দীপু-নওফেলের নামে ‘দুর্নীতিতে’ বৈষম্যের শিকার ৭৪৮ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা
বিভিন্ন সরকারি কলেজের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ৪০তম ব্যাচের ৭৪৮ কর্মকর্তা পদায়নের ক্ষেত্রে নিগৃহীত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তাদের দাবি, দুই শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও মাহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নামে ‘দুর্নীতিতে’ তারা পদায়ন নিয়ে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। গতকাল রবিবার (২০ অক্টোবর) তারা বৈষম্য নিরসনের দাবিতে শিক্ষা ভবনে ভীড় করেন।
৪০তম ব্যাচের শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, পদায়নের ক্ষেত্রে আমাদের উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সরকারি কলেজে দেয়া হয়েছে। কিন্তু সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ভাই ডা. জেআর ওয়াদুদ টিপু টাকা নিয়ে ৪১তম বিসিএসে নিয়োগ পাওয়াদের বিভাগ ও জেলা সদরের কলেজগুলোতে পদায়ন দেন। একইভাবে পরের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তার বাবার নামে করা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশনে সরাসরি ডেনেশন নিয়ে তাদের একইভাবে বিভাগ ও জেলা সদরের কলেজগুলোতে পদায়ন দেন।
কিন্তু সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ভাই ডা. জেআর ওয়াদুদ টিপু টাকা নিয়ে ৪১তম বিসিএসে নিয়োগ পাওয়াদের বিভাগ ও জেলা সদরের কলেজগুলোতে পদায়ন দেন। একইভাবে পরের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল তার বাবার নামে করা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশনে সরাসরি ডেনেশন নিয়ে ৪২তম ব্যাচে নিয়োগ পাওয়াদের একইভাবে বিভাগ ও জেলা সদরের কলেজগুলোতে পদায়ন দেন।-৪০তম ব্যাচের শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা
শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা আরও বলেন, নিয়ম অনুসারে আমরা চাকরির দুই বছর হওয়ার আগে বদলির আবেদন করতে পারি না। আমাদের চাকরির দুই বছর হবে আগামী ৪ ডিসেম্বর। কিন্তু ৪১ তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের পদায়নের ফলে জেলা ও বিভাগীয় শহরের কলেজগুলোতে খুব বেশি পদ খালি নেই। যে কয়েকটি পদ আছে সেগুলোতেও ৪৩তম বিসিএসে নিয়োগ পাওয়াদের পদায়নের প্রক্রিয়া চলছে। তাই ৪৩তম বিসিএস থেকে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়াদের পদায়নের আগে আমরা বদলি হওয়ার সুযোগ চাই।
আরও পড়ুন : সিনিয়র অধ্যাপকের এসিআর লিখবেন জুনিয়র অধ্যাপক
৪০তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদ আল আসাদ স্বাক্ষরিত এক স্মারকলিপিতে বলা হয়, আমরা ৪০ তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার ব্যাচ এক নিষ্ঠুরতম বৈষম্যের শিকার হয়েছি। বিশেষভাবে বলতে গেলে পূর্ববর্তী সরকারের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এই কাজ প্রত্যক্ষভাবে বাস্তবায়ন করেছিলেন। ৪০ তম ব্যাচের ৭৪৮ জন কর্মকর্তার প্রায় ৯৯ শতাংশের পদায়ন হয়েছে বিভিন্ন প্রত্যন্ত উপজেলার এবং ইউনিয়ন টেরিটরির সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া কলেজগুলোতে। এই পদায়নের মূল ভূমিকা ছিল তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রীর। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করছি, অত্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবে আমাদের পরবর্তী ব্যাচের আনুমানিক ৫৫ শতাংশ কর্মকর্তার পদায়ন হয়েছে জেলা পর্যায়ের সরকারি কলেজগুলোতে। যা আমাদের জন্য বৈষম্যমূলক। আমাদের পদায়নের পরবর্তী সময়ে তৎকালীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয় আমাদেরকে একাধিকবার জানিয়েছিলেন যে, পরবর্তী ব্যাচগুলোর পদায়নও উপজেলায় দিয়ে পর্যায়ক্রমে সিনিয়র ব্যাচগুলোতেকে জেলা পর্যায়ে বদলি হওয়ার সুযোগ দেয়া হবে। বাস্তবে তা হয়নি, বরং পরবর্তী ব্যাচকে জেলায় পদায়ন দেয়া হয়েছে।
তারা আরও বলেন, ৪০ তম ব্যাচের শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের উপর করা সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ব্যাচটির ৬৬ দশমিক ৭ শতাংশ কর্মকর্তার পদায়ন হয়েছে উপজেলা শহরে। ৩১ শতাংশ কর্মকর্তার পদায়ন হয়েছে ইউনিয়ন টেরিটরিতে। অর্থাৎ শতকরা ৯৮ ভাগের বেশি কর্মকর্তার পদায়ন উপজেলা এবং ইউনিয়ন টেরিটরিতে হয়েছে। শতকরা ৪৯ শতাংশ কর্মকর্তার পদায়ন হয়েছে নিজ উপজেলা থেকে ৩০০ কিলোমিটারের অধিক দূরত্বে। ২৪ শতাংশ কর্মকর্তার পদায়ন হয়েছে ২০০-৩০০ কিলোমিটারের অধিক দূরত্বে।
৪০ তম ব্যাচের শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের উপর করা সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ব্যাচটির ৬৬ দশমিক ৭ শতাংশ কর্মকর্তার পদায়ন হয়েছে উপজেলা শহরে। ৩১ শতাংশ কর্মকর্তার পদায়ন হয়েছে ইউনিয়ন টেরিটরিতে। অর্থাৎ শতকরা ৯৮ ভাগের বেশি কর্মকর্তার পদায়ন উপজেলা এবং ইউনিয়ন টেরিটরিতে হয়েছে। শতকরা ৪৯ শতাংশ কর্মকর্তার পদায়ন হয়েছে নিজ উপজেলা থেকে ৩০০ কিলোমিটারের অধিক দূরত্বে। ২৪ শতাংশ কর্মকর্তার পদায়ন হয়েছে ২০০-৩০০ কিলোমিটারের অধিক দূরত্বে। -৪০তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন
আরও পড়ুন : ৫ আগস্টকে ‘অন্তর্বাস দিবস’ বললেন বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষিকা!
স্মারকলিপিতে বলা হয়, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি এবং তার ভাই জে আর ওয়াদুদ টিপু শিক্ষা ক্ষেত্রে বদলি পদায়নের এক বিশাল সিন্ডিকেট তৈরি করেছিলেন। সেই সিন্ডিকেটের সময়েই আমাদের পদায়ন হয়। যাতে বদলির সময় হলেই আমরা দূরবর্তী কর্মস্থল থেকে বদলি হওয়ার জন্য ঐ সিন্ডিকেটের শরণাপন্ন হই। কিন্তু পরবর্তী শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সময়ে পরবর্তী ব্যাচের পদায়ন হয় জেলা পর্যায়ে, যা আমাদের ব্যাচের জেলা পর্যায়ে বদলির সুযোগ অনেকাংশে সংকুচিত করেছে, কারণ পদ সীমিত।
তাই ৪০তম ব্যাচের শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা ৪৩তম ব্যাচের পদায়নের আগেই বদলির সুযোগ দাবি করেন। তাদের দাবি, ৪৩তম ব্যাচ পদায়ন হয়ে গেলে তাদের জন্য বদলি হয়ে আসার কোন পদই থাকবে না।
আরও পড়ুন : চাকরি ছাড়লেন বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের ১০ কর্মকর্তা
৪০তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দেয়া আব্দুল করিম টাঙ্গাইলের ছেলে। তিনি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার একটি সরকারি কলেজে পদায়ন পান ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর। তিনি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, কলেজ থেকে বাড়ি যেতে সময় লাগে ১৩-১৪ ঘণ্টা। তাই বাড়ি যেতে চাইলেও যাওয়া হয় না। নিজ জেলায় পদ খালি আছে। কিন্তু যেতে পারছি না। এখন ৪৩তম বিসিএসে পদায়ন হলে আমাদের আর নিজ জেলায় ফিরে যাওয়ার সুযোগ হবে না। তাই আমরা ৪৩তম বিসিএসে পদায়নের আগেই নিজ জেলায় বদলি হয়ে যেতে চাই।
গতকাল রবিবার বিকালে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের এ প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের রুটিন দায়িত্বে থাকা কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীমের সঙ্গে ৪০তম ব্যাচের শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা দেখা করেন। তখন অধ্যাপক এ বি এম রেজাউল করীম বলেন, তোমাদের পদায়নের বিষয়টি দেখছি। তোমাদের সিনিয়রদের পদায়নের পর তোমাদের পদায়নের সুযোগ দেয়া হবে। চিন্তার কিছু নেই।