১৬ দিন ধরে ৭ কলেজছাত্র নিখোঁজ!
- টিডিস রিপোর্ট
- প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:০০ AM , আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:০০ AM
কুমিল্লায় গত ১৬ দিন ধরে ৭ কলেজছাত্র নিখোঁজের খবরে তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলোর পক্ষ থেকে কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পর থেকে পুলিশ, র্যাব, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ছাত্রদের খুঁজে বের করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে, ২৬ আগস্ট নিখোঁজের ঘটনায় থানায় জিডি করেছেন অভিভাবকর। তবে এখনো তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, নিখোঁজ ওই ছাত্রদের বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যসহ স্বজনদের মাঝে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। তবে একইসঙ্গে এসব ছাত্রের বাড়ি ছাড়া নিয়ে পরিবার এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাঝে নানা সন্দেহ ঘুরপাক খাচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, তরুণ বয়সের এই ছাত্ররা বাড়ি ছেড়ে জঙ্গি সংগঠনে যোগদান করেছে, নাকি তাবলিগ জামাতে চলে গেছে বা কোনো জঙ্গি ছকে পা রেখেছে? এসব প্রশ্ন সামনে রেখে তদন্ত চলছে।
নিখোঁজ ওই ছাত্ররা হলেন মো. ইমতিয়াজ আহম্মেদ ওরফে রিফাত, মো. আমিনুল ইসলাম ওরফে আল আমিন, নিহাল আবদুল্লাহ, আস সামী, সরতাজ ইসলাম ওরফে নিলয়, ইমরান বিন রহমান ওরফে শিথিল, মো. হাসিবুল ইসলাম। তাদের বয়স ১৮ থেকে ২৩ বছর। তারা কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা সরকারি কলেজ ও ঢাকা ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ছাত্র। এদের মধ্যে ৩ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থী, অন্যরা অনার্স বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র। তারা গত ২৩ আগস্ট কোচিংয়ে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন।
পুলিশ ও নিখোঁজদের পারিবারিক সূত্র জানায়, সাত কলেজছাত্র একসঙ্গে নিখোঁজ হওয়ার পর তাদের পরিবার আলাদাভাবে পরদিন থানায় নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে জিডি করেন। ইমরান বিন রহমান ওরফে শিথিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্র। তার বাবা মজিবুর রহমান বলেন, ‘শিথিল আমার একমাত্র ছেলে। সে পড়াশোনা, কলেজ, কোচিং সেন্টার আর মসজিদ ছাড়া কোথাও যেত না। কোচিংয়ে যাওয়ার কথা বলে ২৩ আগস্ট বিকালে বাসা থেকে বের হয়। এরপর আর বাসায় ফেরেনি। ওইদিন রাতে বাসায় না ফেরার কারণে সারারাত খোঁজাখুঁজি করি। পরদিন কোতোয়ালি মডেল থানায় জিডি করি।’
নিহালের বাবা সাইফুল ইসলামসহ নিখোঁজ হওয়া অন্য অভিভাবকরাও জানান, তাদের সন্তানরা বাসা ছাড়ার সময় কোনো টাকা পয়সাও নেয়নি। তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি র্যাবের কুমিল্লা কার্যালয়েও অবহিত করা হয়েছে। নিখোঁজদের মধ্যে ইমতিয়াজ আহম্মেদ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। কুমিল্লা শহরে তাদের বাসা। তার বাবা মো. ফয়েজ আহম্মেদ গত ২৬ আগস্ট ছেলের নিখোঁজের বিষয়ে থানায় জিডি করেন।
ফয়েজ আহম্মেদ বলেন, ‘আমার ছেলেসহ অন্যরা একই দিন একই সময়ে নিখোঁজ হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেনি।’
কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার বড় আলমপুর গ্রামের নিখোঁজ মো. আমিনুল ইসলাম ওরফে আল আমিন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইসলাম শিক্ষা চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তারা কুমিল্লা শহরের ঝাউতলা এলাকার বাসায় থাকতেন। আমিনুলের বাবা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমিনুল আমার বড় ছেলে। সে আগে তাবলিগের নেতাদের সঙ্গে চিল্লায় যেত। পড়াশোনার পাশাপাশি কান্দিরপাড়ে আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বসতো। ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে আমরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে আছি।’
র্যাব-১১, সিপিসি-২ কুমিল্লার অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘একসঙ্গে ৭ কলেজ ছাত্রের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখছি। আশা করি খুব শিগগিরই তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হবে।’
বুধবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ সহিদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিখোঁজদের পরিবারের পক্ষ থেকে করা সাধারণ ডায়েরিমূলে তাদের সন্তানদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে আমরা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। নিখোঁজ ছাত্রদের আগের সব কললিস্ট এবং গতিবিধি বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।’
ওসি আরও বলেন, ‘পুলিশ জানতে পেরেছে তারা বাড়ি ছাড়ার পর কুমিল্লা থেকে চাঁদপুরে যায়। এরপর চাঁদপুর রেলস্টেশন এলাকার একটি হোটেলে রাতযাপন করে। পরদিন সকালে তারা ওই হোটেল ছেড়ে যায়। এরপর থেকে তাদের আর হদিস মেলেনি। তবে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনগুলো বন্ধ থাকায় উদ্ধার কিংবা তাদের অবস্থান জানতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে তারা একইসঙ্গে কেন নিখোঁজ হলো তা বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।’