হাবিপ্রবিতে অন্যের আইডি নিয়ে নানা কর্মকাণ্ডে তরুণ, চেনে না সহপাঠীরা

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

একজন শিক্ষার্থীর আইডি ব্যবহার করে অন্য আরেকজন ক্যাম্পাসের সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মতো বিভিন্ন ইভেন্টে দীর্ঘদিন ধরে অংশগ্রহণ করছেন, এমন অভিযোগ করেছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) কৃষি অনুষদের এক শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, কৃষি অনুষদের ১৯ ব্যাচের মো. মাফিজুর রহমানের আইডি (১৯০১৩১৯) ব্যবহার করে অন্য একজন বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন। অভিযুক্তের ছাত্রত্ব নিয়েও তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। এ বিষয়ে তদন্ত চলমান বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে অভিযুক্ত তরুণের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর বক্তব্যও জানা যায়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত রাফি ১৯তম ব্যাচের কৃষি অনুষদের ‘স্টুডেন্ট আইডি- ১৯০১৩১৯’ পরিচয় ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করছেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় কৃষি অনুষদ। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীও দ্বৈত টিমের সদস্য ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী প্রক্টর, কৃষি অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের সাথেও সেসব ছবি তুলে ফেইসবুকেও দিয়েছেন তিনি।

অভিযোগকারী মাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি এতদিন কিছু না জানলেও সম্প্রতি অন্তঃহল ক্রিড়া প্রতিযোগিতায় রেজিস্ট্রেশনে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে সন্দেহ হলে অনুসরণ করে আমার ব্যাচের এক বন্ধু। এরপর সে দেখতে পায় স্টুডেন্ট আইডির স্থানে সে আমার আইডি ব্যবহার করছে এবং নামের জায়গায় লিখেছে রাফি। বিষয়টি জানার পর আমি সেই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আমার আইডি নম্বরের অপব্যবহার করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও এডভাইজর শাখায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

মাফিজুর রহমান আরো বলেন, আমি জানি না সে আমার আইডি ব্যবহার করে আরও কোথায় কি করেছে। বিষয়টি নিয়ে আমি শঙ্কায় আছি।

এ বিষয়ে কৃষি অনুষদের ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের তিনটি সেকশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত শ্রেণি প্রতিনিধিরা (সিআর) নিশ্চিত করেছেন, অভিযুক্ত কখনো তাদের সেকশনের ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি। কৃষি অনুষদের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললে তারা অভিযুক্তকে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম এবং খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে দেখলেও কখনো ক্লাস কিংবা একাডেমিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে দেখেননি বলে জানান।

গণিত ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী সোহান বলেন, ‘আমি তো ওর সাথে নিয়মিত খেলতে যেতাম। গতকাল সন্ধ্যার পরও জিমনেসিয়ামে ওর সঙ্গে খেলতে আসার কথা ছিল। বিকেলেও ওর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। ও সন্ধ্যার পর খেলতেও আসেনি। তখন ফোন করে ফোনেও পাইনি ওকে। এরপর থেকে ওকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।’

আরো পড়ুন: কর্মীর জন্মদিন পালন নিয়ে দ্বন্দ্ব, অস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি চবি ছাত্রলীগ

কৃষি অনুষদের শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. ইয়াসিন প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আজ আমরা একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা চলছে। সে ক্যাম্পাসে নেই, বাইরে অবস্থান করছে বলে আমাদের জানিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সে শিক্ষার্থীকে ডেকেছি। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে বিষয়টি জানা যাবে। পুরো ব্যাপারটি তদন্তাধীন আছে। দ্রুততম সময়ে অভিযোগের সমাধান করা হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘এক শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। প্রকৃত ঘটনা উদ্ধারে আমরা কাজ করছি। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। কিন্ত তার মোবাইল ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীকে ডাকা হয়েছে। কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। খুব দ্রুত প্রকৃত বিষয়টি জানা যাবে। যদি সে আমাদের শিক্ষার্থী না হয়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ