যুদ্ধাপরাধ মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার

ঝিনাইদহে মানবতাবিরোধী অপরাধ (যুদ্ধাপরাধ) মামলায় আওয়ামী লীগ নেতাসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার দুপুরে উপজেলার নারায়ণপুর ত্রীমোহনী এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাদের। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ মিয়া ও তার সহযোগী কোলা গ্রামের শাহেব আলী মালিথা। এ খবর নিশ্চিত করেছেন ঝিনাইদহের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান।

হলিধানী ইউনিয়নের মেম্বার মতিয়ার রহমান ও পার্শ্ববর্তী সাগান্না ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রশিদ মিয়া গ্রেফতার হওয়ার আগে ডাকবাংলা চালকল মালিক সমিতির নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছিলেন। হঠাৎ করে সাদা পোশাকের একদল লোক সেখানে আসে এবং আবদুর রশিদকে তুলে নিয়ে যায়। শাহেব আলীকে গ্রেফতার করা হয় একই সময় তার নিজ এলাকা থেকে।

পুলিশ সুপার জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলায় জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানার ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের।

তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃত আবদুর রশিদ ও শাহেব আলী স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিল মর্মে ট্রাইব্যুনালে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বিচার কাজ চলমান রয়েছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ সদর উপজেলার কোলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ও সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য আশির উদ্দীন এলাকার ৬ রাজাকারের বিরুদ্ধে ঝিনাইদহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন।

আদালত মামলাটি প্রাথমিক অনুসন্ধান করে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসিকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। পরবর্তী সময়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক চাপে মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন তিনি।

ওই মামলার অভিযোগে আশির উদ্দীন উল্লেখ করেন, '৭১ সালে তিনি দেশ স্বাধীনের জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেন। এ খবর জানতে পেরে এলাকার রাজাকার মসলেম উদ্দীন, আবদুর রশিদ মিয়া, আলাউদ্দীন, হাকিম আলী খোন্দকার, শাহজাহান, আসমত ও শাহেব আলীসহ ৫০ জন কোলা গ্রামে তার বাড়ি ঘেরাও করে। আশির উদ্দীন ও তার আরেক ভাই মহিরুদ্দীন সে সময় কাশিপুর গ্রামের দিকে পালিয়ে যান।

রাজাকার দল তাদের না পেয়ে বড় ভাই আজিবর, হবিবার ও আনসারকে ধরে নিয়ে উপজেলার ঘোড়ামারা গ্রামের ব্রিজের নিচে হত্যার পর লাশ গুম করে। একই সময় নিজ গ্রামের ৫টি ও পাশের গ্রামের আরও ২৫টি বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় রাজাকারের দল। এমনকি রাইফেলের বাট দিয়ে পিটিয়ে আহত করা হয় তার আশির উদ্দীনের বৃদ্ধ পিতা দুখি মাহমুদ ও মা কামিনী খাতুনকে।

সূত্র আরও জানায়, মুক্তিযোদ্ধা আশির উদ্দীনের মৃত্যুর পর তার ভাতিজা আনোয়ার হোসেন মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নতুন করে অভিযোগ দায়ের করেন।

এদিকে বেশ কয়েক বছর আগে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন রাজাকার আবদুর রশিদ। নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।

জেলা আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতার আশ্রয়ে রশিদ ও তার ছেলে হারুন ও বজলুর রশিদও যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। শাসক দলের প্রভাব খাটিয়ে স্বল্প সময়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন তারা।

পুলিশের একটি সূত্র জানায়, গোপন স্থানে রশিদকে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অপরজন শাহেব আলীকে ঝিনাইদহ সদর থানায় রাখা হয়। রাতে বিশেষভাবে ঢাকায় নেয়া হবে তাদের।


সর্বশেষ সংবাদ