যেভাবে সর্বজনীন পেনশনে অংশ নেবেন
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৫ আগস্ট ২০২৩, ১০:২৭ AM , আপডেট: ১৫ আগস্ট ২০২৩, ০২:৪৮ PM
চার শ্রেণিকে বিবেচনায় নিয়ে সর্বজনীন পেনশন বিধিমালা জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। চারটি স্কিম হলো- প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য প্রবাস স্কিম, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের জন্য প্রগতি স্কিম, স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য সুরক্ষা স্কিম ও স্বকর্মে নিয়োজিত স্বল্প আয়ের নাগরিকদের জন্য সমতা স্কিম।
সোমবার (১৪ আগস্ট) জারি করা বিধিমালা অনুযায়ী ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী নাগরিকরা চারটি স্কিমের মাধ্যমে এতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। জাতীয় পরিচয়পত্রধারী সকল বাংলাদেশি নাগরিক স্কিমে অংশগ্রহণের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন।
এসব স্কিমে যুক্ত হয়ে আজীবন পেনশন সুবিধা পেতে ন্যূনতম ১০ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিতে হবে। তবে পরপর তিন মাস চাঁদা দিতে ব্যর্থ হলে পেনশন হিসাব স্থগিত হয়ে যাবে। এরপর জরিমানাসহ সমুদয় বকেয়া কিস্তি পরিশোধ না করা পর্যন্ত হিসাবটি সচল করা হবে না।
আগামী ১৭ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে সংযুক্ত থাকবে গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, রংপুর জেলা ও সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস। এর পরই বিধিমালা কার্যকর হবে। এ কর্মসূচির আওতায় প্রবাসীদের জন্য ‘প্রবাস’, বেসরকারি কর্মচারীদের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিত (অনানুষ্ঠানিক খাত) ব্যক্তিদের জন্য ‘সুরক্ষা’ এবং অতিদরিদ্রদের জন্য ‘সমতা’– এ চারটি স্কিমের কথা উল্লেখ রয়েছে বিধিমালায়।
এসব স্কিমে যুক্ত হয়ে বেসরকারি খাতের কর্মচারী বা প্রবাসীরা তাদের মোট চাঁদার চেয়ে সর্বনিম্ন ২ দশমিক ৩০ গুণ থেকে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৩১ গুণ অর্থ পেনশন হিসেবে পাবেন।
প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের মধ্যে যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তারা তাদের জন্য প্রযোজ্য স্কিমে পাসপোর্টের ভিত্তিতে নিবন্ধন করতে পারবেন। তবে শর্ত রয়েছে, সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করে তার অনুলিপি কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হবে। শর্তের মধ্যে আরও রয়েছে, নিয়মিতভাবে পাসপোর্ট নবায়ন বা পুনঃইস্যুর ক্ষেত্রে নবায়নকৃত বা পুনঃইস্যুকৃত পাসপোর্টের অনুলিপি কর্তৃপক্ষের নিকট জমা দিতে হবে।
চাঁদা দিবেন যেভাবে
* কোনো ব্যক্তি যে স্কিমের আওতায় নিবন্ধিত হবে সে স্কিমের জন্য ধারণকৃত হারে নিয়মিত চাঁদা দিতে হবে।
* নিবন্ধনের পর আবেদনকারী মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে তফশিলি ব্যাংকের কোনো শাখায় ওটিসি (ওভার দ্যা কাউন্টার) পদ্ধতিতে নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে মাসিক চাঁদা জমা করবেন।
* প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকরা ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রায় মাসিক চাঁদার টাকা কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে জমা করবেন।
* নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা জমা করতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া চাঁদা প্রদান করা যাবে এবং এক মাস অতিবাহিত হলে পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ১ শতাংশ হারে বিলম্ব ফি জমা প্রদান সাপেক্ষে হিসাবটি সচল রাখা যাবে।
* কোনো চাঁদা দাতা ধারাবাহিকভাবে তিন কিস্তি চাঁদা জমা দিতে ব্যর্থ হলে তার পেনশন হিসাবটি স্থগিত হবে এবং প্রতিদিনের জন্য সমুদয় বকেয়া কিস্তি পরিশোধ না করা পর্যন্ত হিসাবটি সচল করা হবে না।
* চাঁদা দাতারা মাসের নাম উল্লেখ করে যে কোনো পরিমাণ চাঁদার টাকা অগ্রিম হিসাবে জমা করতে পারবেন।
* কোনো প্রতিষ্ঠান স্কিমে অংশগ্রহণ করলে কর্মী এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য ধার্যকৃত মাসিক চাঁদা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক একত্রে তহবিলে জমা করতে হবে।
* সকল স্কিমের জন্য চাঁদার ভিত্তি চাঁদা দাতার পছন্দ অনুযায়ী মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিক ভিত্তিতে পরিশোধের সুযোগ থাকবে।
* চাঁদার টাকা জমা হলে চাঁদা দাতার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে অবহিত করা হবে এবং নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা প্রদান করা না হলে বিলম্ব ফিসহ চাঁদা জমাদানের জন্য চাঁদা দাতার রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বরে মেসেজ পাঠানো হবে।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ জানুয়ারি সব নাগরিককে পেনশনের আওতায় আনতে সংসদে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা বিল-২০২৩’ পাস হয়। বিলে ১৮ বছর থেকে ৫০ বছর বয়সী সব নাগরিকের নির্ধারিত হারে চাঁদা পরিশোধ করে ৬০ বছর পূর্তির পর আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করার বিধান রাখা হয়। ছাড়া বিশেষ বিবেচনায় ৫০ বছরের বেশি বয়সীরাও এই আইনের আওতায় নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা পরিশোধ করে পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে স্কিমে অংশগ্রহণের তারিখ থেকে নিরবচ্ছিন্ন ১০ বছর চাঁদা প্রদান শেষে তিনি যে বয়সে উপনীত হবেন, সে বয়স থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্য হবেন। আজীবন বলতে পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত বিবেচনা করা হয়েছে।