ভুল আদালতে বিচার

৯ বছর পর অভিযুক্তকে শিশু আদালতে বিচারের নির্দেশ

  © সংগৃহীত

শিশু হলেও প্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে এক শিশুর বিচার চলছিল ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে। অবশেষে ওই শিশুর আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টের এডভোকেট ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষারের আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটি অধিকতর তদন্তপূর্বক শিশু অভিযুক্ত সংক্রান্তে পৃথক দোষীপত্র দাখিলের আদেশ দিয়েছেন র বিচারক।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ও ফেসবুকে বিক্রির অভিযোগে ২০১৫ সালে এক শিশুসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। মামলায় এজাহারে ওই শিশুর বয়স ১৯ বছর হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ২০১৬ সালেমামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযোগপত্র জমা দেন। সেখানেও তার বয়স ১৯ বছর উল্লেখ করা হয়। সে অনুযায়ী ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে অন্য আসামীদের সাথে তার বিচার শুরু হয়। ২০২৩ সালে ওই শিশু তার পূর্বের আইনজীবী বদল করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষারকে নিয়োগ দেন। 

ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার ওই আসামীর কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখতে পান অপরাধ সংঘটনের সময় ওই আসামী একজন শিশু ছিলেন। তিনি আরও জানতে পারেন গোয়েন্দা পুলিশ ওই আসামীকে আদালতে উপস্থাপনের আগে ১২ দিন অজ্ঞাতস্থানে রেখে তার উপর অমানসিক নির্যাতন করে। আদালতে উপস্থাপনের পর দুই দফায় রিমান্ড নিয়েও নির্যাতন করা হয়। তার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও রেকর্ড করা হয়। বারবার নির্যাতন ও রিমান্ডের ফলে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন কিছুটা। তারপক্ষে আদালতে জামিন চাওয়া হলেও তিনি জামিন পাননি। ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার আসামীর জন্ম নিবন্ধন, এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট অনুযায়ী দেখতে পান ওই শিশুর জন্ম ১৯৯৭ সালে। সে অনুযায়ী গ্রেফতারের সময় তার বয়স ছিল ১৭ বছর।

শিশু আইনের ধারানুযায়ী অপরাধ সংঘটনের সময় দরখাস্তকারী আইনের সহিত সংঘাতে জড়িত শিশুর বয়স ১৭ বছর  ১১ মাস ১৯ দিন, সেহেতু শিশু আইন -২০১৩ এর ১৭ (১) ধারানুযায়ী শিশুর বিচার শিশু আদালতেই হতে হবে। সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ.এম. জুলফিকার হায়াত ওই শিশুর সব কাগজপত্র পর্যালোচনা ও আইনজীবীর বক্তব্য পর্যালোচনা করে ওই আসামীকে শিশু অভিযুক্ত সংক্রান্তে পৃথক দোষীপত্র এবং প্রাপ্ত বয়সক আসামী সংক্রান্তে পৃথক অভিযোগপত্র দাখিলের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে ওই মামলার নথি বিজ্ঞ চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। সম্প্রতি আদালতের আদেশের নকল হাতে পেয়েছেন আইনজীবী। 

এবিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সোলায়মান তুষার বলেন, ভুল আদালতে বিচারের কারণে ওই শিশুকে অনেক খেসারত দিতে হয়েছে। একসময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধন) আইনের ৫৭ ধারা ভয়ঙ্কর ছিল। সহজে জামিন পাওয়া যেতোনা। আমার মক্কেলের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ঘটনার প্রায় ৯ বছর পর আদালতকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। আদালতে আমাদের আইনী যুক্তি ও প্রমাণ পর্যালোচনা করে আদেশ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, এখন আইন অনুযায়ী ওই শিশুর বিচার সংশ্লিষ্ট শিশু আদালতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ