ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ

শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘যৌন হয়রানির’ গল্প সাজান ছাত্রলীগ নেতাসহ বহিষ্কৃতরা

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল হাসান
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল হাসান  © ফাইল ফটো

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের (মমেক) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মানববন্ধন করেছিলেন একদল শিক্ষার্থী। এর মধ্যে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল হাসানসহ আরও কয়েকজন নেতাকর্মী ছিলেন। পরে তদন্তে প্রমাণিত হয়, এ অভিযোগ মিথ্যা। এমন গল্প সাজানোয় পরে বহিষ্কার হয়েছেনে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ জন শিক্ষার্থী।

কলেজের লিখিতভাবে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মমেকের শিক্ষক ও সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোন সত্যতা পায়নি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ওই ১০ জনকে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

শনিবার (৫ মার্চ) একাডেমিক কাউন্সিলে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে দিনভর আলোচনা শেষে বিকেলে এ সিদ্ধান্ত হয়। কলেজের শিক্ষকেরা এর আগে জানান, যে শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির কথা বলা হয়েছে, কলেজে সে নামে কাউকে পাওয়া যায়নি।

বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল হাসান, ফায়াদুর রহমান আকাশ, তামান্না তাসকিন, সুনীতি কুমার দাশ, সানবীম খান, মহিদুল হক, তানভীন হাসান, কাশফী তাবরীজ, বাপ্পু কর্মকার এবং সাখাওয়াত হোসেন সিফাত। বহিষ্কারের মেয়াদ অনুযায়ী তারা ছাত্রাবাসেও থাকতে পারবেন না।

জানা যায়, ময়মনসিংহ মেডিকেলের ৫৩ ব্যাচের ছাত্র এবং কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল হাসানের অধ্যক্ষ বরাবর একটি অভিযোগ দেন। এতে তিনি দাবি করেন, ‘গত ২ ফেব্রুয়ারি সার্জারি বিষয়ের মৌখিক ও ব্যবহারিক চলাকালে সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ডিএসবির একজন সদস্যের সামনে পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় তিনি সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকেন। নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী সরকার দলীয় ছাত্রদের ফেল করান।’ 

আব্দুল্লাহ আল হাসানের অধ্যক্ষ বরাবর দায়ের করা এ লিখিত অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় তাকে তিন বছরের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়। অপরদিকে শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভের সত্যতা না পাওয়ায় এবং আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়ায় শিক্ষার্থী ফায়াদুর রহমান আকাশ, তামান্না তাসকিনকে দুই বছরের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়।

আরো পড়ুন: ছাত্রাবাসে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছুর ঝুলন্ত মরদেহ, পাশে সুইসাইড নোট

এ ছাড়া মানববন্ধনে স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণের জন্য সুনীতি কুমার দাশ, সানবীম খান, মহিদুল হক, তানভীন হাসান, কাশফী তাবরীজ, বাপ্পু কর্মকার ও সাখাওয়াত হোসেন সিফাতকে এক বছরের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পাশাপাশি অনিচ্ছাকৃতভাবে মিছিলে অংশগ্রহণ করায় আটজনকে মুচলেকা দিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

উল্লেখ্য, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ৫৩ ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সার্জারি ইউনিটের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন একদল শিক্ষার্থী। এরপর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তাইয়্যুবা তানজিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে।

তদন্ত কমিটি এসব অভিযোগের কোন সত্যতা পায়নি। এমনকি খুঁজে পাওয়া যায়নি ভুক্তভোগী ছাত্রীকে। এরই প্রতিবাদে ২৭ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা অপবাদ দিয়ে অধ্যাপকের সম্মানহানি করায় দোষীদের বিচার দাবিতে আন্দোলনে নামেন কলেজের সর্বস্তরের শিক্ষক, চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা। টানা চতুর্থ দিনের মত আন্দোলনের পর ছাত্রলীগ নেতাসহ ১০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ