৯০% সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী দুর্নীতি করেন: সংসদে জাপার এমপি

  © সংগৃহীত

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৯০ শতাংশ দুর্নীতির দিকে বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য (এমপি) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। তিনি বলেছেন, কাস্টমসে যারা চাকরি করেন, তাদের প্রত্যেকের ঢাকা শহরে দুই-তিনটা বাড়ি আছে। বনবিভাগে যারা চাকরি করেন, তাদের দুই-তিনটা করে সোনার দোকান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যদি পদক্ষেপ নেন, তাহলে দুর্নীতি রোধ করতে পারব। না হলে, যে হারে লাগামহীনভাবে বড় বড় কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুর্নীতি করছেন, কি করব? আমরা অসহায়। অনেক সরকারি কর্মকর্তা আছেন তারাও অসহায়। কারণ, এখানে ৯০ শতাংশ লোকই ওইদিকে (দুর্নীতি), ১০-১৫ শতাংশ লোক ভালো থেকে কি করবে?

আজ শনিবার (২৯ জুন) জাতীয় সংসদের অর্থবিলের ওপর সংশোধনীর আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।

নির্বাচনের সময় হলফনামা দিতে হয় বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় আমার কি সম্পদ আছে, তা হলফনামায় দিয়ে থাকি। তারপর পাঁচ বছর পরে নির্বাচনে আবার হলফনামা দেই। সেখানে সম্পত্তি কত বাড়ল, একশ গুণ না পাঁচশ গুণ বাড়ল, তা পত্রিকায় নিউজ হয়। আমাদের আমলানামা চলে আসে।

হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, কিন্তু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা প্রথমে চাকরিতে ঢুকেন- তারা যদি হলফনামা দিতেন। তারপর পাঁচ-দশবছর হলফনামা দিতে এবং তাদের আলোচনা-সমালোচনা হত। তাহলে দুর্নীতির চাবিটা বন্ধ হত। না হলে বন্ধ হবে না। 

তিনি বলেন, সরকার অনেক প্রশংসা পেয়েছে। কিন্তু শুধু দুর্নীতি বন্ধ করতে পারলে সোনার অক্ষরে যেভাবে ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর নাম রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নামও সেভাবে লেখা থাকবে। পদক্ষেপ নিলে দুর্নীতি রোধ সম্ভব হবে। এমপি সাহেবদের যেভাবে আমলনামা আছে, প্রত্যেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আমলনামা যদি সেবাবে তৈরি করা হয়, তাহলে দুর্নীতি রোধ করা যাবে।

এমপিদের নির্বাচনী এলাকায় কোনো কার্যালয় নেই বলে উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আমার বাড়ি যে উপজেলায় সেখানে বাড়িকে অফিস হিসাবে ব্যবহার করি। কিন্তু আরেক উপজেলায় বসার জায়গাও নেই। হয় ইউএনও সাহেবের পাশে টেবিল নিয়ে বসতে হয়। এ জন্য প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় এমপিদের জন্য অফিস করে দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। 

হাফিজ উদ্দিন বলেন, নির্বাচনী এলাকায় অনেক সালিশ-বিচার করতে হয়। অনেক সমস্যার সমাধান দিতে হয়। এলজিইডিসহ বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে বসতে হয়, সেজন্য অফিস থাকলে ভালো হয়।

অর্থবিলের জনমত যাচাইয়ের আলোচনায় অংশ নিয়ে কুড়িগ্রাম-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি হামিদুল হক খন্দকার বলেন, কালোটাকা সাদা করা সরকারের দ্বৈতনীতি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্সের কথা বলে, অন্যদিকে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেবে, এটা কি সম্ভব? যারা বৈধ আয় করবে, তাদের ৩০ শতাংশ কর দিতে হবে। যারা কালোটাকা সাদা করবে, তাদের ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হবে। এটা কার স্বার্থে? এটা কোনো নীতি-নৈতিকতার মধ্যে পড়ে বলে মনে হয় না।

তিনি বলেন, একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক অর্থমন্ত্রী কালোটাকা সাদা করেছেন, যা জাতির জন্য লজ্জাজনক। এটা প্রত্যাশিত না। এই সুযোগে বেনজির-মতিউরদের মত দুর্নীতিবাজ আছে। তারা সরকারের চোখে আঙ্গুল দিয়ে পার পেয়ে যায়। এটা জাতির জন্য কলঙ্ক। কালোটাকা সাদা করতে ৩০ শতাংশ কর ও পুরো টাকা উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের প্রস্তাব করেন হামিদুল হক খন্দকার।


সর্বশেষ সংবাদ