বাবার হাত-পা ভেঙে ৩৩ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিলেন তিন ছেলে

টাকাসহ গ্রেপ্তার দুই ছেলেসহ তিনজন এবং আহত জয়নাল আবেদীন
টাকাসহ গ্রেপ্তার দুই ছেলেসহ তিনজন এবং আহত জয়নাল আবেদীন  © সংগৃহীত

যে সন্তানদের জন্য আরাম-আয়েশ, শখ বিসর্জন দিয়েছেন জয়নাল আবেদিন ও হনুফা বেগম দম্পতি, তারাই ছিনতাইকারী সেজে মারধর করে জন্মদাতা বাবার হাত-পা ভেঙে দিয়েছেন। ছিনিয়ে নিয়েছেন ৩৩ লাখ টাকা। ‘সারাজীবন ওরা জেলে পইচ্যা মরুক। ওদের মুখ আমি দেখতে চাই না’-কষ্টে তিন ছেলে সম্পর্কে জয়নাল আবেদিন কথাগুলো বলছিলেন। রাজধানীর মানিকদী এলাকায় গত ২৮ জুন এ ঘটনা ঘটে।

একটি শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, দীর্ঘদিন পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের একটি দল দুই ছেলে মো. হান্নান ও মো. মান্নান এবং তাদের সহযোগী মো. সোহেলকে গ্রেপ্তার করেছে। গত শুক্রবার রাতে টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও ঢাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৩৩ লাখের মধ্যে ২৯ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তারের পর পুলিশ খবর দিলেও জয়নাল ও তাঁর স্ত্রী নিজের সন্তানদের মুখ দেখতে রাজি হননি। আদালতের মাধ্যমে টাকা জয়নালের হাতে শিগগিরই তুলে দেওয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

জয়নাল আবেদিন বলেন, তিন ছেলে ও তিন মেয়ে যে যার মতো বসবাস করছে। হান্নান ও মান্নানের যৌথ রেস্টুরেন্ট ব্যবসা আছে। বড় ছেলের হার্ডওয়্যারের দোকান। জয়নালের আদি বসত মানিকদী। সেখানে আড়াই কাটা জমি রয়েছে। সন্তানদের বড় করলেও বিয়ে করার পর তাদের আরেক জীবনযুদ্ধ শুরু হয়। ছেলেদের কেউই বাবা-মায়ের দেখভাল করেনি।

তিনি জানান, চলতি বছরের শুরুতে জমি ডেভেলপার কোম্পানির কাছে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। আল-মামুন নামে একটি ডেভেলপার মালিকের সঙ্গে কথা হয়। জমিতে ভবন হবে, ফ্ল্যাটের অর্ধেক পাবেন জয়নাল। তাঁর ভাগে ৯টি ফ্ল্যাট থাকার কথা। নগদ ৩৩ লাখ টাকাও দেওয়া হবে। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তাদের অফিস থেকে জমি বিক্রির টাকার ব্যাগে নিয়ে রওনা হন জয়নাল। সঙ্গে ছিলেন ছোট মেয়ের জামাই মাহফুজুর রহমান।

তিনি জানান, মোটরসাইকেলে শ্বশুর-জামাই বাসার কাছে গলিতে পৌঁছামাত্র দু'জন অতর্কিত হামলা করে। প্রথমে জয়নালকে রড দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে। একপর্যায়ে জয়নাল খেয়াল করেন, হামলাকারী বড় ছেলে হানিফ। শ্বশুরকে রক্ষায় এগিয়ে গেলে মাহফুজুরকেও পেটানো হয়। তাঁদের হাত-পা ভেঙে যায়। পরে আরও দু’জন যুক্ত হন। তারা মেজো ও ছোট ছেলে। জয়নাল অচেতন হয়ে পড়লে টাকা নিয়ে চলে যায় হামলাকারীরা।

আরো পড়ুন: শ্বাসরোধেই মৃত্যু, গ্রামের বাড়িতে চিরনিদ্রায় শিক্ষিকা খায়রুন নাহার

সুস্থ হওয়ার পর এ ঘটনা ক্যান্টনমেন্ট থানায় জানান জয়নাল। তবে গা-ঢাকা দেওয়ায় তিন ‘গুণধর ছেলের’ খোঁজ পায়নি পুলিশ। উল্টো স্থানীয় মাস্তান ও সরকারদলীয় নেতাদের ব্যবহার করে অভিযোগ তুলে নিতে জয়নালকে চাপ দেন ছেলেরা। চোখের পানিমুছতে মুছতে তিনি বলেন, এমন সন্তান যেন কারও না হয়। আমারে গরুর মতো পিটিয়েছে, কেমনে পারল? ওদের সামান্য জ্বর-সর্দি হলেও সারারাত ঘুমাতে পারতাম না। হাত-পায়ে ১০টির বেশি সেলাই লেগেছে। ৩৩ লাখ টাকার মধ্যে এক হাজার টাকার নোটের বান্ডিল ২৬টি, বাকিগুলো ৫০০ টাকার।

জয়নালের স্ত্রী বলেন, ছেলেদের পাঁচ লাখ টাকা করে দিয়েছি। ঘরে কারও অভাব নেই। কেন বাপরে মাইর‌্যা টাকা নিতে অইব? সন্তানদের কত কষ্ট করে বড় করলাম, এমন দিন দেখতে অইলো? ওদের তো ভাগ ভাগ করে ফ্ল্যাট দিতাম। জমি বিক্রির টাকাও সমানভাবে দেওয়ার কথা ছিল। তিন ভাই মিলে কী লজ্জাজনক ঘটনা ঘটাল! ছোট মেয়েটা শারীরিক প্রতিবন্ধী। ওর জামাইয়েরও দুই পা ভেঙে দিয়েছে। এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে।’

ডিবির গুলশান বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, জয়নালের তিন সন্তানই সচ্ছল। তারা মা-বাবাকে দেখভাল না করে অত্যাচার করত। সে কারণে বৃদ্ধ বয়সে তাঁরা বাড়িছাড়া হয়েছিলেন। ছিনতাইকারী সেজে বাবারটাকা তিন ভাই মিলে হাতিয়ে নিয়েছে। সন্তানের হাতে রক্তাক্ত মা-বাবার বুকের রক্তক্ষরণ বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে অর্থ হারানোর কষ্ট আমরা লাঘবের চেষ্টা করছি। বাকি ২ লাখ টাকাসহ বৃদ্ধের বড় ছেলেকে ধরার চেষ্টা চলছে। তার স্ত্রীও পলাতক রয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence