প্লাস্টিক বোতল দিয়ে কৃত্রিম হীরে তৈরি করলেন বিজ্ঞানীরা

বোতল থেকে হীরে
বোতল থেকে হীরে  © প্রতীকী ছবি

পৃথিবীর মানুষ যত সভ্য হচ্ছে ততটাই বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে পৃথিবীকে। তার অন্যতম কারণ হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। যেসব বস্তু পরিবেশকে দূষিত করছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্লাস্টিক পলিইথাইলিন টেরেপথ্যালেট (পিইটি বা পেট) বোতল। কিন্তু এই দূষণের কারণই যদি হীরে হয়ে উঠে তাহলে বিষয়টা কেমন দাঁড়ায়?

এমনি এক বিস্ময়কর আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠা এই পেট বোতল দিয়ে কৃত্রিম হীরে তৈরি করেছেন জার্মানি ও আমেরিকার একদল বিজ্ঞানী। শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) বিজ্ঞান বিষয়ক পিয়ার রিভিউ জার্নাল সায়েন্স অ্যাডভান্সেস গবেষণার ফল প্রকাশ করেছন বিজ্ঞানীরা। একে তারা নাম দিয়েছেন ন্যানো-ডায়মন্ড।

২০১৭ সালে ল্যাবরেটরিতে ওই গ্রহ দুটির মতো কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করে পলিস্টিরিন (স্টাইরোফোম) থেকে ছোট হীরার খণ্ড তৈরি করতে সক্ষম হন এই বিজ্ঞানীরা। ৫ বছর পর তারা আবারও একই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তবে এবার ব্যবহার করেছেনে আমাদের অতি পরিচিত প্লাস্টিক পলিইথাইলিন টেরেপথ্যালেট (পিইটি বা পেট)।

গবেষণার ফল বিজ্ঞানীরা বলছেন, গবেষণাটি শুধু মহাকাশ নিয়ে আমাদের জ্ঞানভাণ্ডারকেই সমৃদ্ধ করবে না, একইসঙ্গে ফেলে দেয়া প্লাস্টিক ব্যবহার করে ন্যানো-ডায়মন্ড তৈরিতেও সহায়ক হবে।

গবেষক দলের প্রধান ও জার্মানির হেলমহোল্ট-জেনট্রুম ড্রেসডেন রোজেনডর্ফ গবেষণাগারের বিজ্ঞানী ডমিনিক ক্রাউস জানান, তারা পলিস্টিরিনকে লাইন্যাক কোহেরেন্ট লাইট সোর্স নামের এক ধরনের উচ্চশক্তির এক্স-রে লেজার দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। ফলে এর তাপমাত্রা বেড়ে ৫ হাজার কেলভিনে (৮ হাজার ৫৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইটে) পৌঁছায়। একই সঙ্গে একে ১৫০ গিগাপ্যাসক্যাল চাপে সংকুচিত করে ফেলা হয়। এ তাপ ও চাপ ইউরেনাস ও নেপচুনের ৬ হাজার মাইল অভ্যন্তরের চাপ ও তাপের সমান।

আরও পড়ুন: রাজনীতি ঠেকাতে মরিয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, যা বলছে ছাত্রলীগ

তত্ত্বকে প্রমাণের জন্য ক্রাউস ও তার দল এক টুকরো পেট প্লাস্টিককে আগের মতোই অত্যধিক চাপ ও তাপের মধ্যে রাখেন। তবে এবার তারা যোগ করেছিলেন এক্স-রের ছোট কৌণিক বিচ্ছুরণ।

আমরা জানি, পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্রচণ্ড চাপ ও তাপে হাইড্রোকার্বন হীরায় পরিণত হয়। সৌরজগতের দুটি গ্রহ নেপচুন ও ইউরেনাসে রয়েছে হীরকখণ্ডের ছড়াছড়ি। এমনকি নিয়মিত সেখানে হীরার বৃষ্টিও হয়। তবে ইউরেনাস ও নেপচুনে হীরা গঠনের প্রক্রিয়া একেবারেই আলাদা।

গবেষণাটির মূল বৈজ্ঞানিক উদ্দেশ্য ছিল সৌরজগতের বরফময় দুই গ্রহ নেপচুন ও ইউরেনাসের চরম আবহাওয়ায় কী করে হীরার বৃষ্টি হয় সেটা জানা। ক্রাউস ও তার দলের ধারণা, এতদিন তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব বলে ধরে নেয়া বিশেষ ধরনের এক পানি তারা তৈরি করতে পেরেছেন।

বিশেষ এ পানির নাম সুপার-আয়নিক ওয়াটার। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এ ধরনের পানি দিয়েই নেপচুন, ইউরেনাসের মতো বরফময় গ্রহের ভূ-ত্বকের আবরণ তৈরি হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ