ছেঁড়া-ফাটা, ময়লাযুক্ত নোট বাজার থেকে তুলে নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক 

  © সংগৃহীত

অর্থনীতিতে একটি মুদ্রানীতি আছে, যাকে গ্রেসামের মুদ্রানীতি বলা হয়। সেটি হল ‘খারাপ মুদ্রাই বাজার থেকে ভালো মুদ্রাকে বিতাড়িত করে’। দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে আমাদের অনেক অর্থ খরচ করতে হয়। সেটি আমরা ব্যাংক নোটের মাধ্যমে প্রদান করে থাকি। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আমরা যখন কোনো টাকা বিনিময় করি তখন নিজের কাছে থাকা সব থেকে খারাপ নোটটি প্রদান করে থাকি। এভাবেই খারাপ নোট বাজারে বিস্তৃত লাভ করেছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে পরিচ্ছন্ন নোট প্রচলনের লক্ষ্যে ‘পরিচ্ছন্ন নোট নীতিমালা’ অনুমোদন করেছে। সেই অনুসারে, অনাকাঙিক্ষতভাবে সৃষ্ট বা ব্যবহারের কারণে ময়লাযুক্ত, ছেঁড়া-ফাটা, আগুনে ঝলসানো, ড্যাম্প, মরিচাযুক্ত, অধিক কালিযুক্ত, অধিক লেখালেখি, স্বাক্ষরযুক্ত, বিভিন্ন খণ্ডে খণ্ডিত নোট বাজার থেকে তুলে নেওয়া হবে।

গতকাল সোমবার (২৪ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ (ডিসিএম) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২-এর ২৮ ধারা মোতাবেক বাজারে পরিচ্ছন্ন নোট প্রচলন করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যতম দায়িত্ব। এ লক্ষ্যে পরিচ্ছন্ন নোট নীতিমালা অনুমোদন করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরও জানায়, পরিচ্ছন্ন ব্যাংক নোট নীতিমালার উদ্দেশ্য বাজারে নিরবচ্ছিন্নভাবে পরিচ্ছন্ন নোট প্রচলন নিশ্চিত করা। অনাকাঙিক্ষতভাবে সৃষ্ট বা ব্যবহারের কারণে ময়লাযুক্ত, ছেঁড়া-ফাটা, আগুনে ঝলসানো, ড্যাম্প, মরিচাযুক্ত, অধিক কালিযুক্ত, অধিক লেখালেখি, স্বাক্ষরযুক্ত, বিভিন্ন খণ্ডে খণ্ডিত নোট প্রত্যাহার করা হবে। প্রত্যাহার করা নোটের বিপরীতে পরিচ্ছন্ন নোট প্রতিস্থাপন করা হবে। বাজারে প্রচলিত নোটের স্থায়িত্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বাজারে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুনঃপ্রচলনযোগ্য নোট সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।

পরিচ্ছন্ন নোট নীতিমালায় ১৪টি প্রধান লক্ষ্য ও কর্মপরিকল্পনা যুক্ত করা হয়েছে বলেও প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়। এগুলো হলো—  

১) ২০১৯ ও ২০২১ সালে জারি করা সার্কুলারের নির্দেশনাকে নীতিমালার অংশ হিসেবে বিবেচনা করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় নোট সর্টিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়ন করা হবে।

২) বাংলাদেশ ব্যাংক (নোট রিফান্ড) আইন ২০১২ বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনসাধারণের জন্য অপ্রচলনযোগ্য, ত্রুটিপূর্ণ ও দাবিযোগ্য নোট বিনিময় সহজ করা।

৩) জনসাধারণের হাতে থাকা সাধারণ ব্যবহার্য্য অপ্রচলনযোগ্য বা ত্রুটিপূর্ণ নোট সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে ডিসিএমের সাধারণ সমীক্ষা পরিচালনার মাধ্যমে একটি যৌক্তিক মাত্রা নির্ধারণ করা।

৪) নোট প্রক্রিয়াকরণের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সব অফিসে আধুনিক নোট সর্টিং মেশিন স্থাপন করা।

৫) নোটের স্থায়ীত্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া এবং এই উদ্যোগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি তফসিলি ব্যাংকগুলোকে সম্পৃক্ত করা।

৬) ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় নোট ব্যবহারে অধিক যত্নবান হওয়ার বিষয়ে প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে জনগণকে উৎসাহিত করা।

৭) পরিচ্ছন্ন নোট বাজারে প্রচলনের স্বার্থে তথা জনসাধারণ, প্রতিষ্ঠান এবং আন্তঃব্যাংক লেনদেনে পরিচ্ছন্ন নোট ব্যবহার নিশ্চিত করার স্বার্থে যথাযথভাবে নোট সর্টিং, প্যাকেটিং, ব্যান্ডিং, নোট প্যাকেটে ফ্লাইলীফ লাগানো ও স্ট্যাপলিং সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাগুলো যথাযথ পরিপালন নিশ্চিত করা।

৮) প্রকৃত চাহিদা নিরূপণ করে দ্য সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন (বাংলাদেশ) লিমিটেডের নোট মুদ্রণ সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া।

৯) নোট উৎপাদনে দীর্ঘস্থায়ী, আধুনিক ও উন্নতমানের, কাগজ, কালি ও নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করার জন্য ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে উদ্যোগ নেওয়া।

১০) তফসিলি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন বিভাগ, জেলা বা উপজেলায় নোটের ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেবা পক্ষ পরিচালনা করা।

১১) নোট ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়ে তফসিলি ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ, কর্মশালা বা মতবিনিময় সভার আয়োজন করা।

১২) পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে প্রচলনযোগ্য, অপ্রচলনযোগ্য ও ত্রুটিপূর্ণ নোটসমূহের সর্টিং, সংরক্ষণ, বিনিময় তথা নোট ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা পরিপালন নিশ্চিত করা।

১৩) নোট ধ্বংসকরণ সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে অবকাঠামোগত উন্নয়ন তথা প্রতিটি অফিসে পরিবেশবান্ধব উন্নতমানের ইনফ্রারেড, বৈদ্যুতিক চুল্লি ও আধুনিক নোট শ্রেডিং মেশিন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া।

১৪) বাজারে পরিচ্ছন্ন নোট সরবরাহের প্রয়োজনে এ সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা জারি করা বা আগের নির্দেশনা পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা।


সর্বশেষ সংবাদ