ডাকসু হামলার নতুন ভিডিও প্রকাশ

গত ২২ ডিসেম্বর ডাকসুতে ভিপি নুর এবং তাঁর সহযোগীদের উপর হামলার নতুন একটি ভিডিও প্রকাশ হয়েছে। সাত সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ডাকসু ও মধুর ক্যান্টিনের মাঝের রাস্তায় একজনকে ফেলে চতুর্দিক থেকে আক্রমণ করা হচ্ছে। জানা গেছে, যাকে মারধর করা হচ্ছে তিনি হলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছিল এবং তার কিডনিতে সমস্যা হয় বলে জানা গেছে।

অপরদিকে হামলাকারীদের মধ্যে হেলমেট মাথায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাদা কোটি গায়ে ছাত্রলীগের উপস্কুল বিষয়ক সম্পাদক খাজা খায়ের সুজনও রয়েছেন। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক বনী ইয়ামিন মোল্লা দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সোমবার ডাকসুতে হামলার ভিডিওটি তিনি প্রথম তাঁর ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন।

তিনি বলেন, ডাকসুতে ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের হামলার ঘটনার বিভিন্ন স্থির চিত্র এবং ভিডিও স্মারকলিপিসহ উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান ও তদন্ত কমিটির কাছে জমা দিয়েছি। এই ধরণের হামলার স্পষ্ট প্রমান থাকার পরও ২০ দিন অতিবাহিত হয়েছে। তদন্ত কমিটি বা ঢাবি প্রশাসন এখনোও কোন পদক্ষেপ নেয়নি।

এদিকে মারধরের শিকার আরিফ ঢাকা মেডিকেলে ১৪ দিন ভর্তি ছিলেন বলেও জানান বনী ইয়ামিন মোল্লা। এছাড়া আরিফের কিডনি ডায়ালাইসিসেরও প্রয়োজন হয় বলে জানা গেছে। এমনকি হামলার পর তার রক্তের প্লাটিলেটের পরিমানও উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায় বলে জানান ইয়ামিন। পরে চিকিৎসার মাধ্যমে বাড়ানো হয়।

২২ ডিসেম্বর দুপুরে ডাকসু ভবনের নিজ কক্ষে নুরুলের ওপর হামলা চালান বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতা-কর্মীরা। এ সময় নুরুলের সঙ্গে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও কয়েকটি কলেজের কয়েকজন ছাত্রসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন।

হামলার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী নুরুলসহ আহত ছাত্রদের ডাকসু ভবন থেকে উদ্ধার করে সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। এদের মধ্যে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা তুহিন ফারাবী কয়েক দফা মারধরের শিকার হন। তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ার পর তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিয়ে আসা হয়।

ঘটনার সময় হামলাকারীরা পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক এ পি এম সুহেলকে ডাকসু ভবনের ছাদ থেকে ফেলে দেন। সুহেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এ ছাড়া হামলায় আহত নুরুলের ভাই আমিনুর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ইমারজেন্সি সেন্টারে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুই দফায় নুরুল হক ও তাঁর সহযোগীদের রড, লাঠি ও বাঁশ দিয়ে পেটানো হয়। প্রথম দফায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সভাপতি আমিনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুনের নেতৃত্বে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ডাকসু ভবনে ঢুকেতাঁদের পেটান। এরপর সনজিত ও সাদ্দাম ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁদের উপস্থিতিতে দ্বিতীয় দফায় হামলা ও মারধর করা হয়। এ সময় ডাকসু ভবনেও ভাঙচুর চালান ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মী।

ওই ঘটনা তদন্তে ৬ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির প্রধান হলেন কলা অনুষদের ডিন আবু মো. দেলোয়ার হোসেন। ছয় কর্মদিবসের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কমিটির কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু এখনো তদন্তের প্রতিবেদন জমা দেয়নি কমিটি।

হামলার পরেরদিন ২৩ ডি‌সেম্বর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন ও ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্যসহ তিনজন‌কে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ২৪ ডি‌সেম্বর শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) রইচ উদ্দীন বাদী হয়ে হত্যা‌চেষ্টার অ‌ভি‌যো‌গে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি হিসেবে আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়। তারা হলেন- মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সভাপতি এ এস এম সনেট, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্য, এ এফ রহমান হল শাখা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক ইমরান সরকার, কবি জসিম উদ্দিন হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ইয়াদ আল রিয়াদ (হল থেকে অস্থায়ী বহিষ্কৃত), জিয়া হল শাখা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম মাহিম ও মাহবুব হাসান নিলয়। এছাড়া অজ্ঞাতনামা ৩০/৩৫ জনকে মামলায় আসামি করা হয়।

বর্তমানে গ্রেফতার ওই তিনজন কারাগারে রয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ