ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থীদের মতো অকৃতজ্ঞ অ্যালামনাই বিশ্বে আছে কিনা সন্দেহ!

কামরুল হাসান মামুন
কামরুল হাসান মামুন  © ফাইল ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইয়ের মত এত অকৃতজ্ঞ, ক্ষেত্র বিশেষে কৃতঘ্ন, অ্যালামনাই (শিক্ষকসহ) এই বিশ্বে আছে কিনা সন্দেহ। ৩৫ হাজারের বেশি ছাত্র-ছাত্রীর এই বিশাল মুক্তিযোদ্ধা বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকার কত সামান্য বরাদ্দ তা কল্পনাও করা যায় না।

কারা এই সিদ্ধান্ত নেয়? অধিকাংশই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই। বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্তগুলো যারা নেয় তাদের অধিকাংশই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই।

অ্যালামনাইরা পাস করে গিয়ে সফল হলে যেখানেই থাকুক বিশ্ববিদ্যালয়কে সাহায্য করে। এইটাকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। অ্যালামনাইরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেসব সুবিধা পেয়েছে তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আর যেসব সুবিধা পায়নি ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন পায় তার জন্য অকাতরে ডোনেট করে।

এই ডোনেশন দিয়েই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দানের অর্থের পরিমাণ ৪৯ বিলিয়ন ডলার। যা আমাদের বাংলাদেশের রিজার্ভের দ্বিগুণের বেশি। মানে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজার্ভ একটি দেশের রিজার্ভের চেয়ে বেশি। এই টাকা থেকেই তারা বিশ্বের অসংখ্য শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপ দেয়।

আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর পরিবার অনেক দরিদ্র। বিশ্বে এমন শিক্ষার্থী কোথায় পাবেন যে কেবল নিজের লেখাপড়ার খরচই চালায় না একইসাথে পরিবারকেও সাহায্য করে। কিন্তু অতিরিক্ত উপার্জন করতে গিয়ে অনেকের লেখাপড়াটায় সময় না দিতে পেরে ছিটকে যায়।

করোনাভাইরাসের সময় আমি দেখেছি আমাদের শিক্ষার্থীদের দুরবস্থা। একজন শিক্ষার্থী ছিল ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করা বাবার সন্তান। করোনার সময় ভীষণ বিপদে পড়ে গিয়ে আমার কাছে লিখেছিল। সেই শিক্ষার্থী এই বছর পিএইচডি করতে আমেরিকায় যাচ্ছে।

কিছুদিন আগে আমি এক ছাত্রের আর্থিক অবস্থার কথা ফেসবুকে লিখলে একজন এগিয়ে এসে তার জন্য একটা বৃত্তির ব্যবস্থা করে দেন। গতকাল একজন আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছে আমি যেন একজন আর্থিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষার্থীকে পাইয়ে তার সংযোগ ঘটিয়ে দেই। তিনি কিছু অর্থ সঞ্চয় করেছেন, সেটা দরিদ্র কিন্তু মেধাবী কোন শিক্ষার্থীর পেছনে ব্যয় করতে চান।

বাংলাদেশে এইরকম অসংখ্য মানুষ আছেন, যারা ইচ্ছে করলেই একজন ছাত্রের দায়িত্ব নিতে পারেন। অথবা কিছু অর্থ দান করতে পারেন। যেই টাকা থেকে ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করা যায়।

আগে শিক্ষার্থীদের জায়গীরের ব্যবস্থা ছিল। এই প্রথা এখন বিলুপ্তির পথে। আপনারাতো অনেকেই জানেন আমাদের আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা কি অমানবিক জীবনযাপন করে। শুধু তাই না। তারা শারীরিক নির্যাতনেরও শিকার হয়। 

এইতো কিছুদিন পরই নতুন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় ক্যাম্পাস মুখরিত হবে। তারা এসে কোথায় থাকবে? তাদের এই দুর্বলতার সুযোগ নেয় আমাদের পচা গলা রাজনীতি। তারা তখনই তাদের ব্যবহার করে মিছিলে যেতে, মিটিংয়ে যেতে। 

বিনিময়ে এদের জায়গা হয় গণরুমে। গণরুম মানে ৪ জন থাকা যায় এমন রুমে ৪০ জন থাকে, আর শিফট করে ঘুমায়। যেখানে পড়ার কোন টেবিল নাই, ঘুমানোর কোন বিছানা নাই। পৃথিবীতে এমন বিশ্ববিদ্যালয় কোথাও পাবেন? শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল হয় অনেকটা ৩ তারকা হোটেলের মত। কত আরামে থাকে, পড়ে, ঘুমায়, রান্না করে।

এই শহরের অনেকেই পারেন তাদের একজনের দায়িত্ব নিতে। অথবা কয়েকজন মিলে একজনের দায়িত্ব নিতে। একজনকে রক্ষা করা মানে দেশের একটি শিক্ষার্থী উন্নত মানুষ হতে সাহায্য করা। ভাবতে পারেন আপনি কত বড় কাজ করে ফেললেন? আপনার সামান্য টাকা এর চেয়ে বেটার কোনোভাবে খরচ করতে পারতেন বা পারবেন?

দেশটাকে সুন্দর বানাতে চাইলে অন্যের সন্তানদের ভালোভাবে গড়ে উঠতে সাহায্য করুন। তাতে আপনার সন্তান ভালো থাকার পরিবেশ পাবে।

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 

সর্বশেষ সংবাদ