বাড়ছে সাইবার অপরাধ, বেশি শিকার নারীরা

বাড়ছে সাইবার অপরাধ
বাড়ছে সাইবার অপরাধ  © সংগৃহীত

তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। গত এক বছরে দেশে দ্বিগুণ হারে বাড়ছে সাইবার অপরাধের নতুন মাত্রা। যা এই সময়ে মোট অপরাধের ১১ দশমিক আট পাঁচ শতাংশ। সাইবার অপরাধে আক্রান্তদের মধ্যে শতকরা ৫৯ ভাগই নারীরা। তবে লোক লজ্জার ভয়ে আইনের আশ্রয় নিতে চান না ভুক্তভোগীরা।

শনিবার (২৯ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত 'বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ প্রবণতা ২০২৪ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ উদীয়মান প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা' শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রকাশিত গবেষণায় জানানো হয়— অপরাধের শীর্ষে রয়েছে সোশাল মিডিয়া ও অনলাইন অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নেওয়া (হ্যাকিং) সংক্রান্ত অপরাধ, যা মোট সংঘটিত সাইবার অপরাধের ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আক্রান্তদের ৫৯ ভাগই নারী। গতবছর ২৮ হাজারেরও বেশি ভুক্তভোগী সাইবার অপরাধের শিকার হয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে। এসব ভুক্তভোগীদের মধ্যে মাত্র ৩ দশমিক ৭৩ শতাংশ মামলা করেছে। তবে প্রকৃত অপরাধের সংখ্যা আরও অনেক বেশি। ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে অপপ্রচার সংক্রান্ত সাইবার অপরাধের শিকার বেশি হচ্ছেন নারীরা। পর্নোগ্রাফী সংক্রান্ত সাইবার অপরাধেও নারী ভুক্তভোগী বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী— সাইবার অপরাধের শিকার শতকরা ৭৮.৭৮ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছর।  ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৪৭.৭২ শতাংশ সামাজিক মর্যাদাহানী, ৪০.১৫ শতাংশ আর্থিক ক্ষতির শিকার এবং প্রায় সবাই মানসিক যন্ত্রণার শিকার হয়েছেন। 

এই ভুক্তোভোগীদের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮১.২৫ শতাংশ সাধারণ ডায়েরি এবং ১৮.৭৫ শতাংশ লিখিত অভিযোগ করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগকারীদের মধ্যে ১২.৫০ শতাংশ সুফল পেয়েছেন; বাকি ৮৭.৫০ শতাংশই অভিযোগ করে কোনো সুফল পাননি। 

জানা যায়, অভিযোগকারীদের বেশিরভাগই শিক্ষিত। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সর্বোচ্চ ৪০.৯০ শতাংশ ভুক্তভোগী উচ্চ মাধ্যমিক পাস, ২১.২১ শতাংশ স্নাতক/সম্মান পাস, ১৬.৬৬ শতাংশ মাধ্যমিক পাস এবং ১২.৮৭ শতাংশ মাধ্যমিকের নিচের। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৩ সালের মোট সাইবার অপরাধের শতকরা সাড়ে এগারোভাগই পর্নোগ্রাফি বিষয়ক ক্রাইম।

ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘আমরা হয়তো ল্যাপটপ কিংবা ফোনটি পেলাম। কিন্তু ওর সামনে কে ছিলো সেটা পাওয়া কঠিন।’ অনুষ্ঠানে, সাইবার অপরাধ থেকে বাঁচতে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন বিটিআরসির মহাপরিচালক। সতর্ক করেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরাধ সম্পর্কেও। 

বিটিআরসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেকে লোভে পড়ে সাইবার অপরাধের শিকার হয়। এসব লোভনীয় অফার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। তিনি বলেন ‘ওদের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড, আইডি বন্ধ করা না করা বাংলাদেশের সাথে মেলে না। আমরাও ঝামেলায় পরি।’ 

বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজি’র কোষাধ্যক্ষ ব্যারিস্টার নাজমুস সালিহিন বলেন, সাইবার ক্রাইম করা খুব সহজ এবং অপরাধীকে সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ অপরাধে ব্যবহৃত ল্যাপটপ বা মোবাইল অপরাধীই ওই সময় ব্যবহার করছিলো এটি প্রমাণ করা বেশ জটিল। তাছাড়া, সাইবার আইনে অনলাইন জুয়ার মামলাগুলোর পেছনে মানি লন্ডারিং রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ