অভাবের তাড়নায় টিকটকে মাদ্রাসায় পড়ুয়া অপু

সাধারণ মানুষকে হেনস্তা এবং মারধরের অভিযোগে কথিত টিকটক-লাইকি স্টার অপুকে গ্রেফতারের পর বের হচ্ছে নানা তথ্য। এমনকি উঠতি তরুণদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অযাচিত ব্যবহারের বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আর এতোদিন রাস্তাঘাটে টিকটক বানানো বখাটে তরুণদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের শিকার সাধারণ মানুষও বিভিন্ন বিরূপ অভিজ্ঞতার কথা জানাচ্ছেন।

এদিকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার টিকটকের ‘অপু ভাই’য়ের রিমান্ড নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর একটি মাদ্রাসাতে পড়াশোনা করেছেন ইয়াছিন আরাফাত অপু। অন্য দশজন ছাত্রের মতো অপুও মন দিয়েছিল পড়াশোনায়। ভালো ছাত্র হিসেবে নামডাকও বেশ ছিল। কিন্তু সংসারের অভাবের কারণে পড়াশোনা করতে পারেনি বেশী দূর। এরপর চাকরি নেন একটি সেলুনে।

সেখান থেকে শুরু। সেলুনে আড্ডা দিতে আসা এলাকার কিছু উঠতি তরুণের কাছ থেকে জানতে পারেন টিকটিক-লাইকের মতো অ্যাপসের বিষয়ে। আরও জানতে পারে খুব সহজে এখান থেকে জনপ্রিয় ও প্রচুর টাকা আয় করা যায়। এরপর কয়েকজন বন্ধুর মাধ্যমে শুরু করেন মোবাইলভিত্তিক অ্যাপস টিকটক ও লাইকিতে ভিডিও বানানো। তবে ভিডিও বানাতে গিয়ে ভিনদেশি তরুণদের অনুসরণে চুলে বিভিন্ন রং ও উদ্ভট স্টাইল করে অপুর দল। সেলুনের অভিজ্ঞতা কাজে চুলে বাহারি রং লাগিয়ে খুব সহজে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। আর পিছনে থাকাতে হয়নি।

এরপর টিকটক ও লাইকিতে নানা ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করে অল্প দিনেই অর্জন করেন জনপ্রিয়তা। গড়ে তোলেন অনুসারীদের বিরাট বাহিনী। ২ মাসেই আয় করেন ৫০ হাজার টাকা। নতুন ভিডিও বানাতে ২ আগস্ট অনুসারীদের নিয়ে ঢাকায় আসেন অপু।

পুলিশ বলছে, উশৃঙ্খল আচরণে কিশোর গ্যাং সংস্কৃতিকে উৎসাহ দিচ্ছিলো তারা। উত্তরা উপ-কমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল বলেন, তার সঙ্গীরা কিশোর গ্যাং হিসেবে নিজেদেরকে প্রকাশ করার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। মাদকের সাথে তারা জড়িত কিনা খতিয়ে দেখছি।

টিকটকের মতো অ্যাপে রাতারাতি খ্যাতি পাচ্ছেন উঠতি বয়সীরা। গড়ে উঠছে কিশোর অনুসারীদের বিশাল বাহিনী। ধীরে ধীরে গ্যাং সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকছেন তারা, বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। রাজধানীর সড়কে গোলমালের অভিযোগে টিকটক তারকা অপু গ্রেফতারের পর এমনই বলছে পুলিশ। বিশেষজ্ঞরাও একমত।

নজরুল নামে একজন জানিয়েছেন, ‘নোয়াখালীর বার্বার শপে কাজ করা অপু তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন লাইকি ও টিকটকে। অপুর উইয়ার্ড হাসি, ক্রিপি হেয়ারস্টাইল ও অদ্ভুত সব ডায়ালগের জন্য এই তরুণকে মূলত রোস্ট করতে করতে বিখ্যাত বানিয়েছে ইউটিউবাররা।

জানা যায়, লাইকি অ্যাপে তাকে অনুসরণ করে প্রায় ১০ লাখ। ইনস্টাগ্রামেও তার অনুসারী ছিল। কিন্তু সাম্প্রতি প্রিন্স মামুন নামের আরেক ‘লাইকি তারকা’র অনুসারীরা সেই ইন্সটাগ্রাম আইডি রিপোর্ট দিয়ে মুছে ফেলে। প্রিন্স মামুনকে কিছুদিন আগেই দিয়াবাড়িতে মারধর করে কিছু তরুণ। অপু ভাইয়ের অনুসারীরাই মারধর করেছে বলে অনুমান করে গুলিস্তানের একটি মার্কেটে অপু ভাই দুই গ্রুপের মারামারি হয়।

এদিকে বিতর্কিত টিকটকার ‘অপু ভাই’ ও মামুনসহ কয়েকজনের আইডি ব্যান করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে ‘সাইবার-৭১’ এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে। এ বিষয়ে সাইবার-৭১ পরিচালক আবদুল্লাহ আল জাবের হৃদয় জানান, অপু-মামুনসহ বিকৃত ভিডিও প্রস্তুতকারীদের বিষয়ে টিকটকের আঞ্চলিক প্রধানের সঙ্গে কথা হয়েছে। অপু- মামুনের আইডি শিগগিরই ব্যান করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা। এ বিষয়ে টিকটকের অফিসিয়াল পেজেও ঘোষণা দেয়া হবে।


সর্বশেষ সংবাদ