বঙ্গবন্ধুর খুনি মোসলেহউদ্দিন সেজেছেন ইউনানি চিকিৎসক!

এবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরেক খুনি রিসেলদার (বরখাস্ত) মোসলেহউদ্দিনকে আটকের খবর পাওয়া যাচ্ছে। ভারতের উত্তর চব্বিশ পরগনা থেকে আটক করা হয়েছে বলে বিভিন্ন ভারতীয় মিডিয়া খবর দিয়েছে। তবে এখনো খবরটির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

ভারতীয় মিডিয়ার খবরে বলা হচ্ছে, উত্তর ২৪ পরগনার একটি উপশহরে ইউনানি চিকিৎসক সেজে দীর্ঘদিন ভাড়া থাকছিল মোসলেহউদ্দিন। এ অবস্থায় ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে আটক হয়েছেন বলে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে। সর্বশেষ ২০১৮ সালে তিনি গোপনে বাংলাদেশে গিয়ে পরিবারের সাথে কয়েকদিন ছিলেন। এরপর আবার ভারতে ফিরে যান বলে জানা গেছে।

আজ সোমবার ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা ‘মুজিবের আর এক খুনিও কি এই বঙ্গে’ এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে ভারতীয় গোয়েন্দাদের সহযোগিতায় তিনি আটক হতে পারেন বলে একটি সূত্রের দাবি করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আব্দুল মাজেদের মতো পরিচয় ভাঁড়িয়ে শেখ মুজিবের আর এক খুনিও দীর্ঘদিন পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নিয়ে রয়েছে বলে দাবি বাংলাদেশের গোয়েন্দা সূত্রের। মাজেদকে জেরা করে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা তার বিষয়ে জানতে পেরেছেন বলে ওই সূত্রের দাবি। ভারতের গোয়েন্দাদের সহযোগিতায় রিসেলদার (বরখাস্ত) মোসলেহউদ্দিন নামে এই প্রাক্তন সেনা অফিসারকে উত্তর চব্বিশ পরগনায় তার ডেরা থেকে আটক করা গিয়েছে বলেও সূত্রের দাবি। আবার অন্য একটি সূত্রের খবর, মাজেদ আটক হওয়া মাত্রই নিজের মৃত্যু-সংবাদ ছড়িয়ে গা-ঢাকা দিয়েছে মোসলেহউদ্দিন। ’

আনন্দবাজার জানায়, ‘ভারতের গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, লকডাউনের সময় এ দেশ থেকে মোসলেহউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ায় সমস্যা হতে পারে বলে ঢাকা বিষয়টি ভারতের গোয়েন্দাদের জানায়। ভারতীয় গোয়েন্দারা এই খুনিকে কার্যত তাড়িয়ে সীমান্তের কোনও একটি অরক্ষিত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের হাতে তুলে দিয়েছেন। তবে সরকারিভাবে কিছুই স্বীকার করা হয়নি।’

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আব্দুল মাজেদ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হবার পর ফাঁসির আগেই গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদে মোসলেহউদ্দিন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানায়। এরপর গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়লে তিনি নিখোঁজ হন। উত্তর চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগর রেলস্টেশন এলাকায় অপরিচিত কিছু ব‌্যক্তির সাথে তাকে সর্বশেষ দেখা যায়।

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন মোসলেহউদ্দিন গোবরডাঙ্গার ঠাকুরনগর এলাকার চাঁদপাড়া রোডের একটি বাড়িতে বসবাস করতেন। এই এলাকায় ডাক্তার দত্ত নামে পরিচিত ছিলেন এবং ”ইউনানী ফার্মাসী” নামে একটি প্রতিষ্ঠানে আয়ুর্বেদ ও হোমিও চিকিৎসা করতেন। ঠাকুরনগর রেলস্টেশনের এক নম্বর প্লাটফরমের পিছনে একটি বাড়িতে তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ওই এলাকায় প্রায় ৪০বছর ধরে বসবাস করছিলেন মোসলেহউদ্দিন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। যে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা এই হত্যাকাণ্ডে মিশনে অংশ নেয় তার মধ্যে রিসালদার (বরখাস্ত) মোসলেহউদ্দিন অন্যতম। জানা যায়, গুলির শব্দ শুনে বঙ্গবন্ধু যখন বিষয়টি জানার জন্য নিচে নামছিলেন সেই সময় সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুকে নিজ হাতে গুলি করে হত্যা করে এই মোসলেহউদ্দিন।

জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর তাকে তেহরান ও জেদ্দা দূতাবাসে দায়িত্ব দিয়ে পাঠান। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অন্য খুনীদের সাথে তিনিও দেশ ছেড়ে থাইল্যান্ড হয়ে পাকিস্তানে পালিয়ে যান। এরপর জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। তার কয়েকবছর পর চলে যান ভারতে এবং উত্তর চব্বিশ পরগনার ঠাকুরনগর এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। সেখান থেকেই তিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

তবে ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্র পত্রিকার কাছে স্বীকার করলেও সরকারিভাবে এখনও কোনো কিছুই বলা হয়নি। এমনকি পশ্চিমবঙ্গ সরকারও এ ব্যাপারে মুখ খোলেনি। ফলে বিষয়টির সত্যতা এখনো যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

সূত্র : আনন্দবাজার ও ভারতীয় মিডিয়া।


সর্বশেষ সংবাদ