশরুমে যাই, ফিরে এসে বলি পরীক্ষা দেব। তখন তারা বলে, যাও তুমি পরীক্ষা দাও। তখন ফোন রেখে পাঠিয়ে দেয়। বলে, পরীক্ষা শেষে প্রধান ফটক থেকে ফোন নিয়ে চলে যাবি। তবে অন্য সবাইকে আটকে রেখে আমাকে কেন ছাড়ল, সেটা জানি না।
ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীর এক অভিভাবক বলেন, আমি সকাল সাড়ে ৯টায় পরীক্ষার জন্য আমার মেয়ের জামাইকে নিয়ে আসি। তখন কিছু ছেলে এসে তাকে ক্যান্টিনের দিকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ। দীর্ঘক্ষণ তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে রেজিস্ট্রার স্যারের কাছে অভিযোগ জানাই। পরবর্তী সময়ে উপাচার্য স্যারকেও অভিযোগ জানাই।
অপহরণের অভিযোগ অস্বীকার করে যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সাল বলেন, অপহরণের বিষয়ে আমি অবগত নই। আমাদের কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ আসেনি। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, যবিপ্রবি ছাত্রলীগের কোনো কর্মী এ ঘটনায় জড়িত নয়।
এ বিষয়ে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ছাত্রলীগের কোনো কর্মী এ অপহরণের সঙ্গে জড়িত নয়। ছাত্রলীগ কখনো নিয়োগের সঙ্গে জড়িত ছিল না। আমাদের কোনো কর্মী যদি পরীক্ষা দেয়, তবে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ভিসি স্যারকে জানাই। পরীক্ষার্থী যদি যোগ্য হয়, তবে তাকে চাকরি দেওয়া হয়।
সার্বিক বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, লিফট অপারেটর পদে চাকরির পরীক্ষা ছিল। সাড়ে ১২টার দিকে আমি জানতে পারলাম কিছু পরীক্ষার্থীকে ছাত্রাবাসে আটকে রাখা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে প্রভোস্টকে বিষয়টি দেখার জন্য পাঠাই এবং প্রভোস্ট আমাকে জানান ছাত্রাবাসে কাউকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তী সময়ে দুপুরের পরে ভুক্তভোগী চাকরিপ্রার্থী ও অভিভাবকরা আমার সঙ্গে দেখা করেন। তারা আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: পবিপ্রবি শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে অনিয়মের ছড়াছড়ি, ব্যবস্থা নেবে ইউজিসি
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে আমরা প্রাথমিকভাবে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। পরবর্তী সময়ে বিকালের দিকে এই ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করতে গেলে ছাত্রলীগের কিছু ছেলে ক্যামেরার হার্ডডিক্স ছিনিয়ে নেয়। ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জাজনক।
জড়িতে শাস্তি বিষয়ে উপাচার্য বলেন, আগামী শনিবার রিজেন্ট বোর্ডে সভা ডাকা হবে। সেখানে এই বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপহরণ মামলা করা হবে।