কারাবন্দী বন্ধুকে স্ত্রীর প্রেমিক হত্যার গল্প শুনিয়ে ফেঁসে গেলেন হাবিব

গ্রেপ্তারকৃত আশরাফুল ইসলাম
গ্রেপ্তারকৃত আশরাফুল ইসলাম  © সংগৃহীত

নাটোরের গুরুদাসপুরে স্ত্রীকে নির্যাতনের মামলায় জেলে যাওয়ায় পর সেখানে বন্দি আরেক বন্ধুকে হত্যার ঘটনা শুনিয়ে ধরা পড়েছেন এক যুবক। মো. আল হাবিব সরকার (২৫) নামের ঐ যুবক ২ বছর আগে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে স্ত্রীর প্রেমিককে হত্যার পর মরদেহ গুমের গল্প শুনায় ওই বন্ধুকে।

গুরুদাসপুর-সিংড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া এক আসামির কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর নিহতের মা মাইনুর বেগম বাদী হয়ে একটি হত্যা ও গুমের মামলা করেন। মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও দুজনকে আসামি করা হয়েছে।

শনিবার (২ মার্চ) উপজেলার চাঁচকৈড় পুরান পাড়ার আবু তাহের খলিফা ওরফে তারা খলিফা (৫৫), তার মেয়ে তানজিলা আক্তার (২০) এবং তানজিলার মামা খামাড়নাচকৈড় এলাকার মো. আব্দুস সামাদের ছেলে মো. আশরাফুল ইসলামকে (৪৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এ ছাড়া তার স্ত্রীর দায়ের করা নারী নির্যাতন মামলায় মো. আল হাবিব সরকারের জামিন হলেও স্ত্রীর পরকীয়া মফিজুল ইসলামকে হত্যা মামলায় আবার তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

নিহত মো. মফিজুল ইসলাম গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড় খলিফাপাড়া এলাকার মো. আজাত মোল্লা ও মোছা. মাইনুর বেগম দম্পতির ছেলে। পেশায় বেকারি শ্রমিক ছিলেন।

র‍্যাব-৫ নাটোর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার সন্জয় কুমার সরকার জানান, আশরাফুলকে শনিবার সকালে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার গোলচত্বর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। দুপুরে বাড়ি থেকে তানজিলা ও তার বাবা তারা খলিফাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার তিনজনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব ও পুলিশ জানায়, মফিজুলের লাশটি হত্যার পর গুরুদাসপুরের পুরানপাড়া মাদ্রাসার সেপটিক ট্যাংকির পাশে মাটিচাপা দেওয়া হয়। সেটি শনিবারই তোলার কথা ছিল। কিন্তু সমস্যার কারণে আজ উত্তোলন করা যায়নি। রোববার সকালে তোলা হবে।

তানজিলা ও মফিজুল চাঁচকৈড় খলিফাপাড়ায় একটি বিস্কুট তৈরির কারখানায় কাজ করতেন। সেসময় তারা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়।

মামলার বরাতে র‌্যাব কর্মকর্তা সন্জয় কুমার সরকার বলেন, মফিজুলের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি একপর্যায়ে তানজিলার বাবা তারা খলিফা জানতে পারেন। তখন তিনি মোবাইল ফোনে মফিজুলকে খুনের হুমকিও দেন।

“এর জের ধরে ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তানজিলাকে দিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মফিজুলকে ডেকে আনা হয়। তানজিলাদের বাড়ি আসার পর আসামিরা মফিজুলকে আটকে ফেলে এবং তার মুখ স্কচ টেপ দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়।

“তারপর মফিজুলকে মাটিতে ফেলে আসামিরা তার বুকে শাবল দিয়ে আঘাত করে। শাবলটি বুকে ঢুকে ঘটনাস্থলেই মারা যান মফিজুল। পরে মৃতদেহ একটি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে বাড়ির পাশের মাদ্রাসার সেফটি ট্যাংকির পাশে মাটিতে পুঁতে রাখে।”

সন্জয় কুমার সরকার জানান, এর মধ্যে তানজিলা ও আল হাবিব সরকারের মধ্যে মনোমালিন্য দেখা দেয়। তাদের সংসারে অশান্তি শুরু হয়। একপর্যায়ে তানজিলা তার স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করেন।

“এই মামলায় ২০২৩ সালের নভেম্বরে পুলিশ আল হাবিব সরকারকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। কারাগারে গিয়ে আল হাবিবের সঙ্গে পরিচয় হয় খলিফাপাড়ার মো. জাকির মুন্সীর সঙ্গে এবং দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব তৈরি হয়।”

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, “কারাগারে থাকা অবস্থাতেই আল হাবিব সরকার কথাচ্ছলে জাকির মুন্সীকে স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্কের বিষয়টি জানান এবং সেই সূত্রে যে মফিজুলকে হত্যা করে লাশ গুম করা হয়েছে সেটিও বলে দেন।”

গত সপ্তাহে জাকির মুন্সী জামিনে কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে মফিজুলের মায়ের কাছে খুনের বিষয়টি জানিয়ে দেন। পরে সেটি এলাকাবাসীও জানতে পারে। এরপরই মফিজুলের মা মাইনুর বেগম মামলা করেন।


সর্বশেষ সংবাদ