আর্থিক খাতে সেরা তিন উদ্ভাবন পেল কোটি টাকা পুরস্কার
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৩, ১১:৫৯ AM , আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৩, ১২:১৩ PM
দেশের আর্থিক লেনদেনে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধিতে নারীবান্ধব সমাধান উদ্ভাবন এবং অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্পের উদ্যোক্তাদের রক্ষায় উদ্ভাবনী আইডিয়ার জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠানকে কোটি টাকা পুরস্কার প্রদান করেছে ফিনল্যাব বিডি। এটি এটুআই, জাতিসংঘের মূলধন উন্নয়ন তহবিল (ইউএনসিডিএফ) এবং মাইক্রোসেভ কনসাল্টিং (এমএসসি) এর যৌথ উদ্যোগ।
সোমবার (২৪ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরের মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ‘উইমেনস ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন চ্যালেঞ্জ ২০২২’ ও ‘সিএমএসএমই ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ ২০২২’র বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক’র নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মেটলাইফ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলা উদ্দিন আহমদ এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হুসেইন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এটুআই’র প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া।
আর্থিক খাতে সেরা আইডিয়া দিয়ে পুরস্কার পাওয়া তিন উদ্ভাবক হলো- ডানা ফিনটেক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) ও আপন ওয়েলবিয়িং। উদ্ভাবনী আইডিয়ার জন্য ডানা ফিনটেককে ৭৫ লাখ টাকা, এমটিবিকে ৫০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং আপন ওয়েলবিয়িংকে ৫০ লাখ টাকার ডেমো চেক দেওয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক’র সার্বিক তত্ত্বাবধানে আইডিয়াগুলো পরীক্ষণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।
ডানা ফিনটেক তাদের উদ্ভাবনের মাধ্যমে এমন একটি ক্রেডিট স্কোরিং পদ্ধতি তৈরি করবে যার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোক্তারা ডিজিটালি ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সুযোগ তৈরি হবে। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক তাদের ‘ডেলাইট লোন’র উদ্ভাবনী আইডিয়ার মাধ্যমে এমন একটি আর্থিক ঋণের মডেল তৈরি করা হবে, যার মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনই ঋণ গ্রহণের সুযোগ পাবেন। সকালে ঋণ গ্রহণ করে সূর্যাস্তের আগে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন।
এর ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার প্রসার বাড়াতে পারবেন। এদিকে আপন ওয়েলবিয়িং একটি ওমনিচ্যানেল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে যার মাধ্যমে পোশাক শ্রমিকরা বিশেষ করে নারীরা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আসবেন। তারা নিজেদের পোশাক কারখানায় এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নিত্যপণ্য ক্রয় ও সংরক্ষণ করতে পারবেন। একইসঙ্গে এর মাধ্যমে সঞ্চয় এবং ঋণ গ্রহণ করার সুবিধা পাবেন।
সারাদেশ থেকে আসা ১২৩টি উদ্ভাবনী আইডিয়া থেকে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই, বুটক্যাম্প, গ্রুমিং এবং টেকনিক্যাল ইভালুয়েশন প্যানেলসহ কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে সম্মানিত বিচারকমণ্ডলী তিনটি আইডিয়াকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেজবাউল হক বলেন, ‘আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণকে আরো ত্বরান্বিত করতে হলে আর্থিক সেবাখাতে উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ এবং নতুন নতুন ফিনটেক প্রোডাক্ট উদ্ভাবন অত্যন্ত জরুরি। এটুআই প্রকল্প সবসময় উদ্ভাবনী সংস্কৃতি ধারণ করে এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণের সুযোগ করে দিতে চায়। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য দেশের ইকোসিস্টেমের সঙ্গে উদ্ভাবনের সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘যদি আমরা পেমেন্ট সিস্টেমকে ক্যাশলেস করতে পারি তাহলে নাগরিক সেবাগুলো আরও প্রান্তিক পর্যায়ে নেয়া ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনা সম্ভব হবে। এগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে সরকার যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছে সেই লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব। সবার সহযোগিতায় একটি বৈষম্যহীন আর্থ-সমাজ গঠনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বাংলাদেশ ব্যাংক।’
মেটলাইফ বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আলা উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘বীমা সেবা, জনশক্তি ও বিনিয়োগের মাধ্যমে মেটলাইফ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর্থিক সেবা পাওয়ার সুবিধা মানুষের জীবনযাত্রার মান বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এজন্যই আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সম্প্রসারণে কাজ করাকে মেটলাইফ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। ফিনল্যাব প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আমরা দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমাদের সহায়তা দিতে পেরে আনন্দিত।’
এটুআই’র প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো. মামুনুর রশীদ ভূঁইয়া বলেন, ‘ফিনান্সিয়াল ইনোভেশন ল্যাব (ফিনল্যাব বিডি) একটি মহৎ উদ্যোগ, যা নতুন নতুন ফিনটেক প্রোডাক্ট উদ্ভাবন এবং পাইলটিং এর মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণকে ত্বরান্বিত করবে। আমি বিশ্বাস করি, ফিনল্যাব বিডি কর্তৃক আয়োজিত ফিনটেক ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ-২২ এর মাধ্যমে নির্বাচিত উদ্ভাবকরা নতুন ফিনান্সিয়াল ইনোভেটিভ প্রোডাক্ট তৈরির সুযোগ পাবে, যা নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের আর্থিক অভিগম্যতা তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, আমি ধন্যবাদ দিতে চাই, বাংলাদেশ ব্যাংকের রেগুলেটরি ফিনটেক ফ্যাসিলিটেশন অফিসকে যারা এই চ্যালেঞ্জ ফান্ড কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করছে। আমি আরও ধন্যবাদ দিতে চাই বিভিন্ন দাতা সংস্থাকে বিশেষ করে মেটলাইফ ফাউন্ডেশনকে, যারা এই চ্যালেঞ্জ ফান্ড এ আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করছেন।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হুসেইন বলেন, ‘এটুআই ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্ভাবনকে সহযোগিতা করে এসেছে। উদ্ভাবনসুলভ এই কাজটা করে যাওয়ার জন্য এটুআইকে ধন্যবাদ। এ ধরনের আয়োজন উদ্ভাবকদের অনুপ্রাণিত করবে। ভবিষ্যতে আরও নতুন নতুন উদ্ভাবনী আইডিয়া আসবে। এর মধ্য দিয়ে দেশের পিছিয়ে থাকা মানুষরা আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আসবেন। প্রযুক্তির সহযোগিতায় অন্তর্ভুক্তিমূলক ক্যাশলেস সমাজ গঠন সম্ভব হবে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অবদান রাখতে টেকসই ব্যবসায়িক মডেল তৈরিতে স্টার্টআপ ও উদ্যোক্তাদের সহায়তার লক্ষ্যে এটুআই, জাতিসংঘের মূলধন উন্নয়ন তহবিল (ইউএনসিডিএফ) এবং মাইক্রোসেভ কনসাল্টিং (এমএসসি) যৌথভাবে ফিনল্যাব বিডি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে। আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে এর উদ্বোধন করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার, বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং মেটলাইফ ফাউন্ডেশন সহায়তায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে ফিনল্যাব বিডি।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে এটুআই’র ডিজিটাল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস স্পেশালিস্ট মো. তহুরুল হাসান, বাংলাদেশ ব্যাংক’র ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর মো. নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া এটুআই ও আর্থিক সেবা সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়/দপ্তর, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, রেগুলেটরি ফিনটেক ফ্যাসিলিটেশন অফিস, সরকারি ও বেসরকারি আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, ফিনটেক কোম্পানি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংশ্লিষ্ট সংস্থা, স্টার্ট-আপ কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।