নতুন করে ডাকসু নির্বাচন দিতে বললো সাদা দলের শিক্ষকরা

উপ-উপাচার্যের গাড়ি আটকে  ডাকসু নির্বাচনের ব্যালট ছিড়িয়ে প্রতিবাদ শিক্ষার্থীদের
উপ-উপাচার্যের গাড়ি আটকে ডাকসু নির্বাচনের ব্যালট ছিড়িয়ে প্রতিবাদ শিক্ষার্থীদের  © সংগৃহীত

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম, কারচুপি, ভোট জালিয়াতির অভিযোগ এনে নতুন করে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী সাদা দলের শিক্ষকরা। সোমবার বিকালে সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এই দাবি জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, দীর্ঘ ২৮ বছর পর আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র-সংসদ-ডাকসু ও ১৮টি হলের সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। ভোটের আগের রাতে একটি সংগঠনের প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দিয়ে বস্তা ও ব্যালট বাক্স পুর্তি করে রাখার মতো নির্লজ্জ জালিয়াতি এবং নানা গুরুতর অনিয়মের মাধ্যমে ডাকসু নির্বাচনকে কলঙ্কিত করা এবং গোটা জাতি ও বিশ্বের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ভূমিকাকে ভুলুণ্ঠিত করার ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা ও জোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একটি ছাত্রসংগঠন বাদে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী অন্য ছাত্রসংগঠনগুলো ইতিমধ্যে নির্বাচন বর্জন করেছে। আমরা এ কলঙ্কিত ও প্রহসনের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করছি।

বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা জানায়, বাংলাদেশে যখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিপন্ন, মানুষ যখন ভোট ব্যবস্থার প্রতি চরম অনাগ্রহী, ঠিক সে সময় অনুষ্ঠিত আজকের ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গোটা জাতি পরম আগ্রহে অপেক্ষায় ছিল। প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশের ভুলুণ্ঠিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জয়যাত্রা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই শুরু হবে। যদিও এ নির্বাচন আয়োজনের শুরু থেকে প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও ক্রিয়াশীল সব দল ও সংগঠনের মধ্যে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে ব্যাপক আশঙ্কা ছিল। তফসিল ঘোষণার পূর্বে এবং পরে তারা নানাভাবে তাদের আশঙ্কার কথা প্রকাশ করে আসছিল। শিক্ষক সংগঠন হিসেবে সাদা দলও এ নির্বাচনী প্রক্রিয়া তাদের যুক্ত করার দাবিসহ একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের কথা কর্তৃপক্ষকে বলে আসছিল। সর্বশেষ গতকাল ১০ মার্চ একটি সংবাদ সম্মেলন আয়োজনের মধ্যমে এ নির্বাচন যে অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না, নানা কারণ ও যুক্তি দিয়ে আমাদের আশঙ্কা ও উৎকণ্ঠা বিষয়ে দেশবাসী এবং কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও নির্বাচন কমিশন আমাদের কোনো দাবিকেই আমলে নেয়নি।

তারা আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় গণতন্ত্রের সূতিকাগার। আমাদের প্রত্যাশা ছিল  বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ঐতিহ্য রক্ষার্থে ডাকসু নির্বাচনকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু তা না করায় জাতীয় নির্বাচনের মতো বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল এবং রোকেয়া হলসহ বিভিন্ন হলে রাতের বেলায় ভোট কাস্ট করে রাখার যে ন্যক্কারজনক ঘটনা জাতি প্রত্যক্ষ করল শিক্ষক হিসেবে আমরা এতে ক্ষুব্ধ, লজ্জিত ও ভীষণভাবে মর্মাহত। যেসব শিক্ষক এ কলঙ্কময় ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের এ অপকর্মের দায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজ কোনোভাবেই মেনে নেবে না। অভিযুক্তদের নিজ নিজ পদ থেকে শুধু অব্যাহতি দেওয়াই যথেষ্ট নয় বলে আমরা মনে করি। একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে তাদের সর্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। গ্রহণযোগ্য তদন্তের স্বার্থে তদন্ত কমিটিতে বিরোধী মতের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

বিএনপিপন্থী শিক্ষকরা দাবি করেন, জাতির যেকোনো ক্রান্তিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতিকে পথ দেখিয়েছে। শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় যেন নিজেই পথ হারিয়ে না বসে। সচেতন শিক্ষক হিসেবে আমরা এ দায়িত্ব কোনোভাবেই গ্রহণ করতে পারি না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব, মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থে কলঙ্কিত নির্বাচন বাতিল ও পুনঃতফসিল ঘোষণা করে অবিলম্বে নতুন করে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন আয়োজনের জোর দাবি জানাচ্ছি। আমরা আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমাদের প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কের দায় থেকে মুক্ত করার ব্যাপারে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ।


সর্বশেষ সংবাদ