টিকটক, লাইকি ও বিগো লাইভে প্রতারণা, ‘নিয়ন্ত্রণ’ চায় সরকার
- টিডিসি রিপোর্ট
- প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২১, ১০:১৯ AM , আপডেট: ১৫ জুন ২০২১, ১০:১৯ AM
তথ্যপ্রযুক্তি এখন হাতের মুঠোয় হওয়ায় সুযোগ মিলছে সবক্ষেত্রে অবাধ বিচরণের। এসব প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর অনেকেই জানেন না কোনটা অপরাধ, কোথায় যাওয়া উচিত, কোনটা উচিত নয়। টিকটক, লাইকি ও বিগো লাইভে চাকরি পাওয়া কিংবা সেলিব্রেটি হবার নেশায় না বুঝেই অনেকে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। হেনস্তা, শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ কিংবা খুনও হচ্ছেন কেউ কেউ।
সাইবার পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলোর ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় অশ্লীল ভিডিও, বাজে কমেন্টস, প্রতারণার মতো ঘটনা ঘটছে হরহামেশা। এ কারণে সামাজিক এসব প্লাটফর্ম বন্ধ না করে আইনের মধ্যে থেকে নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন।
টিকটক, লাইকি কিংবা বিগো লাইভে নিজেকে স্টার কিংবা সেলিব্রেটি করার নামে অনেককে পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে। অনেকে নিজের ইচ্ছায় চলে যাচ্ছে। এসব নিয়ে সাইবার ইন্টেলিজেন্স ইউনিট কাজ করছে। বিটিআরসির নির্দেশনায় এসব প্লাটফর্মকে নিয়ন্ত্রণে আনার কথা ভাবা হচ্ছে বলেও জানান তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকটককে ঘিরে আয়োজন হচ্ছে পুল পার্টি। যার আড়ালে চলে দেহ ব্যবসা, মাদকের আসর, মাদকের বেচা-কেনা। অ্যাপকেন্দ্রিক নৈতিক অবক্ষয়ের পরিণতি হচ্ছে ভয়াবহ। তাই এখনই এর লাগাম টানা উচিত। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলোর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। অ্যাপ, গ্রুপ বা ওয়েব বন্ধ করা বা নিষিদ্ধ করা কোনো সমাধান নয়। একটা বন্ধ করলে বিকল্প আরও অনেক পথ খুলে যাবে। তাই প্রতিরোধে জোর দিতে হবে
সিআইডি জানায়, লাইকি ও বিগো লাইভের মতো অ্যাপে ভিডিও স্ট্রিমিং লাইভ চ্যাট, ফিশিং গেমের অপশন রয়েছে। এসব ব্যবহারে প্রয়োজন হয় ডিজিটাল কারেন্সির। যার নাম ‘ডায়মন্ড’। বাংলাদেশি লক্ষাধিক এসব অ্যাপ ব্যবহারকারী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ, নগদ, অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ডিজিটাল কারেন্সি ডায়মন্ড ক্রয় করছে। বাংলাদেশি এজেন্সিগুলো ডায়মন্ড কিনে আনে বিদেশি অ্যাডমিনদের কাছ থেকে। এসব এজেন্সি বিভিন্ন অবৈধ মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা পাচার হচ্ছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
এ বিষয়ে সিআইডির সাইবার বিভাগে প্রধান ডিআইজি জামিল আহমেদ বলেন, লাইকি ও বিগো লাইভ অ্যাপ বিদেশ থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমরা নিয়ন্ত্রণকারীদের এসব বিষয়ে নজরে আনব। এছাড়া আমরা এসব অ্যাপ সার্বক্ষণিক নজরদারি করছি। যারা অশ্লীল ভিডিও দিচ্ছেন তাদেরকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এসব অ্যাপের অফিস আমাদের দেশে খোলার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব।
ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, টিকটক ও লাইকি সিঙ্গাপুরের ব্যক্তিমালিকানা। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। অ্যাপগুলো হয়তো বন্ধ করা হবে না। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় পর্নোগ্রাফি রোধে কঠোর নিয়ন্ত্রণ চায় সরকার। টিকটক, লাইকি ও বিগো লাইভ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের চেষ্টা চলছে। করোনার কারণে দেরি হচ্ছে। হয়তো পরিস্থিতি বিবেচনায় ভার্চুয়ালিও বৈঠক হতে পারে। এসব করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে।
ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর তৎপরতা ও তদন্তে একমত পোষণ করে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিগো টেকনোলজি। রোববার (১৩ জুন) এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, যেকোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটি জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে। একইভাবে প্রতিষ্ঠানটি যেকোনো ব্যক্তির দ্বারা অপরাধের ক্ষেত্রেও জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে।
বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, আমরা ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করছি এবং যেভাবে সম্ভব বা প্রয়োজন এক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে কাজ করব। আমাদের ব্যবহারকারীদের জন্য একটি নিরাপদ, সুরক্ষিত ও বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশ তৈরিতে আমরা আগের মতোই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ভবিষ্যতেও আমরা একইভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ।
আঞ্চলিক ও জাতীয় আইন এবং মূল্যবোধ সমুন্নত রাখতে আমরা আইনপ্রয়োগকারী সব সংস্থা ও সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। একই সঙ্গে নতুন প্রজন্মের ব্যবহারকারীদের জন্য ইতিবাচক সব সুযোগ তৈরিতে নিবিড়ভাবে কাজ করব।