তথ্য-প্রযুক্তির শিক্ষক এখন হ্যাকার, হাতিয়ে নিলেন সাড়ে ৩ কোটি টাকা

  © সংগৃহীত

তথ্য-প্রযুক্তিবিদ নাজমুস সাকেব নাঈম। ছিলেন তথ্য-প্রযুক্তির শিক্ষক। সেই তিনিই হ্যাকিং করে এক প্রবাসী বাংলাদেশির ডেবিট কার্ড থেকে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই অপরাধ করতে গিয়ে ৮০ দিনে ৮ দেশ থেকে এক হাজার ৪৭২টি লেনদেন করেছেন তিনি।

দেশের তথ্যপ্রযুক্তি জগতে নাঈমকে রীতিমতো তারকা বলা যায়। তাঁর বিরুদ্ধেই পাপুয়া নিউগিনিতে বসবাসরত বাংলাদেশির ডেবিট কার্ড হ্যাক করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ছয় বছর আগের ওই জালিয়াতির অভিযোগে  সম্প্রতি তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘২০১৪ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ভুক্তভোগী আবদুল ওয়াহেদের আন্তর্জাতিক ভিসা কার্ড জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। হ্যাকার অনলাইনে আটটি দেশ থেকে এক হাজার ৪৭২টি লেনদেনের মাধ্যমে অন্তত সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।’

নাঈম যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়াশোনা করেছেন, নিয়েছেন স্নাতক ডিগ্রি। থাইল্যান্ডের সিয়াম ইউনিভার্সিটিতে অতিথি শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। পাশাপাশি নেপালের একটি ব্যাংকের পরামর্শক ছিলেন। তাঁর তৈরি করা পেখম ওয়েবসাইট অনলাইনে হোটেল বুকিংয়ে বিকাশ, সেবাসহ কয়েকটি অনলাইন ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ।

ফেসবুক-কমার্স বা এফ-কমার্সের জন্য গ্রাহককে সহায়তায় নাঈমের উদ্ভাবিত চ্যাট বট ‘দ্য জেড বয়’ নিয়ে ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী অনট্রাপ্রেনার ও ফোর্বসে তাঁর সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়।  তিনি বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে তথ্য-প্রযুক্তিবিদ হিসেবে কাজ করেছেন। সেই নাঈম ও তাঁর সহযোগী মইনুল ইসলামকে রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ।

বাংলাদেশি প্রবাসী আবদুল ওয়াহেদের দায়ের করা মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি হয়। ওয়াহেদ পাপুয়া নিউগিনির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেশ বেশ এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। প্রতিষ্ঠানটি দেশটিতে সুপারমার্কেট, সুপারশপ চেইন, ফিলিং স্টেশন, ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড লজিস্টিকস,  ফাস্ট ফুড অ্যান্ড বেকারি, রেস্টুরেন্ট চেইন, কনটেইনার ইয়ার্ড, অ্যাপার্টমেন্টসহ নানা ব্যবসায় জড়িত।

ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন ওয়াহেদ। পরে ১৯৮৮ সালে পাপুয়া নিউগিনিতে পাড়ি জমান। সেখানে শিক্ষকতা শুরু করলেও পরে ব্যবসায় নামেন তিনি।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, নাঈম অনলাইন মাধ্যম থেকেই ওয়াহেদের ডেবিট কার্ডের তথ্য পান।কার্ডটি হ্যাক করে তিনি বাংলাদেশে বসেই কেনাকাটা শুরু করেন। পরে কার্ডটি ব্যবহার করে তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের জন্য থাইল্যান্ডের টিকিট কেনেন। টিকিটে ব্যবহৃত ই–মেইল ঠিকানার সূত্র ধরে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। নাঈমের ল্যাপটপ ও তিনটি ই–মেইলে জালিয়াতির প্রমাণ মেলে।

তেজগাঁওয়ের অতিরিক্ত উপকমিশনার হাফিজ আল ফারুক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভিসা কার্ড ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, হংকং, চীন ও থাইল্যান্ড থেকে অনলাইনে দামি সফটওয়্যার, ম্যাকবুক, আইফোন, রোলেক্স ঘড়ি, ক্যামেরা প্রভৃতি কেনেন তিনি।’ জালিয়াতির কথা শিকার করে নাঈম আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন বলে জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ