ঢাকা বোর্ডের তদন্ত প্রতিবেদন

ফেল করার কথা বাবাকে জানানো নিয়ে ভয়ে ছিলেন পারপিতা

পারপিতা ফাইহা
পারপিতা ফাইহা  © ফাইল ছবি

রাজধানীর হলিক্রস স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী পারপিতা ফাইহার পরীক্ষায় ফেল করে হতাশায় ভুগছিলেন। ফেলের বিষয়টি বাবার কাছে জানানো নিয়ে ভয়ে ছিলেন তিনি। এছাড়া তার মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও ছিল।

পারপিতা ফাইহার আত্মহত্যার ঘটনায় ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের জমা দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) এই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। গত ২৩ আগস্ট তেজগাঁওয়ের একটি বহুতল ভবন থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন পারপিতা।

ঢাকা বোর্ডের উপ-কলেজ পরিদর্শক মুহাম্মদ রবিউল আলমের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন। প্রতিবেদনে স্থায়ীভাবে মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ দেওয়াসহ ছয় দফা সুপারিশ করা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯–উত্তর শিখনঘাটতি ও উচ্চতর গণিত বিষয়টি শিক্ষার্থীদের কাছে নবম শ্রেণিতে নতুন ও অপেক্ষাকৃত জটিল হওয়ায় এ বিষয়ে অকৃতকার্যের হার লক্ষণীয় পর্যায়ে। এ ছাড়া কোভিড-১৯–পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের ঘাটতি পূরণে হলিক্রস উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা নেয়নি।

তদন্ত কমিটি পারপিতার ডায়েরির তিনটি পাতার লেখা দেখে তার মধ্যে একধরনের বিচ্ছিন্নতাবোধ এবং হতাশার (ডিপ্রেশন) চিত্র লক্ষ করেছে। এ জন্য ডায়েরির ওই তিনটি পাতার অধিকতর এবং যুক্তিসিদ্ধ মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা উদ্‌ঘাটনে একজন মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ গ্রহণ করার জন্য মতামত দিয়েছে তদন্ত কমিটি। তারা আরও বলেছে, পারপিতা দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা ‘সিক বেডে’ দেয়নি। প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় দুই-তিনটি পরীক্ষা দিয়েছিল সিক বেডে। কারণ, তখন তার বসন্ত রোগ হয়েছিল।

ছয় দফা সুপারিশ
সার্বিকভাবে তদন্ত প্রতিবেদনে ছয়টি সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলো হলো, শিক্ষার্থীদের মানসিক সুস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে হলিক্রস উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ে স্থায়ীভাবে একজন মনোবিজ্ঞানী নিয়োগ করা, শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি (মাইন্ডসেট তৈরি), শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক উন্নয়ন ও পরীক্ষাসহ বিদ্যালয়ের সহশিক্ষাক্রমসংক্রান্ত বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভীতি দূর করতে সেমিনারের আয়োজন করা এবং শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ ও পরীক্ষায় সন্তানকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে সহায়তার বিষয়ে অভিভাবকদের করণীয় বিষয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা দরকার।

এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২’ নিয়মিত তদারকের মাধ্যমে জোরদার করা, বিভিন্ন সাময়িক পরীক্ষায় বিভিন্ন বিষয়ে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করা এবং শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করার বিষয়েও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।


সর্বশেষ সংবাদ