শিক্ষকদের দু’পক্ষের দ্বন্দ্বে থমকে আছে বদলি কার্যক্রম

শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে বেসরকারি শিক্ষক বদলি নীতিমালা জারি করতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়
শিক্ষকদের দ্বন্দ্বে বেসরকারি শিক্ষক বদলি নীতিমালা জারি করতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়  © ফাইল ছবি

বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের বদলি চালুর উদ্যোগ নেওয়া হলেও সে কার্যক্রম থমকে আছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষকদের দু’টি পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে খসড়া নীতিমালা এখনো শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো যায়নি। এ অবস্থায় বদলির পরিপত্র কবে জারি হবে সে বিষয়ে কিছুই বলতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব তৌহিদুল ইসলাম দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষকদের বদলির খসড়া নিয়ে কাজ চলছে। বদলির জন্য যে খসড়া তৈরি হবে, তার চূড়ান্ত অনুমোদন দেবেন শিক্ষামন্ত্রী। এরপর পরিপত্র জারি হবে।

জানা গেছে, ২০১৫ সালের আগে কমিটির পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগ পেতেন শিক্ষকরা। এভাবে একজন শিক্ষক প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ পেতেন। তবে ২০১৫ সালের পর নিয়োগ সুপারিশের ক্ষমতা এনটিআরসিএ’র হাতে যাওয়ায় সে সুযোগও বন্ধ হয়ে গেছে। নিজ এলাকার বাইরে চাকরি করায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটির সভাপতি, সদস্য কিংবা প্রতিষ্ঠান প্রধানের হাতে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের।

শিক্ষকদের নানা সমস্যার কথা বিবেচনা করে গত বছর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি চালুর উদ্যোগ নেয় সরকার। গত বছরের ২২ অক্টোবর বদলি নিয়ে প্রথম কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সে কর্মশালায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি নিয়ে একাধিক পরামর্শ দেওয়া হয়।

সে পরামর্শের আলোকে বদলির খসড়া তৈরি করে মাউশির ঢাকা বিভাগীয় আঞ্চলিক কার্যালয়। খসড়া নিয়ে চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এ কর্মশালায় বদলির খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করা হলেও তা শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো সম্ভব হয়নি।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নানা কারণে বদলির কার্যক্রম থমকে আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় স্বতন্ত্র, আলাদা ধরন ও মানের পরিবর্তন থাকায় বদলি নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া পরিচালনা কমিটি, আলাদা শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে ভিন্নতা, বেতন-ভাতা ও পদোন্নতি নিয়েও আলোচনার টেবিলে জটিলতা দেখা দেয়।

সূত্র আরও জানায়, সব বিষয় সমাধান করে বদলির খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রশাসনের সবাই বদলির বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। তবে শিক্ষকদের দু’টি পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে বদলির খসড়া শিক্ষামন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো যায়নি। একটি পক্ষ শিক্ষকদের বদলির কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছেন।

নানা কারণে বদলির কার্যক্রম থমকে আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় স্বতন্ত্র, আলাদা ধরন ও মানের পরিবর্তন থাকায় বদলি নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া পরিচালনা কমিটি, আলাদা শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে ভিন্নতা, বেতন-ভাতা ও পদোন্নতি নিয়েও আলোচনার টেবিলে জটিলতা দেখা দেয়।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে শিক্ষা প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিক্ষকদের একটি গ্রুপ বদলির কথা বলে টাকা তুলছেন। বিষয়টি মন্ত্রীর কান পর্যন্ত পৌঁছেছে। তিনি বিষয়টিকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন। এজন্য বদলির খসড়া চূড়ান্ত করে তার (মন্ত্রীর) দপ্তরে পাঠানো যায়নি।

এ কর্মকর্তা আরও জানান, প্রাথমিকভাবে প্রস্তুতকৃত খসড়া নিয়ে অনেকেরই আপত্তি থাকতে পারে। বদলির পরিপত্র জারি হওয়ার পর অনেক কিছু পরিবর্তন করা সম্ভব। তবে বদলির প্রক্রিয়া চালু না হলে শিক্ষকদেরই ভোগান্তিতে পড়তে হবে। আমরাই চাই, বদলির প্রক্রিয়া দ্রুত চালু হোক।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ এ বিষয়ে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বদলি নিয়ে নানা সমস্যা রয়েছে। এগুলো সমাধান না করে পরিপত্র জারি করা যাবে না। সবকিছুর সমাধান করে বদলির খসড়া শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তিনি বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন।

বদলির নামে চাঁদা তোলা হচ্ছে, এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক বলেন, এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না- তা আমার জানা নেই। বদলির নামে চাঁদাবাজি করা যাবে না। বদলি একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হবে। কাজেই এ বিষয়ে কেউ চাঁদা দাবি করলে প্রশাসনকে অবহিত করুন।

জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ হয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে। সনদ এবং নিয়োগ প্রদানের বিষয়টি দেখভাল করলেও বদলির বিষয়টি তাদের হাতে নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্র জারি হলে স্কুল-কলেজের বদলির দায়িত্ব পাবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। মাদ্রাসা ও কারিগরির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।

আরো পড়ুন: স্কুলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ে বাধ্য করলে প্রতিষ্ঠান প্রধানই দায়ী থাকবেন

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি ও জনবল কাঠামোর ১৯৯৫, ২০০৫, ২০১০, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২১ সালের নীতিমালায় বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির কথা বলা হয়েছে। ২০২১ সালের ২৮ মার্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এমপিওভুক্ত শিক্ষক বদলির ব্যবস্থা রেখে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল-কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ জারি করে।

এতে বলা হয়, এনটিআরসিএ’র সুপারিশে নিয়োগ পাওয়া এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক/প্রদর্শক/প্রভাষকদের কোনো প্রতিষ্ঠানে শূন্যপদ থাকা সাপেক্ষে সমপদে ও সম স্কেলে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের জন্য মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা প্রণয়ন করে জনস্বার্থে আদেশ জারি করতে পারবে। এমপিও নীতিমালায় বলা হলেও শিক্ষকদের বদলির কার্যক্রম এখনও চালু করা যায়নি।


সর্বশেষ সংবাদ