‘আইসিইউ মানে অক্সিজেন নেওয়া’

মুনিয়া ও উপস্থাপক
মুনিয়া ও উপস্থাপক  © সংগৃহীত

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে মুনিয়া খান রোজা (২৫) নামে এক ভুয়া গাইনি চিকিৎসক গেল বছরের ডিসেম্বরে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তখন তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় (মামলা নং-৪১) প্রতারণার একটি মামলা হয়েছিল। ওই মামলায় গ্রেপ্তারের পর বিগত কয়েক মাস কারাবাসে ছিলেন তিনি। তবে সম্প্রতি ছাড়া পেয়ে ফের আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন এই ‘ভুয়া ডাক্তার’।

ভুয়া ডাক্তার মুনিয়া খান রোজা চাঁদপুর সদরের হামান কর্দ্দি গ্রামের মো. করিম খানের মেয়ে। তিনি পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডে ভাড়া বাসায় থাকেন। রোজা মূলত টিকটক সেলিব্রিটি। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তিনি ডাক্তার সেজেও বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামাদি নিয়ে ঢামেকে টিকটক ভিডিও তৈরি করতেন। টিকটকে নিজেকে চিকিৎসক হিসেবেও পরিচয় দিতেন।

কারামুক্ত হওয়ার পর মুনিয়া খান রোজা একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি দাবি করেন, তিনি ‍ভুয়া ডাক্তার না। প্রতারণার অভিযোগে কয়েক মাস আগে সাজা ভোগ করে ফিরে এসে ফের তার এমন আচরণে হতবাক অনেকে। এছাড়া ওই টকশো অনুষ্ঠানে উপস্থাপকের করা বিভিন্ন সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নের ভুলভাল উত্তর দিয়ে জন্ম দিয়েছেন নতুন বিতর্কের।

সাক্ষাৎকারে তাকে জিজ্ঞেস করা হয় ওটি মানে কী? তিনি বলেন, ওটি মানে সার্জারি করা, ওটি করা। প্রশ্নকারী আবার বলেন, ওটির একটি অর্থ আছে। এটার পুরো মানেটা কী? তিনি উত্তর দিতে পারেননি। তাকে জিজ্ঞেস করা হয় আইসিইউ মানে কী, এই প্রশ্নেরউত্তর দিতে গিয়ে বলেন, যেখানে রোগীকে আইসিইউতে মানে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়, অক্সিজেন দেওয়া হয়। তাকে আবার জিজ্ঞেস করা হয় আইসিইউ মানেটা কী, তিনি উত্তর দিতে পারেননি।

একটি রোগীর বিষয়ে কথা বলছিলেন মুনিয়া। উপস্থাপক তাকে জিজ্ঞেস করেন কী হয়েছিল তার? মুনিয়া বলেন, ব্রেন স্টোমাক। উপস্থাপক বুঝতে না পেরে আবার জিজ্ঞেস করেন ব্রেইন টিউমার? মুনিয়া বলেন, না; ব্রেইন স্টোমাক হয়েছে।

মুনিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে তিনি ডাক্তার কী না, কেন টিকটক করেন। এর উত্তরে মুনিয়া বলেন, আমি যদি ডাক্তার না হই তাহলে কী আমাকে ঢাকা মেডিকেলে এমনি এমনি পেশেন্ট দেখতে দেয়?

বেসরকারি টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নের ভুলভাল উত্তর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। তার ওই সাক্ষাৎকার এখন স্যোশাল মিডিয়া ভাইরাল।

রিয়া খন্দকার নামে একজন ব্যবহারকারী ওই ভিডিওর নিচে লিখেছেন, এটা কেমন ডাক্তার! যিনি বলতেছেন বেরেইন ইসটুমার। তারপর ওটির ফুল মিনিং কি, আইসিইউর ফুল মিনিং কি জানেন না। তারপরও ভুলভাল বলে যাচ্ছেন। তার কনফিডেন্স লেভেল দেখে আমি হতবাক।

সুমাইয়া ইসলাম অহনা নামে একজন ব্যবহারকারী মুনিয়ার বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে লিখিছেন, আমার মনে হয় এই মেয়েটা অসুস্থ। হয়তো কোন কারণে সে ডাক্তার হতে পারে নাই। তাই তার এমন মানসিক সমস্যা তৈরি হয়েছে।

অভিযুক্ত তরুণী ঢাকা মেডিকেল থেকে বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভাগিয়ে নিতেন এবং সুযোগ পেলে চিকিৎসকদের রুমে ঢুকে মোবাইলসহ বিভিন্ন মালামাল চুরি করতেন। এ ছাড়া নীলক্ষেত থেকে অ‍্যাপ্রোন, আইডি কার্ড এবং মিডফোর্ড থেকে স্টেথোস্কোপ কিনে প্রতারণায় ব্যবহার করতেন এবং নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দিতেন।

মুনিয়ার গ্রেপ্তারের সময় ঢামেক হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসারের প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) মো. উজ্জ্বল বলেছেন, ঢামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের আইসিইউর এক নার্সের মোবাইল চুরি হয়। বিষয়টি নিয়ে আমাদের আনসাররা সন্দেহভাজনদের নজরদারি করেন। এ সময় ওই নারী চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে ঘোরাফেরা করতে থাকেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকদেরও বিষয়টি সন্দেহ হয়।

কমান্ডার উজ্জ্বল বলেছেন, তাকে জিজ্ঞেসাবাদ করা হলে তিনি ঢাকা নিজেকে মেডিকেলের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক পরিচয় দেন। পরে তাকে গাইনি বিভাগে নিয়ে গেলে তাকে কেউ চিনতে পারেন না এবং তার আইডি কার্ডটিও ভুয়া প্রমাণিত হয়। পরে তাকে ঢামেক পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গেলে স্বীকার করেন, তিনি কোনো চিকিৎসক নন।


সর্বশেষ সংবাদ