রাবির খেলার মাঠে ঢাবি শিক্ষার্থীর ভাইরাল হওয়া ছবিটি হামলার আগের

ইমন নামের ঢাবির ওই খেলোয়াড় চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ছেন
ইমন নামের ঢাবির ওই খেলোয়াড় চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ছেন  © সংগৃহীত

আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতার ফাইনাল খেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ক্রিকেট টিমের খেলোয়াড়দের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ কামাল স্টেডিয়ামে আয়োজিত এই প্রতিযোগিতায় চলাকালীন সময়ে শেষের দিকে মাঠে ঢুকে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট টিমের খেলোয়াড়দের ওপর অতর্কিত ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং হামলা চালায় বলে জানা গেছে।

এই হামলার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আহত একজন খেলোয়াড়কে মাঠের বাইরে নিয়ে যাওয়ার ছবি বিভিন্ন গণামাধ্যম ও পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গণামাধ্যমে প্রকাশিত এরকম কিছু প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে

তবে টিডিসি ফ্যাক্টচেকের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাবির শিক্ষার্থীর ভাইরাল হওয়া ছবিটি ওইদিনের হামলার ঘটনাটি ঘটার কিছু সময় আগের। অর্থাৎ, খেলার দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬তম ওভারের দিকে ক্যাচ ধরতে গিয়ে ওই খেলোয়াড় চোট পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি দুইজনের কাঁধে ভর দিয়ে মাঠ ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন। সেই ছবিটি ভুলবশত হামলায় আহত বলে প্রচারিত হয়েছে।

বুধবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) আহত ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় টিডিসি ফ্যাক্টচেকের। এসময় তিনি জানান ওইদিন কি ঘটেছিল। কামরুজ্জামান ইমন নামে মনোবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের এই শিক্ষার্থী আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় ঢাবি টিমের সদস্য ছিলেন।

তিনি জানান, খেলার দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬তম ওভারের দিকে আমি পায়ে ব্যাথা পেয়ে মেডিকেল ট্রিটমেন্টের জন্য মাঠ থেকে বের হয়ে যায়। এরপর তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে ১৮তম ওভারের দিকে যখন মাঠে প্রবেশ করে তখনই ঝামেলা শুরু হয়।

“এসময় কয়েকজন আমার জামা টানাটানি শুরু করেন। তারা রাবি নাকি বহিরাগত নিশ্চিত নই আমি। এসময় আমার সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। তখন একজন স্ট্যাম্প দিয়ে পেছন দিক থেকে আমাকে আঘাত করেন। সেসময় রাবির শিক্ষার্থী কয়েকজন সেভ করে শিক্ষকদের রুমে নিয়ে যান। সেসময় সেখানে আমার সঙ্গে ২-৩ জন খেলোয়াড় ছিল। পরবর্তীতে আমরা সবাই একসঙ্গে হই।” 

এ বিষয়ে রাবির প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, বিশৃঙ্খলা ঘটার আধাঘন্টা আগে ওই খেলোয়াড় আহত হন। তার চিকিৎসার জন্য আমরা তাকে তৎক্ষণাৎ মেডিকেলে পাঠাই। তারপর বিশৃঙ্খলা ঘটলে পুলিশ প্রটোকলে তাদের আমরা বাসে উঠিয়ে দেয়। ওই খেলোয়াড়ের সাথে মারামারির কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু কাঁধে ভর করে খুঁড়িয়ে যাওয়ার ছবি নিয়ে গণমাধ্যমে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। যা সত্য নয়। 

স্টেডিয়ামে খেলা দেখছিলেন রাকিব হাসান। তিনি বলেন, ঢাবির যে খেলোয়াড়টি হাই রিস্ক নিয়ে ক্যাচ ধরতে গিয়ে পায়ে আঘাত পায়, সেই খেলোয়াড়ের পায়ের ক্ষতের ছবি ও কাঁধে ভর দিয়ে মাঠ ত্যাগ করার ছবিটা দিয়ে 'রাবি শিক্ষার্থীদের হামলা' দাবি করে প্রচার করা হয়েছে। মূলত ছবির ওই খেলোয়াড়ের ১৭তম ওভারে ক্যাচ ধরতে গিয়ে পায়ে টান লাগে এবং এর জন্য লং টাইম খেলা বন্ধ ছিল। পরে দুজনের কাঁধে ভর দিয়ে মাঠ থেকে তাকে উঠে যেতে হয়। তখনকার ভিডিও থেকে অতি সহজেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। এই দুটো ছবিকে একদল 'হাতিয়ার' বানিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। যা খুবই নিন্দনীয়।

এ বিষয়ে রাবি ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় মোমিন বলেন, যে ছবিটা দেখানো হচ্ছে সেটা খেলা চলাকালীনে আঘাত পাওয়া খেলোয়াড়ের ছবি। রিস্ক নিয়ে ক্যাচ ধরতে গিয়ে তিনি পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন। 

খেলার স্কোর: প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে ঢাবি ক্রিকেট দল সংগ্রহ করে ১৪৯ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৮ ওভার শেষে রাবি ক্রিকেট দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১৩০ রান। জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল আরও ২০ রান। পরের ওভারের (১৯তম ওভার) প্রথম বলে লং অনে উড়িয়ে মারেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ব্যাটসম্যান। বলটি বাউন্ডারি লাইনে ড্রাইভ দিয়ে তালুবন্দী করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড় সাকিব। আউট হয়েছে কি না সেই সিদ্ধান্ত দেওয়ার আগে মাঠে ঢুকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলোয়াড়দের ওপর হামলা করেন।

ফলাফল: হামলার পর  আলোক স্বল্পতার কারণ দেখিয়ে খেলাটি স্থগিত করে ও পরে উভয় দলকে (ঢাবি ও রাবি) যৌথভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন ম্যাচ রেফারি।


সর্বশেষ সংবাদ